নজরুল ও বুলবুল
কবি কাজী নজরুল ইসলামের চার বছর বয়সী পুত্র বুলবুল বসন্ত রোগে মারা যায়। সেসময় দাফন-কাফন করতে ১৫০ টাকার মতো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কবির কাছে একটি টাকাও সে সময় ছিলোনা। এত টাকা কোথায় পাবেন। বিভিন্ন প্রকাশনায় লোক পাঠানো হল। না, টাকার তেমন ব্যবস্থা হয়নি। শুধুমাত্র ডি. এম প্রকাশনী দিয়েছিল ৩৫ টাকা। আরো অনেক টাকা বাকি। নানান জায়গায় লোক পাঠিয়ে যখন নিরাশ হন, তখন কবি নিজেই এক প্রকাশকের কাছে টাকার জন্যে যান, প্রকাশক শর্ত দেন এই মুহুর্তেই কবিতা লিখে দিতে হবে, কবি শিশু সন্তানের লাশের বেদনা বুকে চেপে লিখলেন...
"ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে
আমার গানের বুলবুলি,
করুণ চোখে চেয়ে আছে
সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি।।
ফুল ফুটিয়ে ভোর বেলাতে গান গেয়ে
নীরব হ’ল কোন নিষাদের বান খেয়ে;
বনের কোলে বিলাপ করে সন্ধ্যা–রাণী চুল খুলি’।।
কাল হ’তে আর ফুটবে না হায় লতার বুকে মঞ্জরী,
উঠছে পাতায় পাতায় কাহার করুণ নিশাস্ মর্মরি’।
গানের পাখি গেছে উড়ে, শূন্য নীড় –
কণ্ঠে আমার নাই যে আগের কথার ভীড়
আলেয়ার এ আলোতে আর আসবে না কেউ কূল ভুলি’।।"....
একদিন কলকাতার পুলিশ নজরুলের বাড়িতে নিষিদ্ধ বইয়ের সন্ধানে তল্লাশি করতে গেলো। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পুলিশ কিছু পেল না। বাড়ির জিনিসপত্র সব লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে, অথচ নজরুল কোনো বাধা দিচ্ছেন না। পুলিশরা মোটামটি অবাকই৷
এমন সময় পুলিশের নজর গেল একটা বাক্সের দিকে। পুলিশ বাক্সের দিকে এগিয়ে যেতেই কবি পাগলের মতো হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, “আর যা-ই করুন, এ বাক্সে হাত দেবেন না।” তবুও পুলিশ বাক্স খুলে ফেললো। সেখানে কবির প্রয়াত ছোট ছেলে বুলবুলের জামা, খেলনা সুন্দরভাবে সাজানো ছিলো। লজ্জিত পুলিশটি দেখলেন, নজরুলের চোখে পানি তখন টলমল করছে।
সূত্র - ইনটারনেট অবলম্বনে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন