সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ক্রুসেড!



ক্রুসেড! শব্দটির ব্যাপ্তি ও গভীরতা সীমাহীন। এর বিষাদময় পরিণতির খবর পৃথিবীর অনেকের কাছেই অজানা। মধ্যযুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানকে বোঝানোর জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ৬৩৮ সালে ক্লারমেন্টের ঐতিহাসিক এক গ্রন্থে ‘ক্রয়েসাডি’ শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহূত হয়। এ শব্দটিই পরবর্তীতে ক্রুসেড অর্থে ব্যবহূত হতে থাকে। ১৭৫০ সাল নাগাদ ক্রুসেড শব্দটি ইংরেজি, ফরাসি ও জার্মান ভাষায় স্থান করে নেয়। ইংরেজ কবি উইলিয়াম শেনস্টোন ১৭৫৭ সালে সর্বপ্রথম অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানে শব্দটি সংযোজন করেন। সাধারণভাবে বিশ্ব ইতিহাসে ক্রুসেড বলতে পবিত্র ভূমি অর্থাৎ জেরুজালেম এবং কন্সটান্টিনোপল এর অধিকার নেয়ার জন্য ইউরোপের খ্রিস্টানদের সম্মিলিত শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ১০৯৫ - ১২৯১ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার যে যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করে সেগুলোকে বোঝায়।

১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই। ক্রুসেডারদের হাতে বায়তুল মুকাদ্দাস পদানত হয়। খ্রিস্টানরা বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করে। খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের নৃশংসতা থেকে বাঁচতে অনেকে উমার (রা.) এর মসজিদে আশ্রয় নিলো। কিন্তু ক্রুসেডারদের তরবারির কোপে সেখানে শুধু মৃত্যুর গোঙ্গানির শব্দই বের হলো। হাহাকার আর আর্তনাদ ছাড়া মসজিদ থেকে মুক্তির কোনো বার্তা শোনা গেল না। হায় উমার! হায় সোফরিনিয়াস! উমার ও সোফরিনায়াস এই জেরুজালেম নগরীকে রক্তপাতমুক্ত রাখার জন্য অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই অঙ্গীকারি আজ ভেসে গেল নিরীহ মানুষের রক্তের বন্যায়। রক্তের নদীতে ভাসতে থাকলো অসংখ্য মুসলিম ও ইহুদির লাশ। লাশের এ সারিতে ছিল বৃদ্ধ, যুবক, নর-নারী ও শিশুরা।
জেরুজালেমে নৃশংসতার একজন প্রত্যক্ষদর্শীর নাম রেমন্ড দা এজিলেস। তিনি ক্রুসেডারদের নৃশংসতার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন এভাবে-‘মসজিদের বারান্দায় মানুষের হাঁটু পরিমাণ রক্ত জমে গিয়েছিল। আর ঘোড়ার লাগাম পর্যন্ত রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।
খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা মসজিদে অনেক পরিবর্তন সাধন করে। তারা মসজিদকে গির্জায় পরিণত করে। এভাবেই মুসলিম শাসনের গৌরবময় ৪৬২ বছরের পতন ঘটে।
ইহুদিদেরকেও মুসলমানদের মতো ভাগ্যবরণ করতে হয়। কারণ তারাও মুসলমানদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সেজন্য তাদের ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়।
জেরুজালেম অবরোধকালীন সময়ে প্রবীণ উহুদিরা জীবন বাঁচাতে অতীত নীতি অনুসরণ করলো। তারা নগরের সমস্ত ইহুদিদেরকে সিনাগগে জড়ো হতে নির্দেশ দিল। ফলে ইহুদি নরনারী, শিশু-বৃদ্ধ সবাই প্রধান সিনাগগে জড়ো হলো। তারা সেখানে প্রার্থনায় মগ্ন হলো। কিন্তু এতে তাদের শেষ রক্ষা হলো না। ধর্মোন্মাদ খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা সিনাগগের চারিদিক ঘিরে ফেলে আগুন লাগিয়ে দিলো। একটি শিশুও যাতে ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে সেদিকে ক্রুসেডাররা কড়া নজর রাখলো। ফলে হাজার হাজার ইহুদি নর-নারী, শিশু ও বৃদ্ধ জীবন্ত পুড়ে মারা গেল। ক্রুসেড নামক এই অবরোধের জন্য ৯০০ (নয় শত) বছর পরে ভ্যাটিকানের পোপ মুসলিম ও ইহুদিদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...