ভারতের ত্রাণকর্তা আলাউদ্দিন খিলজি




আলাউদ্দিন খিলজি দিল্লীর সুলতান ছিলেন ১২৯৬ থেকে ১৩১৬ সাল পর্যন্ত।তিনি ছিলেন খিলজি বংশের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক। যিনি দিল্লিতে বসে ভারতীয় উপমহাদেশে খিলজি শাসন পরিচালনা করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন ভারতীয় ইতিহাসেও একজন আলেকজেন্ডারের মতো শক্তিশালী কারো কথা উল্লেখ করা থাকুক। তাই তিনি নিজেকে ২য় আলেকজেন্ডার (সিকান্দার-এ-সানি) হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। On July 19th, his 726th Ascension day as the King of India, we Remember Sultan Allauddin Muhammad Khilji who, by defeating mongols twice, may have saved India from massive destruction and Hinduism from a near extinction.
তিনি ভারতবর্ষের এমন এক দুঃসময়ে ক্ষমতায় আসেন, যখন ভারতবর্ষের সীমান্তে শোনা যাচ্ছিলো নিষ্ঠুর মঙ্গোল সৈন্যদের অশ্বের ভীতিকর খুরের পদধ্বনি। ভারতের সীমানায় ছিল মঙ্গোলদের ধারালো তরবারির মুহুর্মুহু ঝলকানি। মঙ্গোল আক্রমণের আশংকায় দেশটি হয়ে পড়েছিল ভীতসন্ত্রস্ত এবং অস্থির। মনে রাখতে হবে, সেই সময় মঙ্গোলরা কোন সাধারণ আক্রমণকারী ছিল না। আজকে অনেকেরই হয়তো ধারণা নেই মঙ্গোলরা তখন কতটুকু নিষ্ঠুর এবং ধ্বংসাত্মক ছিল। মঙ্গোলরা অন্য দেশ জয়ের পর সে দেশের সব পুরুষদের নির্বিচারে হত্যা করতো। নারীদের করতো অপহরণ, লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ করে পুরো দেশের অতীত এবং অস্তিত্ব মাটির সাথে মিশিয়ে দিতো। মঙ্গোলরা কোন দেশ জয় করে কেবলমাত্র লুন্ঠন এবং হত্যা করেই ক্ষান্ত থাকতো না, পুরো দেশটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতো। সেখানে সভ্যতার কোন চিহ্নই আর খুঁজে পাওয়া যেত না। মঙ্গোলরা ছিল সন্ত্রাসী এক জাতি- যুদ্ধ, লুন্ঠন এবং ধ্বংসই ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। কখনও অন্য দেশ জয়ের পর সে দেশ শাসন করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না তাদের। মঙ্গোলদের আক্রমণের একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন ছিল। তারা কোন দেশ আক্রমণ করার আগে মোটা অঙ্কের অর্থ এবং নারী দাবী করে প্রথমে হুমকিপূর্ণ বার্তা পাঠাতো। দাবি মানা না হলে, আক্রমণ করে ধ্বংস করে ফেলা হতো পুরো দেশ। খিলজির শাসনকালে মঙ্গোলরা এমনই হুমকি দিলে, আলাউদ্দিন খিলজির পিতা ও ভাই মঙ্গোলদের সাথে সমঝোতা করার পক্ষে ছিল। কিন্তু আলাউদ্দিন খিলজি মঙ্গোলদের সাথে কোন আপস করতে প্রস্তুত ছিলেন না, যদিও মঙ্গোলদের দাবি পূরণ করা তখন তার জন্য ছিল অনেক সহজ। তিনি সহজ পথটি ছেড়ে কঠিন পন্থাটিই বেছে নিয়েছিলেন- মঙ্গোলদেরকে সরাসরি মোকাবেলা করা। তার জন্মভূমিকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন অত্যন্ত সাহসিকতা এবং দৃঢ়তার সাথে। তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন, ভারতবর্ষের সীমানা থেকে মঙ্গোলদের সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত করা না পর্যন্ত বিশ্রাম নিবেন না। তার সেই অঙ্গীকার তিনি রেখেছিলেন পুরোপুরি।
আলাউদ্দিন খিলজির শাসনামলে মঙ্গোলরা পরপর ছয় বার ভারতবর্ষ আক্রমণ করে এবং দু' বার ছিলো দিল্লী দখলের ব্যর্থ চেষ্টা। কিন্তু ছয় বারই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় মঙ্গোলরা। মঙ্গোল নেতা চেঙ্গিস খানের দ্বিতীয় সন্তান চাগাতাই খান ভারত আক্রমণ করে কয়েকবার। সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির নির্দেশে ১২৯৮ সালে তার ভাই জেনারেল উলুঘ খান মঙ্গোলদের পরাজিত করেন। ১২৯৯ সালে তারই আরেক জেনারেল জাফর খানের সাহসিকতায় সিন্ধু এলাকায় মঙ্গোলদের প্রচুর ক্ষতি সাধন করে তাদেরকে বিতাড়িত করেন ভারতের সীমানা থেকে। মঙ্গোলরা ১২৯৯ শতাব্দীতে দিল্লী আক্রমণ করলে, খিলজি নিজেই তাদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। ১৩০৫ সালে মঙ্গোলরা আবারো ভারতবর্ষ আক্রমণ করলে, আলাউদ্দিনের সামরিক জেনারেল মালিক নায়ক তা প্রতিহত করে ভারতবর্ষকে রক্ষা করেন মঙ্গোল ধ্বংসযজ্ঞ থেকে।
১৩০৬ সালে প্রায় এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে মঙ্গোলরা ষষ্ঠবারের মতো ভারতবর্ষ আক্রমণের জন্য ইরাবতী বা রাঘি নদীর তীরে অবস্থান নেয়। মঙ্গোলদের এই সৈন্য সমাবেশ ছিল বিশাল, ভীতিকর এবং মনে হচ্ছিলো অপ্রতিরোধ্য। ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে মঙ্গোল-ভীতি। মনোবল ভেঙে যায় বেশিরভাগ মানুষের, এমনকি খিলজির সভাসদদেরও। খিলজির তৎকালীন সভাসদরা তখন তাকে মঙ্গোলদের সাথে শান্তিচুক্তির পরামর্শ দেয়। কিন্তু আলাউদ্দিন খিলজি মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। ঐ যুদ্ধে খিলজির নেতৃত্বে তার সমর নেতা মালিক কাফুরের কাছে মঙ্গোলরা এমন নিদারুণভাবে পরাজিত হয় যে, মঙ্গোলদের মোট এক লক্ষ সৈন্যের মধ্যে মাত্র তিন-চার হাজার প্রাণ নিয়ে পালতে সক্ষম হয়। আলাউদ্দিন খিলজির কঠোরভাবে মঙ্গোল দমনে পরবর্তী দশ বছর ভারতবর্ষে আর কোন মঙ্গোল আক্রমণ হয় নি।
আলাউদ্দিন খিলজি সমগ্র ভারতবর্ষকে এক ভয়াবহ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, যা হয়তো অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হতো না। সেই সময় তিনি দৃঢ়ভাবে মঙ্গোলদের প্রতিহত না করলে, আজ হয়তো ভারতবর্ষকে দু'তিন শো বছর পেছনে পড়ে থাকতে হতো। He protected India from the hordes of Mongols and Initiated far-reaching administrative reforms such as land reforms, Price control, and Military reforms. Experts say that had Khilji failed in Stopping the Mongols, it would have caused widespread massacres and taken India at least 200 years to get back on its feet. So today we remember the "Protector of Hindustan."মঙ্গোলদের দমন করার মাধ্যমে ভারতকে তিনি একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মনে রাখতে হবে, ঐ সময়ে মঙ্গোলরা বিশ্বে ছিল অপ্রতিরোধ্য নজিরবিহীন বিশাল এক ধ্বংসকারী সামরিক শক্তি। ঐতিহাসিকদের মতে, বিশ্বে মঙ্গোলরা প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষকে হত্যা করেছিল। সে সময় অন্য যে কোন সাম্রাজ্য- সেটি রাশিয়া সাম্রাজ্য, শক্তিশালী পারস্য, অথবা বাগদাদের বিচক্ষণ খলিফা হোক- কোনভাবেই মঙ্গোলদের প্রতিরোধ করতে পারে নি। একমাত্র স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্বের অধিকারী আলাউদ্দিন খিলজিই তার সুশৃঙ্খল এবং প্রশিক্ষিত সৈন্যবাহিনী দিয়ে ছয় বার মঙ্গোলদের ভারত বিজয়ের আকাক্সক্ষা ব্যর্থ করে দেন।
অনেকে ভেবে থাকেন, আলাউদ্দিন খিলজি মঙ্গোলদের বারবার পরাজিত করেছেন, এটা এমন কি আর সফলতা। মঙ্গোলরা ভারতবর্ষ দখল করলে, এক শাসকের পরিবর্তে মঙ্গোলরা অন্য এক শাসক হিসেবে ভারত শাসন করতো। মঙ্গোলদের নিয়ে তাদের এমন ভ্রান্ত ধারণা অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। মঙ্গোলরা যদি তখন ভারতবর্ষ দখল করতে পারতো, দেশটির সকল উন্নতি, সমৃদ্ধি, আবহমানকালের ঐতিহ্য এবং সভ্যতা হতো ধ্বংস। নির্বিচারে হত্যা করা হতো প্রায় সব ভারতীয়দের। ১৯৫৮ সালে মঙ্গোলরা যখন বাগদাদ দখল করেছিল, শহরটির অধিবাসীদের রক্তে বাগদাদের নদীগুলোর পানি হয়ে গিয়েছিল রক্তিম। বাগদাদের প্রতি ইঞ্চি ভূমি চাপা পড়েছিল ধ্বংসের নিচে। মঙ্গোলরা ফেলে গিয়েছিলো শুধু অগ্নিদাহের ছাই। এর আগে, ১২৩৭ সালে মঙ্গোলদের হাতে রাশিয়ারও হয়েছিল একই করুণ পরিণতি। মঙ্গোলদের ধ্বংস ও লুন্ঠনের কারণে দেশটির অর্থনীতি হয়ে পড়েছিল পশ্চাদপদ- ইউরোপের অন্যদের তুলনায় রাশিয়া পিছিয়ে গিয়েছিলো অন্ততঃ দু’শো বছর। আজ রাশিয়ার অর্থনীতি এবং সার্বিক উন্নয়ন হতো ভিন্ন, যদি মঙ্গোলরা দেশটিকে ধ্বংস না করতো। ইউরোপের অন্যান্য দেশে শিল্প-বিপ্লব ঘটেছিল নির্বাধায়, কারণ, তাদেরকে মঙ্গোল-আক্রমণের শিকার হতে হয় নি।
ঐতিহাসিকরা একবাক্যে স্বীকার করেন যে, আলাউদ্দিন খিলজির মতো প্রতিভাধর সাহসী যোদ্ধা যদি দিল্লির সিংহাসনে না থাকতেন তাহলে ভারতবর্ষে মঙ্গোলদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারত না। সে ক্ষেত্রে মঙ্গোল আক্রমণে দিল্লির অস্তিত্ব বিলীন হতো, কোটি কোটি ভারতবাসী মারা পড়ত এবং ভারতবর্ষ চীনের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হতো। এ কারণে বিবেকবান ভারতবাসী ঐতিহাসিক দায় মেটানোর জন্য সর্বদা আলাউদ্দিন খিলজির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অন্য দিকে, আধুনিক ভারতের যে মানচিত্র তা মোটোমুটি সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজির সময়কার সাম্রাজ্যের প্রতিরূপ।
(ইনটারনেট অবলম্বনে)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ