বার্লিন চুক্তি





বার্লিনের চুক্তি (আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্বে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রেট ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ড, ইতালি, রাশিয়া এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যের মধ্যে সমঝোতার চুক্তি) ১৩ জুলাই ১৮৭৮ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
বহু আলোচনার প্রেক্ষিতে সানস্টিফানোর সন্ধি সংশোধিত করে যে নতুন সন্ধি স্বাক্ষর করে ইতিহাসে তাই বার্লিন কংগ্রেস বা বার্লিন চুক্তি নামে অভিহিত। জার্মান চ্যান্সেলর বিসমার্কের সভাপতিত্বে বার্লিনে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়।
বার্লিন কংগ্রেসের চুক্তিতে উল্লিখিত ধারাসমূহ।
(ক) মন্টিনিগ্রো, সার্বিয়া এবং রুমানিয়া তুরস্কের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে পরিগণিত হবে।
(খ) সানস্টিফানো সন্ধি দ্বারা স্বীকৃত বৃহত্তর বুলগেরিয়াকে তিন অংশে ভাগ করা হলো- ম্যাসোডোনিয়া, পূর্ব রুমানিয়া ও বুলগেরিয়া। ম্যাসিডোনিয়া তুরস্ক সুলতানের অধীনে থাকল, বুলগেরিয়ার দক্ষিণাংশ রুমানিয়া নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করল। তবে সুলতানের অধীনে একজন খ্রিস্টান গভর্নর এ নতুন রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনা করবেন বলে স্থির হলো। অবশিষ্টাংশ বুলগেরিয়া নামে পরিচিত হবে এবং তুরস্কের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র হবে।
(গ) তুর্কি সুলতান কর্তৃক রুমানিয়ার স্বাধীনতা স্বীকৃত হলো।
(ঘ) রাশিয়া পেল বেসারাবিয়া, বার্টুম, কার্স ও আর্মেনিয়ার কিছু অংশ এবং বেসারাবিয়ার ক্ষতিপূরণস্বরূপ রুমানিয়াকে দবরূজ ছেড়ে দিল।
(ঙ) ইউরোপের শান্তি বজায় রাখার জন্য বসনিয়া ও হারজেগোভিনাকে অস্ট্রিয়ার অধীনে রাখা হলো।
(চ) রাশিয়া যতদিন বাটুর্ম ও কার্স তার শাসনাধীনে রাখবে, ততদিন পযর্ন্ত সাইপ্রাস দ্বীপের শাসনভার ইংল্যান্ডের হাতে দেওয়া হলো। তুরস্ক সাইপ্রাস দ্বীপের উদ্বৃত্ত রাজস্ব পাবে।
(ছ) ভবিষ্যতে তিউনিস অধিকারের অনুমতি ফ্রান্সকে দেওয়া হলো।
বার্লিন কংগ্রেস তুরস্ক ও রাশিয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়। আর ১৮৫৬ সালের ইউরোপীয় গোষ্ঠী কর্তৃক তুরস্কের অখণ্ডতাকে মূলত অস্বীকার করা হয়। এতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রাশিয়া। এছাড়া তুর্কি সুলতান সাম্রাজ্যের প্রায় অর্ধাংশ হারায়। বিসমার্ক এ চুক্তিকে “শান্তির চুক্তি” বলে অভিহিত করলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল “ইউরোপীয় স্বার্থের চুক্তি।”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল