হেলেন ও রবীন্দ্রনাথ
হেলেন কেলার ১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আর্থার কেলার ছিলেন সামরিক বিভাগের একজন অফিসার এবং মা কেইট অ্যাডামস। হেলেনের বয়স যখন মাত্র ১৯ মাস তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বহু চিকিৎসার পর হেলেনের জীবন রক্ষা পায়। কিন্তু তার কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। তার বয়স যখন ছয় বছর তখন বাবা-মা তাকে ওয়াশিংটনের প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী ও টেলিফোন আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে পরামর্শ গ্রহণের জন্য নিয়ে যান। বেল বোস্টনের পার্কিনস ইনস্টিটিউশনে হেলেনকে ভর্তি করে দেওয়ার জন্য বলেন। এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ ছিল অন্ধদের শিক্ষাদান। পার্কিনস ইনস্টিটিউশনের অ্যানি সুলিভ্যান ম্যানসফিল্ড নামক এক শিক্ষিকার হাতে হেলেনের জীবন আলোকিত করার হয়। এ্যানিও ছোটবেলা থেকে চোখে কম দেখতে পেতেন। কয়েক বছরেই হেলেন ইংরেজি, ল্যাটিন, গ্রিক, ফরাসি এবং জার্মান ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। পরে সে ব্রেইল টাইপ রাইটারে লিখতে শেখে। হেলেন এগারো বছর বয়সে এক বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে কথা বলার চর্চা করতে থাকে। ১০ বছর বয়সে নরওয়েতে উদ্ভাবিত এক পদ্ধতি অনুসরণ করে কথা বলা শেখেন। ১৯০৪ সালে তিনি প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ডিগ্রি অর্জনের আগেই তার আত্মজীবনী দ্যা স্টোরি অব মাই লাইফ প্রকাশিত হয়।
হেলেন ১৯১৫ সালে জর্জ কেসলারকে সঙ্গে নিয়ে 'হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন' নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে হেলেন কেলার বিভিন্ন হাসপাতালে যুদ্ধাহত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈনিকদের দেখতে যেতেন এবং শান্তি ও আশার বাণী শোনাতেন।
সমাজের বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও গণমানুষের সহায়তা অর্জনে হেলেন প্রচেষ্টা চালান। এতে তিনি ব্যাপক সফলতাও লাভ করেন। তার জীবদ্দশায় যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রেসিডেন্টের এবং আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল, মার্ক টোয়েন, চার্লি চ্যাপলিনের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের সহায়তা পান।
হেলেন কেলার ১৯৩০ সালে নিউইয়র্কে একটি সভায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অভিবাদন জানান।সাক্ষাতে রবীন্দ্রনাথ 'আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী' গানটি নিজে গেয়ে তাকে শুনিয়েছিলেন। যেহেতু হেলেন কেলার দেখতে বা শুনতে পারতেন না তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠোট স্পর্শ করে গানটি বোঝার চেষ্টা করেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন