হিজরি সনের হিসাব রাখা ফরজে কেফায়া


ইসলামি শরিয়তে হিজরি সনের হিসাব রাখা ফরজে কেফায়া ও প্রিয় নবি (সা) এবং সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহ। তাই মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেকেরই উচিত, হিজরি সনের হিসাব রাখা।তারিখ পদ্ধতির গুরুত্ব আছে বলেই দুনিয়া সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মাস-বছরের হিসাব সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ ঘোষনা দেন, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর (কাছে) গণনায় মাসের সংখ্যা বারটি; যা আল্লাহর কিতাব (লাওহে মাহফুজ) অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যেদিন আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস (রজব, জিলকদ,জিলহজ ও মহররম) মর্যাদাপূর্ণ। এটাই দীনের সহজ-সরল (দাবী)। সুরা তাওবাহ আয়াত - ৩৬)
ইসলামি শরিয়তের অনেক বিধানাবলী পালন হিজরি সন ও চন্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল; তাই গুরুত্বপূর্ণ এসব ইবাদত-বন্দেগির জন্য হিজরি সনের আলোকে চন্দ্র মাসের হিসাব রাখা ফরজে কেফায়া। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী হিজরি সনের হিসাব রাখা সুন্নাতের অনুসরণ এবং অনুকরণও বটে। রাসুলুল্লাহ (সা) এর নির্দেশনাও এমনই।
এ কারণেই মুমিন মুসলমানের জন্য হিজরি সনের গুরুত্ব অনেক বেশি। হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের অনেক ইবাদত-আমলের সংশ্লিষ্ট রয়েছে। যা হিসাব না রাখলে ঐ ইবাদতগুলো যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। এসবের অন্যতম হলো-
১. রমজান মাসব্যাপী ফরজ রোজা পালন।
২. ঈদের তারিখ নির্ধারণ।
৩. হজের তারিখ নির্ধারণ ও হজ পালন।
৪. তাকবিরে তাশরিকের দিন নির্ধারণ।
৫. কুরবানির দিন নির্ধারণ।
৬. জাকাত প্রদানে বছর গণনা বা হিসাব।
এ ছাড়াও প্র্যত্যেক আরবি মাসেই রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত ও নফল ইবাদত। যা হিজরি সনের মাসের হিসাবের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এসব ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল ইবাদত-বন্দেগি অন্যান্য বছরের হিসাব অনুযায়ী পালন করা সম্ভব নয়।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হিজরি সনের হিসাব যথাযথভারে রাখা জরুরি। যেন সবার জন্য ইসলামের সব গুরুত্বপূর্ণ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল ইবাদত-আমলগুলো যথা সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা যায়।
আল্লাহর দৃষ্টিতে শরিয়তের আহকামের ক্ষেত্রে চন্দ্র মাসই নির্ভরযোগ্য। চন্দ্র মাসের হিসাব মতেই রোজা, হজ ও জাকাত প্রভৃতি আদায় করতে হয়। তবে কুরআন মজিদ চন্দ্রকে যেমন, তেমনি সূর্যকেও সাল তারিখ ঠিক করার মানদণ্ডরূপে অভিহিত করেছেন। সুতরাং চন্দ্র ও সূর্য উভয়টির মাধ্যমেই সাল-তারিখ নির্দিষ্ট করা জায়েজ। তবে চন্দ্রের হিসাব আল্লাহর নিকট অধিকতর পছন্দনীয়। তাই শরিয়তের বিধি-বিধানকে চন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রেখেছেন। এজন্য চন্দ্র বছরের হিসাব সংরক্ষণ করা ফরজে কেফায়া। সকল উম্মত এ ভুলে গেলে সবাই গোনাহগার হিসাবে গণ্য হবে। চাঁদের হিসাব ঠিক রেখে অন্যান্য সূত্রে হিসাব ব্যবহার করা জায়েজ আছে।
ফরজে কিফায়া হচ্ছে এমন ফরজ, যা প্রথমত ফরজে আইনের মতো সকলের ওপরই ফরজ হয়, তবে কিছু সংখ্যক লোকের আদায় করার দ্বারা ফরজটি যথাযথ আদায় হয়ে গেলে সকলেই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়। আর আদায় না হলে সকলে গুনাহগার হয়। যেমন, মুসলিম মাইয়েতের জানাযা ও কাফন-দাফন সম্পন্ন করা একটি ফরজে কিফায়া। কিছু সংখ্যক মুসলিম মিলে তা করে নিলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। বাকিরা শরিক না হলেও তারা গুনাহগার হবে না। কিন্তু কেউই যদি আদায় না করে, তাহলে সকলেই গুনাহগার হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল