পরকীয়া ও পরিসংখ্যান

 

পরকীয়া একটি সমাজ বিধ্বংসী বিকৃত মানসিকতা। পরকীয়ার জেরে স্বামী স্ত্রীকে খুন করছে। স্ত্রী স্বামীকে খুন করে খাটের নিচের মেঝেতে পুঁতে রাখছে। পরকীয়ার মোহে খুন হচ্ছে সন্তান। এমনকি পরকীয়ায় লিপ্ত মসজিদের ইমাম সাহেব খুন করে এসে ফজরের নামাজে ইমামতি করছেন।তারপরও এ সমস্যাকে যদি আপনারা শুধুই পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর খবর মনে করে এড়িয়ে যান তবে এ বিপদ আমাদের সবার জন্যই অপেক্ষা করছে। আর যদি এটাকে আমরা বড় সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন, তবে এর থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় আমাদের ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় তথা ইসলামিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করা।
সূরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে নারীদের তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি পরপুরুষের সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। স্ত্রীর সৌন্দর্য স্বামীকে তার প্রতি আনুরাগী করলে সংসারের শান্তিই বাড়বে। পক্ষান্তরে নারীর সৌন্দর্য তার স্বামী ছাড়া অন্যকে আকর্ষণ করলে তা কেবল অশান্তিই বাড়াবে।
ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো নারীর পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়। সূরা আহজাবের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন। যদিও এ আয়াতটি নবীর স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছিল, তবে তা সব মুমিনের বেলায় প্রযোজ্য।
সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ পুরুষ-নারী সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। ' (সূরা বনি ইসরাইল-৩২)
সূরা নূরে ব্যভিচারের শাস্তি উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। ’ (সূরা নূর-২)
রাসুলুলুল্লাহ (সা.) ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুসলমানরা! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্র্য চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। ' (বায়হাকি, হা নম্বর-৫৬৪)
স্ত্রীদের তাদের দেবরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার ক্ষেত্রেও সাবধনতার বিধান রেখেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না। ’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য। ’ (মুসলিম- ২৪৪৫)তাহলে বুঝতেই পারছেন ইসলাম সর্বক্ষেত্রে পরকীয়ার মতো ব্যভিচার থেকে বিরত থাকতে বলেছে। এর বিপরীতে কঠিন শস্তির বিধান রেখেছে। আল্লাহ আমাদের জৈবিক চাহিদা, স্বাভাবিক প্রবৃত্তি আর শয়তানের প্রলোভন সব বিষয়ে অবগত। তাই তার দেওয়া বিধানের পরিপূর্ণ অনুসরণ আমাদের জীবনকে করবে সহজ ও সাবলীল।
খ্যাতনামা ডেটিং ওয়েবসাইটটির সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ১২টি পেশার মানুষের মধ্যে পরকীয়ার প্রবণতা সর্বাধিক। আর এই পেশার মানুষদের মধ্যে পরকীয়ার প্রবণতায় শীর্ষে রয়েছেন চিকিৎসকরা।
১) সমীক্ষা অনুসারে পরকীয়ায় লিপ্ত নারীদের মধ্যে ২৩ শতাংশই ছিলেন চিকিৎসক কিংবা নার্স। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লম্বা সময় ধরে কাজ করা ও মানসিক চাপ কমানোর জন্যই পরকীয়ার আশ্রয় নিয়েছেন তারা। অন্য দিকে পরকীয়ায় লিপ্ত পুরুষদের মধ্যে ৫ শতাংশ ছিলেন চিকিৎসক।
২) দ্বিতীয় যে পেশার মানুষ সর্বাধিক পরকীয়ায় আগ্রহ দেখিয়েছেন সেটি হল শিক্ষাক্ষেত্র। পরকীয়ায় লিপ্ত নারীদের ১২ শতাংশ ও পুরুষদের ৪ শতাংশই অধ্যাপক, প্রভাষক কিংবা শিক্ষক বলে মত সমীক্ষকদের।
৩) উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা রয়েছেন তালিকার তৃতীয় স্থানে। পরকীয়ায় আগ্রহী ৯ শতাংশ নারী ও ৮ শতাংশ পুরুষ এই ধরনের পেশায় যুক্ত ছিলেন বলে দেখা গিয়েছে সমীক্ষায়।
৪) এরপর তালিকায় যথাক্রমে রয়েছেন খুচরো বিক্রেতা, সমাজকর্মী, যোগাযোগমাধ্যমের কর্মী, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের কর্মী, উকিল, বিনোদন জগতের মানুষ, কৃষিকাজ ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন যারা। পুরুষের মধ্যে সর্বাধিক ২৯ শতাংশই কোনও না কোনও ভাবে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছেন সমীক্ষকরা।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “তবে বলা বাহুল্য এই ধরনের সমীক্ষাকে কখনওই সামাজিক সত্যের সামগ্রিক প্রতিফলন বলে ধরা যায় না। কাজেই এই ধরনের সমীক্ষা হাল্কাভাবে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল