সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোল্যান্ডে ইসলাম ও মুসলিম



পোল্যান্ড সরকারিভাবে পোল্যান্ড প্রজাতন্ত্র ইউরোপ মহাদেশের মধ্যস্থলের একটি রাষ্ট্র ও ঐতিহাসিক অঞ্চল। এর রাজধানীর নাম ওয়ার্‌শ। এর পশ্চিমে জার্মানি, দক্ষিণে চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া, পূর্বে ইউক্রেন ও বেলারুস, এবং উত্তরে বাল্টিক সাগর, লিথুয়ানিয়া, ও রাশিয়া অবস্থিত। বাল্টিক সাগরে পোল্যান্ডের সাথে ডেনমার্কের জলসীমান্ত রয়েছে। পোল্যান্ড ২০০৪ সালের ১লা মে তারিখ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।রেচ্‌পস্‌পলিতা নামটির ঐতিহাসিক ভাবে ১৬শ শতক হতে পোল্যান্ড-লিথুয়ানিয়া কমনওয়েলথের সময় হতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কমিউনিস্ট শাসনামলে (১৯৫২-১৯৮৯) দেশটির সরকারি নাম ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী পোল্যান্ড।তিন লাখ ১২ হাজার ৬৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট পোল্যান্ড ইউরোপের নবম বৃহত্তম দেশ।

স্লাভিক উপজাতিরা প্রথম দেশটিতে বসতি স্থাপন করে। দশম শতাব্দীতে পিয়াস্ট রাজবংশের শাসনামলে রাজ্য হিসেবে পোল্যান্ড সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করে। ৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাপ্টিজম মতাবলম্বীরা দেশটিতে আসে এবং এ সময়ই তাদের প্রচেষ্টায় দেশটিতে খ্রিস্টধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে।ষোড়শ শতকের শেষের দিককে পোল্যান্ডের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা চলে। এ সময়ই জাগিয়েলনীয় রাজবংশের তত্ত্বাবধানে পোল্যান্ড ইউরোপের সবচেয়ে বৃহৎ, সমৃদ্ধ ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৩৮৫ সালে পোলিশদের হাত ধরে পাশের রাজ্য লুথিয়ানায়ও খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটে। তখন পোলিশ-লিথুনিয়ান ইউনিয়ন গঠিত হয়, যা ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজ্য পোল্যান্ড-লুথিয়ানার ওপর তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে চেষ্টা করে।১৭৯১ সালের দিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও প্রুশিয়া পোল্যান্ডকে অধিকার করে নিজেদের মধ্যে পোল্যান্ড রাজ্যটি ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি আবার স্বাধীনতার স্বাদ পায়। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আবার পোল্যান্ডের ওপর আঘাত আসে।১৯২০ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত ডানজিগ একটি মুক্ত শহর হিসেবে বিরাজ করে।
পোল্যান্ডের বিভাজন নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও নাৎসি জার্মানি-র মধ্যে ২৩ অগাস্ট, ১৯৩৯ সালে একটি অহিংস সন্ধি হয় , যা মলোটভ-রিব্বেনট্রপ চুক্তি নামে পরিচিত। চুক্তির সূত্র ধরে ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে দখল করে নেয়। পোলিশরা ব্রিটিশ-ফরাসি সাহায্য চাইলে এর মধ্য দিয়ে সূত্রপাত ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। ১৭ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন পোল্যান্ডে অপ্রত্যাশিত আক্রমণ করে। ২৮ সেপ্টেম্বর নাৎসি জার্মানি দ্বারা ওয়ারশ-এর পতন হয়। দেশটি আবার পূর্ব ও পশ্চিমে ভাগ হয়ে যায়। নির্বাসিত পোলিশ সরকার প্রথমে ফ্রান্স ও পরবর্তীতে লন্ডন থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, পোল্যান্ড সোভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণাধীন এক রাজ্য কমিউনিস্ট পিপলস রিপাবলিক পোল্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। ফলে পোল্যান্ড তার বহু বছরের বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার যে সম্মিলিত ঐতিহ্য ছিল, তা থেকে বিচ্যুত হতে থাকে।১৯৮০ সালে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোতে প্রথম স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন পোলিশ নেতা লেচ ওয়ালিসা। মূলত তার নেতৃত্বে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়ে। ১৯৮৯ সালে তৃতীয় পোলিশ প্রজাতন্ত্রের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পোল্যান্ড সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করে, প্রতিষ্ঠিত হয় উদার সংসদীয় গণতন্ত্র। ১৯৯৭ সালে দেশটির নতুন সংবিধান রচিত হয়। ১৯৯৯ সালে ন্যাটোর সদস্য হয় দেশটি এবং ২০০৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করে।
মসজিদ

দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা একেবারে কম। চার কোটি জনঅধ্যুষিত পোল্যান্ডে মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ৫০ হাজার। তন্মধ্যে তাতার ও বিদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বেশি।দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাতার জনগোষ্ঠী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী। মিসর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আলজেরিয়া, ইরাক, তিউনিসিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, সোমালিয়া, চেচনিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে মুসলমানরা রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে দেশত্যাগ, উচ্চতর শিক্ষা, উন্নত জীবনের প্রত্যাশ, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রভৃতি কারণে পোল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে আসতে থাকেন। এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান এবং ইসলাম সম্পর্কে তাদের ধারণা অস্পষ্ট।২০১৮ সালে ডানপন্থী কট্টর ক্যাথলিসিজম ও সেক্যুলার লিডার ক্যাম্প পোল্যান্ডে কথিত ‘ইসলামোফোবিয়া’ ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রচেষ্টা চালায়। ২০১০ সালে রাজধানী ওয়ারশর অচোটা জেলায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে গেলে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা বিরোধিতা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতদসত্ত্বেও মুসলমানরা মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন করেন। প্রথম প্রথম মুসলিম নারীরা হিজাব পরে চলাফেরা করতে কিছুটা বিড়ম্বনার শিকার হলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে।বিগত সাত শ’ বছর ধরে মুসলমানরা পোল্যান্ডের জনগণ ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আসছেন। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সঙ্গে ইসলামের অনুসারীদের বাহ্যত কোনো বিবাদ নেই। চতুর্দশ শতাব্দীতে গ্র্যান্ড ডিউক উইহোল্ডের শাসনামলে তাতাররা পোল্যান্ডে থাকার অনুমতি পান এবং সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ডের অখণ্ডতা রক্ষার্থে মুসলমানরা জার্মানি ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। জোসেফ বেন (ইউসুফ পাশা) নামক এক জেনারেল পোলিশ সেনাবাহিনীর অধীনে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামতত্ত্ববিদ আগাটা নালবোরচিক জানান, সাতশ’ বছর আগে ইসলাম ধর্মাবলম্বী তাতার জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এশিয়া, বিশেষ করে তুরস্ক থেকে পোল্যান্ডে এসেছিলেন। তুরস্কের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পোল্যান্ডের রাজা ইওহানেস সোবিস্কিকে সাহায্য করেছিলেন যুদ্ধে পারদর্শী মুসলিম তাতাররা। রাজা তাদের প্রতি ছিলেন সহানুভূতিপ্রবণ এবং তাদের দেখভালের দিকে লক্ষ রেখেছিলেন। সেই থেকে তারা সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতাররা পোল্যান্ডের সমাজে মিশে যান। তারা নিজেদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তারা পোলিশ ভাষায় কথা বলেন। কিন্তু নিজেদের ধর্ম তারা হারাননি। তখন থেকে মুসলিম তাতাররা প্রতিবেশী ক্যাথলিকদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করছেন। ১৯৩৬ সালে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং স্কুলে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীরা আরবি ভাষা শেখারও সুযোগ পায়
পোল্যান্ডে জন্ম নেওয়া বহু মুসলমান শিক্ষা, প্রশাসনসহ বিভিন্ন বিভাগে চাকরি করছেন। ড. আলী মিসকভজিস বিয়ালিস্টক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ড. সলিম চাসভিজেউক্স ওয়ারামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। মুসলিম তাতাররা ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে পোল্যান্ডের জীবনধারার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তারা মাতৃভাষা ত্যাগ করে স্লোভাকিয়ান বাকরীতি গ্রহণ করেছেন।
এ দেশে দাওয়াতি তৎপরতা চালাতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আধ্যাত্মিক শান্তির অন্বেষায় পোল যুবক, শিল্পী ও ছাত্ররা ইসলামের দিকে ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছেন। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যার ইসলামি সমাধান প্রাপ্তির লক্ষ্যে তাতারদের রয়েছেন থোমাস মিসকিউজ নামে একজন মুফতি।
রাজধানী ওয়ারশতে মুসলমানদের রয়েছে নিজস্ব মসজিদ, কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র, হালাল খাদ্যের স্টল ও কবরস্থান। ওয়ারশ কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার দিন তিন শতাধিক মুসলমান নামাজ আদায়ের জন্য জড়ো হন। রাজধানীর পাঁচ হাজার মুসলমানের মধ্যে বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষিত। পোলিশ ভাষায় পবিত্র কোরআনের একটি অনুবাদ এবং ইমাম নববির ৪০ হাদিস নামক একটি হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা বেরিয়েছে। পোজনান এলাকায় কোনো মসজিদ না থাকলেও মুসলমানরা স্থানীয় ছাত্রাবাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকেন।
মুসলিম ইউনিয়ন ও ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম স্টুডেন্টস সোসাইটির কর্মতৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো। মুসলিম ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে কোরআন, হাদিস, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের লক্ষ্যে পোলিশ ও ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন ম্যাগাজিন বের হয় নিয়মিত। তন্মধ্যে ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিভিউ’, মাসিক ইসলামিক ম্যাগাজিন ‘আলিফ’ উল্লেখযোগ্য। মুসলিম স্টুডেন্টস সোসাইটি মুসলিম শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেছে। সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় প্রতি বছর বিভিন্ন দিবসে মাহফিল, সেমিনার, সংলাপ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ২২টি গ্রন্থ ‘আল হাদারা’ নামক একটি আরবি ত্রৈমাসিক এবং ‘হিকসা’ নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। ‘হিকমা’ এ পর্যন্ত ৪২টি সংখ্যা বেরিয়েছে। মুসলিম ছাত্রদের মাদরাসা ও স্কুলে পড়ালেখায় উদ্বুদ্ধকরণ ও ভর্তির ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া সোসাইটির অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। স্কলারদের মাধ্যমে পোলিশ ভাষায় পবিত্র কোরআনের তরজমাসহ নির্ভরযোগ্য একটি তাফসির প্রকাশ, রাজধানী ওয়ারশতে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন এবং ইসলামি পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের নেতারা সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র -ইন্টারনেট

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...