মোহাম্মদ আলি একজন মার্কিন পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন, সাধারণভাবে যাকে ক্রীড়ার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হেভিওয়েট হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ক্রীড়াজীবনের শুরুর দিকে আলি রিংয়ের ভেতরে ও বাইরে একজন অনুপ্রেরণাদায়ক ও বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড তাকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় ও বিবিসি তাকে শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মানিত করেছে।

১৯৬৪ সালে তিনি সৈনিক জীবনে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন পরীক্ষায় অনুত্তীর্ন হওয়ার কারণে। ১৯৬৬ সালে তিনি উত্তীর্ণ হন। তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করেন। পরের বছরের জুনে তিনি আইন লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হন। তাঁকে ১০ হাজার ডলার জরিমানা ও পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তিনি বলেন যে কোরআন যুদ্ধ সমর্থন করে না। আল্লাহ বা নবীর নির্দেশ ছাড়া তিনি যুদ্ধে যাবেন না।
“Why should they ask me to put on a uniform and go 10,000 miles from home and drop bombs and bullets on brown people in Vietnam while so-called Negro people in Louisville are treated like dogs?”
‘কেন আমাকে বলা হচ্ছে ইউনিফর্ম পরে দেশ থেকে ১০ হাজার মাইল দূরে গিয়ে ভিয়েতনামের অশ্বেতাঙ্গ মানুষদের ওপর বোমা আর বুলেট নিক্ষেপ করতে? ভিয়েতনামের মানুষের সঙ্গে আমার তো কোনও ঝগড়া নেই। কেবল শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ১০ হাজার মাইল দূরের কোনও দেশে গিয়ে মানুষের ওপর অত্যাচার করা, খুন করা, বোমা ফেলার কাজে যুক্ত হব না আমি। পৃথিবীর বুকে এইসব অবিচার বন্ধ হওয়া উচিত। আমি জানি, এই কথা বললে আমার মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে। তারপরও এ কথা আমি বলেছি এবং বারংবার বলে যাব। আমি বলবই যে, এখানেই (যুক্তরাষ্ট্রে) রয়েছেন আমাদের (মানবতার) শত্রুরা। যারা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা আদায়ের জন্য লড়াই করছে তাদেরকে (ভিয়েতনামের মানুষদের) দাসে পরিণত করার একটি মাধ্যম হয়ে আমি আমার ধর্ম, আমার মানুষ এবং আমার নিজের মর্যাদাহানি করতে পারব না।’
যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করায় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কেড়ে নেয়া হলো মোহাম্মদ আলির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের শিরোপা। শুধু তাই নয়, তাকে এমনকি জেল খাটতে হতে পারে, এমন আশংকাও তৈরি হলো।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও মোহাম্মদ আলি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। সেসময় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন, তার জন্য তিনি মোটেই অনুতপ্ত নন।
"আমি যখন ইসলামে দীক্ষা নিলাম, তখনই আমি এক হাজার ভাগ নিশ্চিত ছিলাম যে আমাকে অনেক চাপে সইতে হবে। অতীতে ধর্মপ্রাণ অনেক মানুষকে এরকম চাপ সইতে হয়েছে। যীশুখ্রীষ্টকে জেল খাটতে হয়েছে। মোজেসকে জেল খাটতে হয়েছে। নোয়া, লাক, এলাইজা মোহাম্মদ আলি, মার্টিন লুথার কিং—এরকম যারাই তাদের বিশ্বাসের জন্য দাঁড়িয়েছেন, তাদের সবাইকে এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।। কিন্তু জীবনাবসানের পর এরা সবাই কিন্তু আরও মহত্তর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।"
তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার চাইতে তিনি বরং যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে অন্য দেশে চলে যেতে চান কিনা। জবাবে তিনি বললেন, "আমি কোনদিনই দেশ ছাড়বো না। দেশ ছাড়ার জন্য আমার কাছে অনেক প্রস্তাব আছে। অনেক দেশের সরকারই আমাকে তাদের দেশের নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত, তারা আমাকে সেখানে গিয়ে থাকতে বলছে। কিন্তু আমার মানুষরা তো এখানে। দুই কোটি বিশ লাখ মানুষের মুক্তি, ন্যায়বিচার আর সমতার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামে আমি অনেক সাহায্য করতে পারি। কারণ আমার একটা ভাবমূর্তি আছে।"
ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে মোহাম্মদ আলিকে অবশ্য জেলে যেতে হয়নি। ১৯৬৭ সালে তিনি ৩ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে। ১৯৭০ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি লড়াইএ ফিরে আসতে সমর্থ হন। ১৯৭০ এর দশক জুড়ে তিনি বহু বিখ্যাত লড়াইতে জয়ী হয়েছেন।
মোহাম্মদ আলি ২০১৬ সালে পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল