সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মহাকাশ ও পৃথিবী



নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং দিবা-রাত্রির আবর্তনে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, এ সবকিছু আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সব পবিত্রতা আপনারই। আপনি আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচান। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯০-৯১)

সম্প্রতি মহাবিশ্বের সবচেয়ে পুরনো কিছু ছায়াপথের ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সৌরজগতের গ্রহগুলো যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে অবিরাম ঘুরতে থাকে, তেমনি ছায়াপথের নক্ষত্রগুলোও আপন আপন কক্ষপথে অবিরাম ঘূর্ণায়মান। এই ছায়াপথগুলো আবার বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কোনোটি উপবৃত্তাকার, কোনোটি কুণ্ডলাকার আবার কতগুলো সর্পিলাকার। ধারণা করা হয়, মহাবিশ্ব সৃষ্টির দুই থেকে তিন বিলিয়ন বছর পর বেশির ভাগ ছায়াপথ একই সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছিল।
২০২১ সালে নাসার নিউ হোরাইজনস স্পেস প্রোবের তথ্য ব্যবহার করে জানা যায় যে, ২০,০০০ কোটি ছায়াপথের অস্তিত্ব রয়েছে।উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের একটি পরিগণনা অনুযায়ী, মনে করা হয়েছিল পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে দুই ট্রিলিয়ন বা ততোধিক ছায়াপথ রয়েছে।
মহাবিশ্বে প্রদক্ষিণরত নাসার টেলিস্কোপ জেমস ওয়েব সম্প্রতি কিছু ছবি তুলে পাঠিয়েছে।এ পর্যন্ত মহাবিশ্বে যত টেলিস্কোপ পাঠানো হয়েছে, সেসবের মধ্যে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ সবচেয়ে শক্তিশালী।টেলিস্কোপটি তৈরি ও মহাবিশ্বে পাঠাতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার কোটি ডলার। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, ইওরোপের স্পেস এজেন্সি এবং কানাডার স্পেস এজেন্সি। এই তিন সংস্থা মিলে তিলে তিলে দিনরাতের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি করেছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। মহাশূন্যের ছবি তুলতে কুড়ি বছরের অভিযানে পাঠানো হয় এই টেলিস্কোপকে। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশ পাড়ি দেয় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। এই মুহূর্তে পৃথিবী থেকে পনেরো লক্ষ কিলোমিটার দূরে যার অবস্থান। সেখান থেকেই গ্যালাক্সি ক্লাস্টার এসএমএসিএস- জিরো সেভেন টু থ্রি-এর ছবি তুলে পাঠিয়েছে জেমস ওয়েব।
নাসা জানিয়েছে, ওয়েব টেলিস্কোপ ‘এসএমএসিএস -৭২৩’-এর যে ছবিটি তুলেছে, ছায়াপথ গুচ্ছটি সেই অবস্থায় ছিল ৪৬০ কোটি বছর আগে। মজার বিষয় হচ্ছে, বিজ্ঞানীদের হিসেবে পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪৫৪ কোটি বছর (কম-বেশি পাঁচ কোটি বছর)।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা যখন প্রথম এসব ছবি দেখেন, রীতিমত হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এসব ছবিতে যেসব ছায়াপথের দৃশ্য ধরা পড়েছে, সেখান থেকে আমাদের কাছে আলো এসে পৌঁছাতে সময় লাগে শত শত কোটি বছর।
এখন পর্যন্ত কোনো স্পেস টেলিস্কোপের তোলা মহাশূন্যের সবচেয়ে গহীন এবং সবচেয়ে ভালো মানের ইনফ্রারেড ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে একে, কয়েক হাজার ছায়াপথ উঠে এসেছে ছবিটিতে।
নাসার প্রশাসক বিল নেলসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, আকাশের বিশাল এলাকাজুড়ে প্রদক্ষিণ করে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। কিন্তু মহাবিশ্বের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশের ছবি এটি।তিনি আরো বলেন, আপনি যদি আপনার হাতের তর্জনীর ওপর একটি বালুর কণা রেখে পূর্ণ বাহুটিকে আকাশের দিকে প্রসারিত করেন, তাহলে বালুর কণাটি আকাশের যেটুকু স্থান ঢেকে রাখবে, ঠিক সেটুকু স্থানের ছবি এটি।
মহাকাশে রয়েছে ছোট-বড় গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্র।
মহাকাশ বেষ্টন করে আছে দুই ধরনের তারকা। রাতের ঝলমলে আকাশে মিটমিট করে জ¦লতে থাকা তারকাগুলোকে কোরআনের ভাষায় ‘কাওকাব’ তথা স্টার বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, আমি দুনিয়ার আকাশ অসংখ্য তারকারাজির দ্বারা সুসজ্জিত করেছি। (সুরা সাফফাত, আয়াত ৬)
এ ছাড়া মহাকাশে রয়েছে বৃহৎ আকৃতির তারকা, যেগুলো স্বয়ং বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ, উপগ্রহ ও তারকার সমষ্টি। কোরআনের ভাষায় এগুলোকে ‘বুরুজ’ তথা গ্যালাক্সি বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘কল্যাণময় তিনি, যিনি মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি স্থাপন করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র। (সুরা ফুরকান, আয়াত ৬১)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...