সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হাশরের ময়দানে সূর্যের অবস্থান এবং কারা উত্তাপ থেকে রক্ষা পাবে?



জ্বলন্ত গ্যাসের বিশাল এক অগ্নিগোলক আমাদের সূর্য। এর আলো এবং তাপ পেয়েই পৃথিবী হয়েছে সবুজ শ্যামল। সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস , যেটা ফিউশন এর জন্য পর্যাপ্ত। সূর্যের কেন্দ্রে উৎপাদিত এই তাপ বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে পৃথিবীতে আসে এবং এটাই প্রাণের উৎস। পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব আনুমানিক ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার। প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরের সূর্য থেকে আগত পৃথিবীর বুকে তাপমাত্রা কোথাও কম আবার কোথাও বেশি। নাসার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ভূ-পৃষ্টের গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুই যুগে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছিল যশোরে। তার আগে ১৯৯৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে রেকর্ড ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল।থার্মোমিটারের পারদ চড়তে চড়তে যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। এটা হলো দুনিয়ার তাপমাত্রা। তাহলে হাশরের ময়দানে সূর্যের অবস্থান এবং এটির তাপমাত্রা কেমন হবে?
কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা সমস্ত মখলুকের পুনরুত্থান করবেন। অতঃপর ফয়সালার জন্য জুতা-স্যান্ডেল ছাড়া, খালি শরীরে, খাৎনাবিহীন অবস্থায় হাশরের ময়দানে একত্রিত করবেন। হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘মহানবী সা. কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ দেহে ও খাতনাহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে জমায়েত করা হবে। একথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! নারী পুরুষ সকলেই কি উলঙ্গ হবে? তারা কি একে অপরের প্রতি তাকাবে? (এরূপ হলে তো খুবই লজ্জার বিষয়)। উত্তরে তিনি বললেন, হে আয়েশা! কিয়ামতের দিনটি এত কঠিন ও বিপদময় হবে যে, মানুষের মনে একে অপরের প্রতি তাকাবারও খেয়াল হবে না।’ (বুখারি-মুসলিম)
সেদিন সূর্য এত সন্নিকটে হবে যে, সত্তর হাত গভীর ঘামের (সাগর) হবে। মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী এ ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে।
কেয়ামতের দিনটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকবে। মহানবী (সা.)বলেন, ‘বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনু সমান, কারো হাঁটু সমান, কারো কোমর সমান, কারো মুখ সমান (মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪৮৩)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ أُدْنِيَتِ الشَّمْسُ مِنَ الْعِبَادِ حَتَّى تَكُونَ قِيدَ مِيلٍ أَوِ اثْنَيْنِ
‘কিয়ামত দিবসে সূর্যকে মানুষের এত নিকটে আনা হবে যে, তা মাত্র এক অথবা দুই মাইল ব্যবধানে থাকবে।’ (সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৪২১)
মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ স. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: কিয়ামত দিবসে সূর্য মানুষের খুব নিকটবর্তী হবে। এমনকি এর দুরত্ব এক মাইল পরিমাণ হবে। এ সম্পর্কে সুলাইম ইবনে আমের বলেন, আল্লাহর শপথ! মাইল বলতে এখানে কোন মাইল তিনি বুঝিয়েছেন আমি তা জানি না। জমির দূরত্ব পরিমাপের মাইল বুঝিয়েছেন, না সুরমা দানির মাইল (শলাকা) বুঝিয়েছেন? মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে থাকবে। কারো ঘাম হবে পায়ের গিরা বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে হাটু বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে কোমর বরাবর। আবার কারো ঘামের পরিমাণ হবে তার মুখ বরাবর। (সহীহ মুসলিম ২১৯৬) হযরত উকবা ইবনে আমের (রাঃ)বলেন, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে সূর্য্য যমীনের নিকটবর্তী হবে ; ফলে মানুষ ঘর্মাক্ত হতে থাকবে । কারো ঘাম গোড়ালী পর্যন্ত, কারো অর্ধহাটু , কারো উরু, কারো কোমর , কারো মুখ পর্যন্ত পৈাছবে। কারো মাথা পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে যাবে ।
হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যেদিন মানুষ রাব্বূল আলামিনের সম্মুখে হিসাবের জন্য দন্ডায়মান হবে , সেদিন অনেকেই নিজের ঘামে কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। আর এক হাদিসে এসেছে, মানুষ দন্ডায়মান অবস্থায় চল্লিশ বছর পর্যন্ত আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকবে এবং সীমাহীন কস্টের দরুণ ঘাম ঝরে ঝরে গলা পর্যন্ত পৈাছবে।
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে সাত (ধরনের) ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোনো ছায়া থাকবে না। তারা হলো— ১. ন্যয়পরায়ণ শাসক। ২. এমন যুবক, যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে। ৩. ওই ব্যক্তি যার হৃদয়টা সর্বদা লেগে থাকে মসজিদের সঙ্গে। ৪. এমন দু’ব্যক্তি, যারা স্রেফ আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে, কিংবা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ৫. এমন ব্যক্তি, যাকে কোনো সুন্দরী উচ্চবংশীয়া রমণী আহ্বান করল ব্যভিচারের প্রতি, প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। ৬. এমন ব্যক্তি, যে এতটা গোপনীয়তার সঙ্গে দান-সাদাকা করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে টের পায় না। ৭. এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু’চোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...