ভূমিকম্প আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা
আজ ভোরে সারাদেশ ভূকম্পনে আবারো কেঁপে উঠল।ভূমিকম্পের মাত্রা ও উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক সংস্থা ইউএসজিএস’র ওয়েবসাইটে জানানো হয়, বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের হাখা থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।ভূপৃষ্ঠের ৪২ কিলোমিটার গভীরে এ কম্পনের সৃষ্টি হয়।ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি।শীতের শান্ত ভোরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন লোকজনও জেগে লাফিয়ে ওঠে হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনিতে।
ভূমিকম্প মহান আল্লাহর বাণীর সত্যতা ও নিত্যতা মাত্র। আল্লাহর ঘোষণা হলো : ‘জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে আমার আজাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে!’ (সুরা আরাফ আয়াত : ৯৭)
কেন ভূমিকম্প হয়? জানা যায়, ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এমন আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প ((Earthquake) বলে। সাধারণত তিনটি কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূপৃষ্ঠজনিত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হয়।
বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়। কোথাও তীব্রতা বেশি, কোথাও কম। তবে যেমনই হোক, ভূমিকম্প হলো মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। যেন মানুষ তাওবা করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। নিজেদের আচার-আচরণ শুধরে নেয়। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দোয়া করে। আল্লাহকে অনেক বেশি স্মরণ করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই। ’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত নং : ৫৯)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, “বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম। ’ (সুরা আনআম, আয়াত নং : ৬৫)
বুখারি শরিফে আছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ আয়াতটি নাজিল হলো, তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ’ ”(বুখারি)
আল্লামা ইবনু কাইয়িম (রহ.) বলেন, মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তখন এই ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে। তারা মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করে, পাপ কর্ম ছেড়ে দেয়, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মোনাজাত করে। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো, তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলতো, ‘মহান আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করেছেন।
আল্লাহ তাআলা সুরা ভূমিকম্পের ( সুরা যিলযাল) মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে ভূমিকম্পের ধরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন- যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে। যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে।` (সুরা যিলযাল আয়াত ১-২)আল্লাহ তাআলা বলেন ভূমিকম্পের মাত্রা এমন ভয়াবহ হবে যে পৃথিবী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। যার ফলে পৃথিবীর গর্ভে সকল মৃত মানুষ এবং ধন-সম্পদসহ যাবতীয় জিনিস বেরিয়ে পড়বে। তাই মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাকে সতর্ক করার জন্য কিয়ামাতের সামান্য আলামাত প্রকাশ করে পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণের সংকেত প্রদান করেন।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনে মানুষ প্রতিযোগিতা করবে, গচ্ছিত সম্পদের আমানতে খেয়ানত করবে, জাকাত দেয়াকে জরিমানা মনে করবে, ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়ে বিদ্যা অর্জন করবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে, মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে, পিতাকে বাদ দিয়ে বন্ধুকে আপন করে নিবে, মসজিদে শোরগোল করবে, জাতির দূর্বল ব্যক্তি সমাজের নেতৃত্ব দিবে। নিকৃষ্ট ব্যক্তি জননেতায় পরিণত হবে, খারাপ কাজে সুনাম অর্জন করবে এবং এ খারাপ কাজের ভয়ে ঐ ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে, বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর অবাধ বিচরণ হবে, মদ পান করা হবে এবং বংশের শেষ প্রজন্মের লোকজন পূর্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দিবে। সে সময়ে তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে, যার ফলশ্রুতিতে একটি ভূমিকম্প ভূমিকে তলিয়ে দিবে। (তিরমিজি)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন