কুতুব মিনার বিতর্ক

 










সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের তৈরি এই সুউচ্চ মিনার চত্বরে একদা হিন্দু মন্দিরের অবস্থান ছিল কি না, তা হতে চলেছে আদালতের বিচার্য বিষয়। গত সপ্তাহে খবর রটে, কেন্দ্রীয় সরকার আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে (এএসআই) কুতুব মিনার চত্বরে নতুন করে খননের দায়িত্ব দিয়েছে।সুপ্রিম কোর্টের ওই যুক্তি মেনে কুতুব মিনার–সংলগ্ন এলাকার ধর্মীয় চরিত্র নির্ধারণে দিল্লির নিম্ন আদালত রায় দিলে হিন্দুত্ববাদীদের পালে নিশ্চিতভাবে আরও হাওয়া লাগত। কারণ, এই মহলের দাবি, মোট ২৭টি মন্দির ভেঙে সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক কুতুব মিনারসংলগ্ন স্থাপত্য গড়েছিলেন। তাদের আরও দাবি, ওই চত্বরে থাকা দেব–দেবীর মূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে পূজার অনুমতি দেওয়া হোক। এর আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র বিনোদ বানশালের দাবি ছিল কুতুব মিনারের নাম আসলে ‘বিষ্ণু স্তম্ভ’। অতএব ওই মিনারকে ‘বিষ্ণু স্তম্ভ’ ঘোষণা করা হোক।
কুতুব মিনার ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত একটি স্তম্ভ বা মিনার, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ইটনির্মিত মিনার। লাল বেলেপাথরে নিৰ্মিত এই মিনারটির উচ্চতা ৭২.৫ মিটার (২৩৮ ফুট)। মিনারটির পাদদেশের ব্যাস ১৪.৩২ মিটার (৪৭ ফুট) এবং শীৰ্ষঅংশের ব্যাস ২.৭৫ মিটার (৯ ফুট)। ত্ৰয়োদশ শতাব্দীর প্ৰথম দিকে এই মিনারের নিৰ্মাণকাৰ্য সমাপ্ত হয়। কুতুব মিনারের নামকরণের পেছনে দুটি অভিমত রয়েছে, প্রথমত এর নির্মাতা কুতুব উদ্দিন আইবেকের নামানুসারে এর নামকরণ। দ্বিতীয়ত ট্রান্সঅক্সিয়ানা হতে আগত বিখ্যাত সুফী সাধক হযরত কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকীর সম্মানার্থে এটি নির্মিত হয়। এটি কুতুব কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত।ভারতের প্রথম মুসলমান শাসক কুতুবুদ্দিন আইবেকের আদেশে কুতুব মিনারের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে, তবে মিনারের উপরের তলাগুলোর কাজ সম্পূর্ণ করেন ফিরোজ শাহ তুঘলক ১৩৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। ভারতীয়-মুসলিম স্থাপত্যকীর্তির গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে কুতুব মিনার গুরত্বপূর্ণ।এর আশে-পাশে আরও বেশ কিছু প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা এবং ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যা একত্রে কুতুব কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত। এই কমপ্লেক্সটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে তালিকাবদ্ধ হয়েছে এবং এটি দিল্লির অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন-গন্তব্য। এটি ২০০৬ সালে সর্বোচ্চ পরিদর্শিত সৌধ, পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩৮.৯৫ লাখ যা তাজমহলের চেয়েও বেশি, যেখানে তাজমহলের পর্যটন সংখ্যা ছিল ২৫.৪ লাখ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মঙ্গলবার জানায়, মামলার শুনানিতে বিচারক সাফ জানিয়ে দিলেন, কোনো পূজা ছাড়াই ৮০০ বছর ধরে টিকে আছে দেবতারা, ওইভাবেই চলতে থাকুক।
হিন্দুপক্ষের আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈন বলেছিলেন, ‘যদি কোনো দেবমূর্তি ধ্বংস করা হয় তাহলেও তা দেবত্ব এবং পবিত্রতা হারায় না। কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে মূর্তি আছে। সুপ্রিম কোর্ট বলে, যদি দেবদেবীরা টিকে থাকে, পূজা করার অধিকারও টিকে থাকে।’এও বলেন, এক্ষেত্রে পূজা করার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর জবাবে বিচারক বলেন, ‘শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পূজা করার অধিকার খর্ব করা যেতেই পারে।’
সম্প্রতি জ্ঞানবাপী মসজিদের মতোই কুতুব মিনার নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবেক আঞ্চলিক অধিকর্তা ধরমবীর শর্মা বলেন, কুতুব মিনার কুতুবউদ্দিন আইবকের বানানো নয়। সূর্যের গতিপথ নির্ণয় করতে বানিয়েছিলেন হিন্দু সম্রাট রাজা বিক্রমাদিত্য (দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত)। কুতুব মিনার চত্বরে হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তি রয়েছে বলেও দাবি উঠেছিল।
এবং কুয়াত-উল-ইসলাম মসজিদ তৈরি হয়েছিল ২৭টি ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু-জৈন মন্দিরের জিনিসপত্র দিয়ে। এ ব্যাপারে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জানায়, ১৯১৪ সাল থেকে সংরক্ষিত মনুমেন্ট কুতুব মিনার, একে এখন বদলানো যাবে না। পূজা করার অনুমতিও কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল