কুরআনের সুরের জাদুকর



 

আব্দুল বাসিত মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ,যিনি কারি আব্দুল বাসেত নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন মিশরীয় কারি। কুরআনের সুরের জাদুকর। কুরআনের সুমধুর তেলাওয়াতের কারণে বিশ্ববিখ্যাত কারি হিসেবেই স্বীকৃতি লাভ করেন।কারি আব্দুল বাসিত ১৯২৭ সালে মিশরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার বংশের প্রথম কারি। তার দাদা ছিলেন ধর্মীয় শিক্ষক। আব্দুল বাসিত ছোটবেলা থেকে কুরআন তেলাওয়াতকে ভালো বাসতেন। তিনি ভালোবাসতেন কারিদের মত কোরআন তেলাওয়াত করতে। এরি ধারাবাহিকতায় তিনি মাত্র দশ বছর বয়সেই কুরআন শরীফ মুুখস্ত করেন । কারি আব্দুল বাসিত কে মাত্র ১৪ বছর বয়সে মহল্লার মসজিদে তারাবি নামাজ পড়ানোর সুযোগ পান।
তিনি ১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিকে তিনটি বিশ্ব কেরা'আত প্রতিযোগিতা জিতেছিলেন। কারি বাসিত ছিলেন প্রথম হাফেজ, যিনি তার কুরআন পাঠ্যক্রমের বাণিজ্যিক রেকর্ডিং করেন, এবং তিনি ছিলেন মিশরের কারি পরিষদের প্রথম সভাপতি।
কারি আব্দুল বাসিতের সুললিত কন্ঠের কুরআন তেলাওয়াত যে কাউকে করত মোহমুগ্ধ ও মোহাচ্ছন্ন। তার সুললিত কন্ঠের কুরআন তেলাওয়াত ও সুরের মূর্ছনায় আনন্দ লাভ করেছেন মসলিম,অমুসলিম সকলেই। অনেক এ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তার সুললিত কন্ঠের কুরআন তেলাওয়াত শুনে। তিনি অন্যান্য কারিদের মত হতে চেয়েছিলেন। তার সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় কারি ছিলেন কারি মোহাম্মদ রিফাত। তখন কারি মোহাম্মদ রিফাত এর তেলাওয়াত প্রচার করা হত রেডিওতে ঐ সময়ে কারি আব্দুল বাসিতের এলাকায় কোন রেডিও ছিল না। নিজের পছন্দের কারির তিলাওয়াত শুনতে তিন কিলোমিটার পথ হেটে এক মেয়রের বাড়িতে যেতেন কারি আব্দুল বাসিত। এর থেকে কাছে আর কোথায় রেডিওর ব্যবস্থা ছিল না। একটা জিনিসের প্রতি কতটা ভালোবাসা আর একাগ্রতা থাকলে একজন মানুষ শুধুমাত্র রেডিও শুনতে তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দিতে পারে। পরবর্তী সময়ে তিনি হয়ে উঠেন পৃথিবীর বিখ্যাত কারিদের মধ্যে অন্যতম। মিশরের প্রেসিডেন্টের সাথে একবার রাশিয়া সফরকালে আব্দুল বাসিত কুরআন তেলাওয়াত করেন। তার তেলাওয়াত শুনে রাশিয়ার অমুসলিম ডেলিগেটররা অর্থ না বুঝলেও সুরের কাঁপনে, সুরের শক্তির কাছে নিজেদের অশ্রু বিসর্জন দেয়।
কারী বাসিত একদিন এক মাহফিলে কুরআন তেলাওয়াতের জন্য দাওয়াত পেয়েছিলেন। সেখানে তাঁর জন্য সময় বরাবদ্দ ছিল মাত্র ১০ মিনিট। তিনি যখন তেলাওয়াত শুধু করলেন তখন মাহফিলের কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেলো। তার সুললিত কন্ঠের তেলাওয়াত শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকে অনুরোধ করলো আরো কিছুক্ষন তেলাওয়াত করতে। তার সুললিত কন্ঠে ১০ মিনিটের স্থলে ১:৩০ মিনিট তেলাওয়াত করলেন। এত মনোমুগ্ধকর কন্ঠে তেলাওয়াত শুনে সময়জ্ঞান ভূলে সবাই শুধু শুনতেই থাকলো।
কারি আব্দুল বাসিত সারাজীবন তাঁর তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিমোহিত করেছেন বিশ্বের মানুষকে। তিনি মনকে প্রশান্ত করেছেন, আবেগের অশ্রু এনেছেন, মহান আল্লাহর বাণী তাঁর সুললিত কন্ঠে মানুষের অন্তর দুর্গে আঘাত করেছে। অবশেষে এই সুললিত কন্ঠের অধিকারী কারি আব্দুল বাসিত ৩০ নভেম্বর ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
প্রসিদ্ধ এই কারির মনোরম ও সুললিত কণ্ঠস্বর, প্রতিভাধর, তেলাওয়াতের সময় দীর্ঘ শ্বাস ও মনোযোগ সহকারে তেলাওয়াত এবং প্রশান্তির কারণে শ্রোতাদের অন্তরে সর্বক্ষণ জীবিত রয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল