সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইমরান খানের পতনে একজন মাওলানা



মাওলানা ফজলুর রহমান একজন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ যিনি জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের
(জেইউআই এফ) বর্তমান সভাপতি। ২০০২ সালে মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে ওঠে পাকিস্তানের সবকয়টি ইসলামি দলকে সঙ্গে নিয়ে মাওলানা ফজলুর রহমান ‘মুত্তাহিদা মজলিসে আমল’ বা এম এম এ নামে জোট গঠন করে নতুন এক শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হন। কারচুপি সত্ত্বেও পরবর্তী নির্বাচনে ৭২টি আসন লাভ করেছিল এই জোট।১৯৮৮ সাল থেকে বর্তমান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য। সাবেক মন্ত্রী ও ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন।কট্টরপন্থী হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি কট্টর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। বাম ও ডানপন্থীরাও তাঁর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছেন। জেইউআই-এফ দলের ডাকে হাজার হাজার মাদ্রাসাশিক্ষার্থী এক হতে পারে। তবে দলটি কখনোই এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এককভাবে ক্ষমতায় আসতে না পারলেও জেইউআই এফ সরকার গঠনে খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করেছে।
ইমরান খানের সঙ্গে শত্রুতা রয়েছে ফজলুর রহমানের। ইমরানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করায় তিনি ইমরানকে ‘ইহুদি’ বলেও উপহাস করেছেন। ইমরান খানও পাল্টা তাঁকে `‘মোল্লা ডিজেল’ বলে ডাকতেন। জ্বালানি লাইসেন্সের দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় ফজলুর রহমানকে এমন নামে ডাকতেন ইমরান।২০১৯ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে লাখো জনতার অংশগ্রহণে লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। লংমার্চ-পরবর্তী অভূতপূর্ব মহাসমাবেশ করে তুমুল আলোড়ন তোলেন মাওলানা ফজলুর রহমান। পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম একাংশের প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান পাকিস্তান ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে তখন থেকে বেশ আলোচিত নাম।
মাওলানা ফজলুর রহমানের স্মরণশক্তি ও দূরদর্শিতার পর্যালোচনা করতে গিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম বিবিসি তার রির্পোটে বলেছে, মাওলানা একসাথে পাঁচটি কাজ সমাধা করতে পারদর্শী। ২০০৫ সালের এশিয়ান সার্ভে রিপোর্টে মাওলানাকে এশিয়ার ৫ম ও বিশ্বের ঊনিশতম ধীমান রাজনীতিবিদ হিসেবে উল্লেখ করেছে। মাওলানাকে ডিজেল মাওলানা বলে বিদ্রুপকারী সাংবাদিক আতাউল হক কাসেমীও বলেন, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় মাওলানা ফজলুর রহমানের কোনো জুড়ি নেই। তিনি ডিপ্লোমেটিক ব্যবহারে দারাজ হাতের মালিক। আমার বিশ্বাস তিনি যদি কোনো ধর্মীয় নেতা না হতেন তাহলে গোটা পাকিস্তান তার পিছে পিছে দৌড়াতো। প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হওয়া তার জন্য কোনো কঠিন কাজ ছিল না।
মাওলানা ফজলুর রহমান কেবলই যে একজন মাওলানা, এমন না, জাতীয় রাজনীতির দূরদর্শী এক ব্যক্তিত্বরূপেও পাকিস্তানে তিনি সুপরিচিত। জাতীয় রাজনীতির যেকোনো দুর্যোগকালে ক্ষমতাচ্যুত সকল নেতাই তাঁর দ্বারস্থ হন। মত ও সিদ্ধান্তে অনেকসময় ত্রুটি হতে পারে, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা পাকিস্তানের রাজনীতিতে স্বীকৃত এবং অনন্য।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...