সালাউদ্দীন আইয়ুবী কেন আলেমদের হত্যা করেছিলেন?
৬৪৮ সালে আমিরুল মুমিনিন হজরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে মুসলমানরা ফিলিস্তিন জয় করেন। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টানরা তা পুনর্দখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে সিপাহশালার সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী আবার জেরুজালেম শহর জয় করেন।সালাউদ্দিন আইয়ুবী বাইতুল মুকাদ্দাস জয় করার পরে সবাই যখন বিজয় উৎসব পালনে ব্যাস্ত, তখন সালাউদ্দিন আইয়ুবী গভীর চিন্তায় নিমগ্ন।তার চিন্তার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বললেন যে, বাইতুল মুকাদ্দাস জয় হয়েছে কিন্তু এখনও এমন শত্রু আমাদের মাঝে রয়ে গেছে যাদেরকে খুঁজে বের করতে না পারলে বাইতুল মুকাদ্দাস আমরা বেশিদিন আমাদের কাছে রাখতে পারবোনা।
তার কথার প্রয়োজনীয়তা কেউ অনুভব করলো না। সালাউদ্দীন আইয়ুবী তার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সেনাদের নিয়ে খুবই গোপনে নতুন একটি গোয়েন্দা বিভাগ গঠন করলেন। যাদেরকে আটককৃত ইহুদীদের গোয়েন্দা বিভাগের সেনাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে ট্রেনিং দিলেন।
ফিলিস্তিনে এক ইমামের প্রশংসায় ভরপুর। ইসলামী স্কলার, শায়েখ এবং অত্যন্ত আমলদার ও পরহেজগার হিসেবে তার সুখ্যাতি পুরো ফিলিস্তিন জুড়ে। একদিন তিনি তাফসীরের আলোচনা করছিলেন তার মসজিদে। এ সময় দুইজন অপরিচিত আগন্তুক আসলো। তারাও খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে তার তাফসীর আলোচনা শুনলো।
আলোচনা শেষে তারা ইমামের সামনে গিয়ে প্রশ্ন করলো, সূর্য কখন উঠে? ইমাম জবাব দিল, যখন বৃষ্টি থেমে যায়। অপরিত আগন্তুক আবার প্রশ্ন করলো যে, বৃষ্টি কোন দিক থেকে আসে? ইমাম উত্তর দিল, ঝড়ো হাওয়ার দিক থেকে। এভাবে আরো কয়েকটি প্রশ্ন এবং তার উত্তর।
উপস্থিত মুসল্লিরা এগুলো বুঝলো না। তারা চলে যাওয়ার পর ইমাম সাহেব আগন্তুকদের নিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করলেন। ঘরে গিয়ে ইমাম তাদের সাথে তার নিজের পরিচয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। ইমামের স্ত্রী আগন্তুকদের মদ পরিবেশন করতে দিলেন।
আগন্তুকরা ইমামের সাথে বিস্তারিত কথা বলা শুরু করলো। ইমাম কবে থেকে এখানে, মানুষের মধ্যে কি কি ফিৎনা এবং ফেরকা ছড়িয়েছে, মানুষের ঈমানের মধ্যে চিড় ধরাতে কতটুকু সক্ষম হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে কথা হতে লাগলো।
ইমামও অত্যন্ত আগ্রহের সাথে কিভাবে মানুষের মাঝে ফিৎনা ও ফেরকা তৈরী করেছে, কিভাবে মাসআলাগত বিরোধ লাগাচ্ছে, কিভাবে এর মাঝেও ইহুদি পন্ডিতের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছে, কিভাবে মানুষকে জিহাদ থেকে বিমুখ রাখছে, কিভাবে ইহুদিদের ক্ষমতার ভয় মুসলিমদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে সব বলতে লাগলো।
মোটামুটি প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার পরে আগন্তুকরা তাদের মাথার পাগড়ি খুললো এবং উপরের জামা খুললো। এটা দেখে ইমাম এবার ভয়ে পালাতে চাইলো কারণ এই আগন্তুকরা ছিল হযরত সালাউদ্দীন আইয়ুবী রহ. এর সেই গোয়েন্দা বিভাগের সেনা। তারা তাকে ধরে নিয়ে গেল এবং তাকে হত্যা করলো।
এভাবে হযরত সালাউদ্দীন আইয়ুবী ৩ হাজার মুসলিম নামধারী আলেম হত্যা করেছিল। যারা মূলত ইহুদী কিন্তু ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মধ্যে ফিৎনা ছড়ানোই ছিল তাদের মূল কাজ।
যদি আইয়ুবীর সেই সময় ৩ হাজার মুসলিম নামধারী আলেম থাকতে পারে, তাহলে বর্তমানে কত হাজার রয়েছে তা একটু অনুমান করুন। আমাদের দেশেও এমন কিছু আলেমকে আমরা দেখতে পাই, যারা ইসরাঈলের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে না, মানববন্ধন না করে ঘরে বসে গাজাবাসীর জন্য দোয়া করতে বলে, ঈসরাইলের ব্যাপারে একেবারেই কোন কথা যাদের মুখ থেকে বের হয় না। এমন আলেম আমাদের দেশেও আনাচে কানাচে রয়েছে। যারা বিভিন্ন ফেতনা ফেরকা তৈরি করে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিনষ্টে তৎপর। যারা গোপনে ইহুদিদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন