একজন মজলুম খলিফা
জীবদ্দশায় সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ যত অপবাদ ও প্রপাগাণ্ডার শিকার হয়েছেন সমকালীন ইতিহাসে আর কোন শাসক ততটা হননি। সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ (২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪২ – ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের ৩৪তম সুলতান।। ১৮৬১ সালে তাঁর পিতা সুলতান আবদুল মজিদ ইন্তিকাল করলে চাচা আবদুল আজীজ খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৭৬ সালে তিনি নিহত হলে তাঁর ভাই পঞ্চম মুরাদ মসনদের হাল ধরেন। ধারণা করা হয়, চাচাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ইয়াহুদী সংগঠন ‘ফ্রি মিশনে’র সাথে পঞ্চম মুরাদেরও হাত ছিল। তার ক্ষমতারোহণের পর বিষয়টি স্পষ্ট হতে থাকে। পঞ্চম মুরাদ ইহুদী লবির পরামর্শে খিলাফতকে বুনিয়াদি রাজতন্ত্রে পরিণত করেন। এতে খলীফা নামমাত্র শাসক হয়ে ওঠেন এবং নির্বাহী ক্ষমতা চলে যায় উযীর ও পাশাদের হাতে। মসনদে আরোহণের কয়েক মাসের মধ্যে ৫ম মুরাদের মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ ফুটে ওঠে। কয়েকমাস পর যখন কোনো অবস্থাতেই তাকে সুস্থ করা যাচ্ছিল না, তখন আব্দুল হামিদের ডাক আসে। ইয়াহুদীবাদী ফ্রি মিশন এবং নব্য তুর্কিদের অনেক অন্যায্য শর্ত মেনেই ১৮৭৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি খিলাফতের পদে আসীন হন। (তারিখে দাওয়াতিল উসমানীয়্যা, ইয়ালমায উসতুনা )
সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ ছিলেন উম্মাহ দরদি মুসলিম বিশ্বের খলিফা যাকে ইয়াহুদীরা বায়তুল মুকাদ্দাস হস্তান্তরের জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থ দিতে চেয়েছিল কিন্তু তিনি মুসলিম বিশ্বের একচুল মাটি ছাড়তেও রাজি হননি।সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়নের চেষ্টা চালান। কিন্তু পশ্চিমা দেশ ও ইয়াহুদী লবিগুলো তাকে এ মহৎ কাজটিতে সফল হতে দেয়নি। ভারত ও বিশ্বের নানা প্রান্তে গড়ে উঠা সম্রাজ্যবাদের তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী। তিনি রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখান করে মুসলিম জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। কোথাও মুসলিম আগ্রাসন, রাসূল (সা.) এর অপমান হয় এমন কিছু দেখলে গর্জে উঠতেন। বিশেষত, ব্রিটিশ-ফরাসি উপনিবেশবাদের জন্য তিনি ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক।
মুহাম্মদ আলী সাল্লাবি বলেন, খলীফা তাঁর পাশাদের এক বৈঠকে বলেছিলেন, যখন তোমরা দেখবে তোমাদের শত্রুরা তোমার কোনো কাজের প্রশংসা করছে, তখন বুঝবে তোমার এই কাজের দ্বারা শত্রুর স্বার্থরক্ষা হয়েছে। আর যখন তোমার কোনো কাজে শত্রু নিন্দা করবে, তখন বুঝবে মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণকর কাজে শত্রুর শরীরে আগুন জ্বলছে। (অটোমান অ্যাম্পায়ার)
সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে শত্রুদের আপবাদ ও মিথ্যাচারের যে তাণ্ডব, তা থেকেই বুঝতে পারি, তার পদক্ষেপগুলোর ফলাফলের ব্যাপারে ‘আপনজনেরা’ না বুঝলেও শত্রুরা পূর্ণই সচেতন ছিল। প্রখ্যাত ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী আর্লন্ড টয়েনবি লিখেন,“ সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের ইসলামি রাজনীতির উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের মুসলমানদের এক পতাকার নিচে একত্রিত করা। নিঃসন্দেহে যা ছিল মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের ঐপনিবেশিক শক্তিগুলোর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক পাল্টা শক্তিশালী প্রতিরোধী পদক্ষেপ।” তাকে নিয়ে ইউরোপিয়রা এত বেশি পরিমাণে লিখেছে যে, সমকালীন ইতিহাসে তো বটেই, সুদীর্ঘ সাড়ে চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে অন্য কোন মুসলিম শাসককে নিয়ে তারা ততটা লেখেনি। যার গুটিকয়েকটি ছাড়া সবগুলোই অপবাদ মিথ্যাচার ও প্রপাগাণ্ডায় পূর্ণ।
১৯০১ সালে মিজ্ররারো কারো নামে বিশ্ববিখ্যাত এক ইয়াহুদী ব্যাংকার সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের কাছে আসে। সে অটোমান খিলাফতের সমস্ত ঋণ পরিশোধ, অটোমান খিলাফতের জন্য বিনা সুদে ৩ কোটি ৫০ লাখ লিরা ঋণ এবং অটোমান সেনাবাহিনীর জন্য একটি অত্যাধুনিক নৌঘাটি তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এর বিনিময়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে নির্বিঘ্নে ইয়াহুদীদের প্রবেশ, অবস্থানের সুযোগ এবং জেরুজালেমের কাছে একটি ছোট্ট ইয়াহুদী বসতি স্থাপনের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে। খলীফা সে ব্যবসায়ীকে বলেন, ‘‘যে ভূমি আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) জয় করেছেন আমি সে ভূমি তোমাদের বসবাসের জন্য খুলে দেব, এটা ভাবার দুঃসাহস করলে কীভাবে! আমি শাহাদাত চাই, মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে মরতে চাই না।’’
এ ঘটনার পর ইয়াহুদীরা বুঝে যায়, খলীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদ ক্ষমতায় থাকতে তারা আরবে কোনো রাষ্ট্র গঠন করতে পারবে না। তৎকালীন ইয়াহুদী প্রধান ইসরাঈল রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা থিওডোর হার্জেল খলীফার সাথে দেখা করতে এলে তিনি তাকে সাক্ষাৎ প্রদানে রাজি হননি। পরবর্তীতে হার্জেল ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের মাধ্যমে সারা বছর ইহুদীরা বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রার্থনা করার অনুমতি চায়। (অটোমান খিলাফতের সময় ইয়াহুদীরা তিন ঘন্টা অবস্থানের শর্তে প্রতি বছর মাত্র একমাসের জন্য জেরুজালেমে প্রবেশ করতে পারত।) খলীফা হার্জেলের এই প্রস্তাবও নাকচ করে দেন। ফিরতি চিঠিতে তিনি লেখেন, তারা যেন এই পরিকল্পনা নিয়ে আর অগ্রসর না হয়। তাদেরকে জেরুজালেমের এক মুঠো মাটিও দেওয়া হবে না, যেহেতু এটার মালিক তিনি নন। এটা মুসলিমদের রক্তে কেনা ভূমি। (তারিখে দাওয়াতিল উসমানীয়্যা, ইয়ালমায উসতুনা)
ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব যখন সুলতান প্রত্যাখ্যান করেন, তখন ইতালি তার হয়ে সুলতানের কাছে এই বার্তা পাঠায়,“ এই বিরোধিতার মূল্য ক্ষমতা ও জান দিয়ে তোমাকে দিতে হবে।” দিন যতই যাচ্ছে ততই এই সত্য দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই মহান সুলতান আরব ও ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে কতটা সংবেদনশীন ছিলেন। মুসলমানদের আবার পূর্বের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে দেখার ব্যাপারে কতটা ব্যাকুল ছিলেন। কতটা গভীর দূরদৃষ্টি ও কুটনৈতিক প্রজ্ঞায় তিনি শত্রুর প্রতিটি চক্রান্তের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
এদিকে নব্য তুর্কিদের আন্দোলন চরমে উঠতে থাকে।
সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ উসমানীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রচুর সংস্কার নিয়ে আসেন। তিনি মনে করতেন তুর্কিদের তথা উসমানিয়দের ইউরোপ থেকে উচ্চশিক্ষিত হয়ে তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন থেকে লাভবান হওয়া দরকার। সে লক্ষ্যেই তিনি মেধাবী তুর্কিদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে পাঠান। এছাড়াও সরকারের অনেক বড় বড় আমলা এবং কূটনীতিবিদদের আরও বেশি ট্রেনিং নিতে ইউরোপ পাঠানো শুরু করেন।কিন্তু ওই শিক্ষার্থী এবং কূটনীতিবিদের একটা অংশ তখন অটোম্যান সম্রাজ্যকে আধুনিকীকরণ, ওসমানীয়দের অধীনে বসবাসকারী বিদেশী, সংখ্যালঘু এবং বিধর্মীদের আরও বেশি সুযোগ সুবিধা দেয়া এবং গণতন্ত্র নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোপন একটা সংগঠন তৈরি করেন। এদের আন্দোলন নব্য তুর্কি আন্দোলন নামে পরিচিত। Young Turks was a political reform movement in the early 20th century that favored the replacement of the Ottoman Empire's absolute monarchy with a constitutional government. They led a rebellion against the absolute rule of Sultan Abdulhamid II in the 1908 Young Turk Revolution.এই সংগঠনটির মূল নেতাদের মধ্যে ছিলেন অনেক পরিচিত মুখ। যেমন মোস্তফা কামাল পাশা, আনোয়ার পাশা, তালাত পাশা, ইসমেত ইনোনু, জালাল বায়ার এবং কাযিম কারাবেকিরসহ আরও অনেকে। এছাড়াও তুরস্কের জাতীয় কবি মেহমেত আকিফ এরসোয়ও ছিলেন তাদের মধ্যে। যিনি লিখেছেন বর্তমান তুরস্কের জাতীয় সঙ্গীত। আধুনিক তুরস্কে ইসলামি পুনর্জাগরনের পথিকৃৎ হিসেবে যাকে দেখা হয় সেই বদিউজ্জামান সাইদ নুরসিও ছিলেন নব্য তুর্কিদের পক্ষে। আরও ছিলেন আধুনিক তুরস্কের বিখ্যাত লেখক, শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী জিয়া গোকআল্প।
সুলতান দ্বিতীয় আব্দুুল হামিদ সবসময় এই আন্দোলনের গতি রোধে সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু তারা দিনদিন তারা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে।অপরদিকে ১৯০৬ সালে আনোয়ার পাশার নেতৃত্বে স্যালোনিকায় কমিটি আব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস বা ঐক্য ও উন্নয়ন সংঘ। তার প্রধান সহযোগী ছিলেন তালাত পাশা ও জামাল পাশা। নব্য তুর্কিরা এই কমিটির সঙ্গে মিলে কাজ করতে থাকে। ভিতরে ভিতরে সেনাবাহিনীর বিরাট একটি অংশকেও তারা নিজেদের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়। ১৯০৮ সালে বিভিন্ন শহরে শাসনতান্ত্রিক সংশোধনসহ তাদের বিভিন্ন দাবির পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চলতে থাকে। সেনাবাহিনীতে তাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশকারী অংশ রাজধানীর উদ্দেশ্যে মার্চ শুরু করে। বাধ্য হয়ে সুলতান তাদের দাবি মত সংবিধান ঘোষণা করেন। শুরু হয় নব্য তুর্কিদের শাসন। কিন্তু তখনও তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে খিলাফতের প্রধান। তার এই অবস্থানটাই ফিলিস্তিনে ইহুদি পূণর্বাসনের জন্য বড় বাধা ছিল। এদিকে নব্য তুর্কিদের শাসনে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয় । জনমনে অসন্তোষ বাড়তে থাকে।১৯০৯ সালে সুলতানের অনুগত সৈন্যরা পুনরায় বিপ্লব শুরু করে। জয়নবাদীদের দুর্দান্ত তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয় এবং খলীফাকে ক্ষমতাচ্যুত করে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
তাঁর ভাই পঞ্চম মুহাম্মদ নামমাত্র সুলতান হন। সেই রাতেই সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদকে স্যালোনিকায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে এক ইহুদির বাড়িতে কড়া নজরবন্দির মধ্যে রাখা হয়। এরপর তাকে ইস্তাবুলে এনে বেইলেরবিক প্রাসাদে রাখা হয়।
আব্দুল হামিদ নির্বাসিত অবস্থায় মুসলিম উম্মাহর জন্য আকুল হয়ে কাঁদতেন। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য তিনি কারও সাথে দেখা করতে পারতেন না। তার সহকারী হিসামিদ্দীন বলেন, খলীফা খিলাফতে আরোহণের পর থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রায়শই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতেন, ‘হয় খিলাফত, নয় শাহাদাত।’ গৃহবন্দি অবস্থায় ১৯১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি বেইলেরবিক প্রাসাদে ইন্তিকাল করেন। তিনিই ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের সর্বশেষ প্রকৃত খলীফা।
আব্দুল হামিদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর উসমানীয় সৈন্য এবং সালতানাতের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক দ্বিধা বিভক্তি দেখা দেয়। কিন্তু তখন গ্রীস, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া এবং মন্টেনিগ্রো অটোম্যানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। বলকান যুদ্ধ নামে পরিচিত এই যুদ্ধ চলে ৮ই অক্টোবর ১৯১২ থেকে ৩০শে মে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত। এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার অটোম্যান সৈন্য নিহত হয় এবং বলকান অঞ্চলের প্রায় সবটুকুই ওসমানিয়দের হাতছাড়া হয়ে যায়। একদিকে সুলতানের পদচ্যুতি ও গৃহবন্দি,মৃত্যুবরণ, অন্যদিকে বিশাল এক অঞ্চল হাতছাড়া হওয়া এবং বিপুল পরিমাণে সৈন্যের মৃত্যু উসমানীয়দেরকে আর্থিক এবং মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়।
জীবদ্দশায় তিনি যত অপবাদ ও প্রপাগাণ্ডার শিকার হয়েছেন সমকালীন ইতিহাসে আর কোন শাসক ততটা হয়নি। তাঁর মৃত্যুর পর অনেকেরই চোখ খুলেছিল। তাদেরই একজন আনোয়ার পাশা। খেলাফতে উসমানিয়ার যুদ্ধমন্ত্রীও নব্য তুর্কিদের অন্যতম প্রধান নেতা ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার একক জেদ ও হঠকারিতার ফলেই ওসমানীয়রা জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করে। ফলে খিলফতের পতন ত্বরান্বিত হয়। সেই আনোয়ার পাশা পরবর্তীতে তিনি বলেন, “ জামাল আমাদের আসল মুসিবতটা কি জান?…আমরা বিপ্লব সংঘটিত করেছি। কিন্তু নিজেদের অজান্তে কখন জায়োনিস্টদের ক্রিড়নকে পরিণত হয়েছি টেরই পাইনি। আসলে আমরা ছিলাম নির্বোধ।”
তেমনি আরেকজন ছিল কবি রেজা তাওফিক। যে নব্য তুর্কিদের তাত্ত্বিক ও দার্শনিক ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পারে ও সুলতানকে উদ্দেশ্য করে লিখে,“ হে মহান সুলতান, ইতিহাস যখন আপনাকে স্মরণ করবে সত্য আপনার পক্ষেই থাকবে/ আমরা নির্লজ্জভাবে আপনার উপর অপবাদ চাপিয়েছি/ অথচ আপনি ছিলেন আমাদের যুগের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ/ আমরা বলতাম সুলতান জালেম, সুলতান পাগল, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অপরিহার্য/ শয়তান যা যা বলেছিল আমরা সব বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম/ আমরা ঘুমন্ত ফেতনাগুলোকে জাগিয়ে তুলতাম/ কিন্তু হে আমার মুনিব, আপনি পাগল ছিলেন না/ পাগল ছিলাম আমরা কিন্তু আমরা তা বুঝতেও পারিনি/ না শুধু পাগলই নই; বরং আমরা মানুষ্য চরিত্রও হারিয়ে ফেলেছিলাম/ আমরা আপনার উপর নির্লজ্জভাবে অপবাদ চাপিয়েছি।”
তুর্কি সেনাবাহিনীর কর্ণেল হুসামুদ্দিন আর্তুর্ক বলেন,“ জায়নিস্টদের বিরুদ্ধে সুলতান আব্দুল হামিদের পদক্ষেপের অর্থই ছিল নিজ ক্ষমতা ও সিংহাসন হারানো।” উল্লেখ্য বিশ্ব জায়োনিজমের প্রাণপুরুষ হার্টজেলের দেয়া ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জাতীয় নিবাসের সুযোগদানের বিনিময়ে খিলাফতের সমুদয় ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব যখন সুলতান প্রত্যাখ্যান করেন, তখন ইতালি তার হয়ে সুলতানের কাছে এই বার্তা পাঠায়,“ এই বিরোধিতার মূল্য ক্ষমতা ও জান দিয়ে তোমাকে দিতে হবে।” দিন যতই যাচ্ছে ততই এই সত্য দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই মহান সুলতান আরব ও ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে কতটা সংবেদনশীন ছিলেন। মুসলমানদের আবার পূর্বের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে দেখার ব্যাপারে কতটা ব্যাকুল ছিলেন। কতটা গভীর দূরদৃষ্টি ও কুটনৈতিক প্রজ্ঞায় তিনি শত্রুর প্রতিটি চক্রান্তের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন