ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস

 

আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর। ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনের ধারণাটি আসে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে।আবার অনেকের মতে, রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে। পরে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। এটিই জুলিয়ান ক্যালেন্ডার।
রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস হলেন প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি নামকরণ করা হয়। আমরা যাকে ইংরজি ক্যালেন্ডার বলি আদতে এর নাম গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে রোমের পোপ এয়োদশ গ্রেগরি প্রাচীন জুলিয়ান ক্যালেন্ডারটির সংস্কার সাধন করেন। এই গ্রেগরির নামে এই ক্যালেন্ডার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত হয়। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তারিখ লেখার শেষে যে AD (Anno Domini)লেখা হয় তা লাতিন অ্যানো ডোমিনি -এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই অ্যানো ডোমিনির অর্থ আমাদের প্রভুর বছরে(in the year of the Lord) অর্থাৎ খ্রিষ্টাব্দ। ডাইওনিসিয়াম একমিগুয়াস নামক এক খ্রিষ্টান পাদরী জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ৫৩২ অব্দে যিশু খ্রিষ্টের জন্ম বছর থেকে হিসাব করে এই খ্রিষ্টাব্দ লিখন রীতি চালু করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ ইয়ার পালনের শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে নিউ ইয়ার ইভ। এদিন নতুন বছরের আগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। বিভিন্ন দেশে নিউ ইয়ার বা নতুন বছরের এ দিনটি পাবলিক হলিডে হিসেবে উদযাপিত হয়। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা এক মিনিট থেকেই শুরু হয় নতুন বছর উদযাপনের উন্মাদনা। আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আতশবাজির আলোকছটা। আধুনিক বিশ্বে আন্তর্জাতিক নিউ ইয়ার ডে সার্বজনীন একটি ঐতিহ্যে রূপান্তরিত হয়েছে।
প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জামশিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে নববর্ষ প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে ব্যাবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষ প্রচলন করেন। প্রথমদিকে নববর্ষ বিভিন্ন তারিখে পালন করা হতো।আমাদের দেশে ইংরেজি তথা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার যে ব্রিটিশ বেনিয়া ঈস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানি আমাদের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে আমাদের ওপর গোলামির জোয়াল চাপিয়ে দেয়, সেই ব্রিটিশ এই ক্যালেন্ডার তাদের দেশ গ্রেট ব্রিটেনে চালু করে ১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে। তারা যেখানেই তাদের উপনিবেশ স্থাপন করেছে, সেখানেই তারা তাদের পোশাক-আশাক, শিক্ষা-দীক্ষা, প্রশাসনিক কাঠামো, সংস্কৃতি যেমন চাপিয়ে দিয়েছে, তেমনি তাদের ক্যালেন্ডারটিও দিয়েছে, তারা প্রভু সেজে বসেছে আর নেটিভদের বানিয়েছে মোস্ট অবিডিয়েন্ট সারভেন্ট।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ