উপেক্ষিত মনীষী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ







জুলাই মাসের ১০ তারিখে জন্ম নিয়ে একই মাসের ১৩ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন শিক্ষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী, গবেষক, আইনজীবী, অনুবাদক, কবি, সাহিত্যিক, লোকবিজ্ঞানী, দার্শনিক, জ্ঞানতাপস ও ভাষাসৈনিক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি ১০ জুলাই ১৮৮৫ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবদ্দশায় ইংরেজি, লাতিন, আরবি, উর্দু, ফারসি, জার্মানি, ফরাসি, হিব্রু, গ্রিক, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, সিংহলি, সিন্ধিসহ প্রায় ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। তন্মধ্যে ১৮টি ভাষাতেই অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল এবং সেই ভাষাগুলোতে তিনি অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারতেন।

নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না শহীদুল্লাহর নাম এবং নাম জানলেও জানে না কী তার অবদান। তাদের জন্যই বলছি, বাংলাভাষার গবেষক হিসেবে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর প্রধান অবদান হলো, চর্যাপদের বিষয়বস্তু এবং তার কবিদের পরিচয় তুলে ধরা, বাংলাভাষার উৎপত্তিকাল নির্ধারণ করা (শহীদুল্লাহর মতে এটি ৬০০ থেকে ৭০০ অব্দের মধ্যে), বাংলাভাষার উৎপত্তি যে গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে সেটি বলা, আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রণয়ন করা এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রণয়ন।
তবে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে তার প্রধান অবদান ভাষা আন্দোলনে দার্শনিকের ভূমিকা পালন করা। শহীদুল্লাহ বাঙালি মুসলমানকে বাঙালি হয়ে উঠতে শিখিয়েছিলেন। তিনি বাঙালি মুসলমানকে শিখিয়েছিলেন মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন ধর্মনিষ্ঠ। তিনি ইসলাম ধর্মের অনুশাসনগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলতেন। অথচ তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক । তিনি তার জীবনাচরণের মধ্য দিয়ে জাতিকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে নিজের ধর্মে নিষ্ঠাবান হয়েও অসাম্প্রদায়িক হওয়া যায়। স্মরণ করিয়ে দেই তার অমর উক্তি ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি।
ধর্মকেও তিনি যতটা বুঝতেন ততোটা অন্য অনেক ধর্ম বিষয়ক পণ্ডিতও বুঝতেন কিনা সন্দেহ। কারণ একাধারে কোরআন হাদিস ও গীতা, বেদ, বাইবেল পড়া মানুষ, আরবি, ফার্সি, হিব্রু এবং সংস্কৃত, পালি, প্রাচীন পাহলবি এবং ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান জানা মানুষ সারা বিশ্বেই বিরল। তিনি সনাতন বৈদিক শাস্ত্র ও আর্যভাষা ও সাহিত্য যেমন জানতেন তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি, ভাষা, আব্রাহামীয় ধর্মসমূহকেও জানতেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল