আফগান ক্রিকেট






ক্রিকেটের সঙ্গে আফগানিস্তানের পরিচয় উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু আফগানিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে দখলদার বিদেশী বেনিয়াদের দৃষ্টি নিবদ্ধ সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। উনবিংশ শতাব্দী বলুন আর বিংশ শতাব্দী বলুন, দখলদারদের দৃষ্টি কখনওই সরেনি আফগানদের ওপর থেকে। দীর্ঘ সময় সোভিয়েত শ্বেত ভল্লুকদের সঙ্গে লড়াই চালানোর এক দশক পর আবার মার্কিনীদের লোলুপ দৃষ্টি। সব মিলিয়ে দেশটিতে ক্রিকেট বিকাশ লাভেরই সুযোগ পায়নি।নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানে থাকা আফগান শরণার্থীদের মাধ্যমে আফগানিস্তানে প্রথম ক্রিকেট দল গঠিত হয়েছিল। পরে তা মূল দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তালেবানের প্রথম শাসনামলে ১৯৯৭ সালে আফগান ক্রিকেট ফেডারশন (বর্তমান এসিবি) গঠিত হয়। ২০০১ সালে আইসিসির সহযোগি সদস্য এবং ২০০৩ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সদস্য হয় আফগানিস্তান।দেশটিতে একটি জাতীয় ক্রিকেট দলই গঠন হয়েছে প্রথম ২০০১ সালে। এরপর ২০০৯ সালে তারা প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নেয়।
গত এক যুগে আফগান ক্রিকেটের অভূতপূর্ব উত্থান ঘটে। দেশটি আইসিসির পূর্ণ সদস্য নির্বাচিত হয় এবং ২০১৭ সালে টেস্ট স্ট্যাটাসও পেয়ে যায়। আর এখন তারা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির শীর্ষ দশ দলের তালিকায় অবস্থান করছে। তাদের উন্নতি কত দ্রুত হয়েছে, তা এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের সরাসরি সুযোগ পাওয়া দেখলেই বোঝা যায়। র্যাংকিংয়ের শীর্ষ আটে আছে তারা, ফলে বাছাইপর্বে খেলতে হয়নি তাদের। অথচ শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ কিংবা আয়ারল্যান্ডের মতো পুরনো ও অভিজ্ঞ দলগুলোও সরাসরি খেলার সুযোগ পায়নি এবারের বিশ্বকাপে।
তালেবানরা ক্ষমতায় এলে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়েছিলেন আফগান দলের অধিনায়ক রশিদ খান।আফগানিস্তানে মৃত্যুর মিছিল, দেশে অস্থিরতা, এসব থামাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সক্রিয় দেখা গেছে রশিদকে। ক্রিকেট প্রশাসনে পরিবর্তন এসেছে । বোর্ডের প্রধান, প্রধান নির্বাহী পদে হয়েছে অদলবদল। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশের মতো আফগানিস্তান ক্রিকেটেও চলেছে টালমাটাল অবস্থা। পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ খেলার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে গেছে সেটা। তালেবান নারীদের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করবে, এমন কথা বলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট বাতিল করার কথা জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়াও। এত কিছুর ভিড়ে আপাতত স্বস্তির খবর আফগানরা দুর্দান্ত খেলছে।
এবারের বিশ্বকাপের আগে আফগান ক্রিকেট দল যে অনিশ্চয়তায় ছিল -
#তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর বলা হয়েছিল, যদি তাদের নারী ক্রিকেট দলকে দেশের মধ্যে খেলতে দেওয়া না হয়, তাহলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে পুরুষ দলকে নিষিদ্ধ করা হবে। তবে আইসিসির আনুষ্ঠানিক অনুমতির পর তাদের এ অনিশ্চিয়তা দূর হয়েছে।
#বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন দলের তারকা স্পিনার রশিদ খান। তার জায়গায় নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ নবিকে। তারই নেতৃত্বেই এবার মাঠে লড়ছে আফগান ক্রিকেট দল।
#ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আরব আমিরাতে তারা সময়মতো পৌঁছাতে পারেনি। তবে কাতারে অনুশীলন করেছে তারা।
তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই বলে আসছে তারা দেশের ক্রিকেট খেলায় কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।সরকার গঠনের আগেই আভাস মিলছে তালেবানরা শরিয়াহ ভিত্তিতেই আফগান ক্রিকেট পরিচালনা করবে।এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তাদের প্রথম শাসনামলে আফগান ক্রিকেটের উত্থান হয়। তালেবানরা তখন একাধিক খেলা বন্ধ করে দিলেও ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।
আগস্টে তালেবানরা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পরে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে আফগানিস্তানে একটি প্রদর্শনী ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হয়। আগস্টের মাঝামাঝিতে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর এটাই দেশটিতে প্রথম কোনো বড় ক্রিকেটীয় আয়োজন ছিল।
তালেবানের অধীনে আয়োজিত ‘ইন্ডিপিন্ডেন্স ট্রফি’ নামক ওই ম্যাচে খেলেছেন গুলবাদিন নাঈম, রহমত শাত এবং হাসমতুল্লাহ শহীদির মতো তারকা ক্রিকেটাররা।এসময় ম্যাচের ভেন্যু কাবুল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এবার বিশ্বকাপ নিয়ে আফগান দলের চাওয়া মাঠে ভালো খেলা এবং সেমি-ফাইনাল খেলে দেশকে গর্ব এনে দেওয়া।স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩০ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। আফগানদের করা ১৯০ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১০.২ ওভারে ৬০ রানে অলআউট হয় স্কটল্যান্ড

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল