সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মালালা পেলে ফাতিহা কেন নোবেল পাবে না!


#মো. আবু রায়হান উত্তর আমেরিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট ম্যাককিনলি দেখতে আলাস্কা প্রদেশের সুমেরু বৃত্তে বেড়াতে গিয়েছিল ৭ বছর বয়সী এক বালিকা। গিয়ে দেখে, পাহাড়সম সুবিশাল হিমবাহ থেকে সাগরে ভেঙে পড়ছে বরফখণ্ড, যে কারণে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে মেয়েটি। মনে পড়ে যায় তার নিজের দেশ ছোট্ট একটা বদ্বীপের কথা, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যেটি একদমই উঁচুতে নয়। নিউইয়র্কে ফিরে এসেই সে ছুটল জাতিসংঘে। সেখানে কড়া ভাষায় জানিয়ে এলো রোহিঙ্গাদের দ্বারা তার দেশের বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব কী!
আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ের এক গণিত প্রতিযোগিতায় এই মেয়েটিকেই যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- এটা তো আন্তর্জাতিক কোনো ইভেন্ট নয়, তা সত্ত্বেও তুমি তোমার নিজের দেশের পতাকা বহন করছ কেন? তার সাবলীল উত্তর- আমার দেশের কেউ যেহেতু আগে কখনও এই প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেনি, তাই আমি নিজের এই অর্জনকে দেশের সবার অর্জন বলে মনে করছি। এই পুরস্কার আমি বাংলাদেশের সব গণিতপ্রেমী শিক্ষার্থীকে উৎসর্গ করেছি। এই হলো বাংলাদেশের ফাতিহা আয়াত। প্রবাসে বসবাস করেও যে তার হৃদয়ে সমুজ্জ্বল রেখেছে বাংলাদেশের আলো।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন ১০ বছর বয়সী ফাতিহা আয়াত ১ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে ঢাকার উত্তরায় জন্ম নেয়। আয়াত চার বছর বয়সে তার বাবা -মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং এখন নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অফ গিফ্টেড অ্যান্ড ট্যালেন্টেড প্রোগ্রামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। জাতীয় পর্যায়ে গণিত প্রতিযোগিতায় এরই মধ্যে সে পেয়েছে অনারেবল মেনশন। জাতিসংঘের বিভিন্ন সম্মেলনে নিয়মিত যোগ দিয়ে কথা বলে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের অধিকার নিয়ে। তার বয়সী শিশুদের জন্য গণিত, কোডিং, বিজ্ঞান, নিউজ, কোরআন শরিফের তাফসির, সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে ইউটিউবে কনটেন্ট আপলোড করে।
ফাতিহা স্টেম ম্যাটারস প্রোগ্রামের আওতায় ব্রুকলিনের এনভায়রনমেন্টাল স্টাডি সেন্টারে ২০১৭ সালের সামার সাফারি ক্যাম্পের জন্য মনোনীত হয় এবং সাফল্যের সঙ্গে অংশ নেয়।এর আগে থ্যাঙ্কস গিভিং দিবসে আমেরিকার পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য কংগ্রেসওমেন গ্রেইস ম্যাং তাঁর কার্যালয়ে ফাতিহাকে এককভাবে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানান এবং শিশুদের মধ্যে গণিত ও বিজ্ঞানে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ফাতিহাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া কানাডার প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য, পার্লামেন্ট সদস্য ও বর্তমান মিনিস্টার অফ স্ট্যাটাস অব উইমেন মরিয়ম মুনসেফ আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসে জাতিসংঘের ইকোসক চেম্বারে তাঁর বক্তৃতায় ভবিষ্যৎ নভোচারী হিসেবে ফাতিহার কথা উল্লেখ করে।ফাতিহা ইউএন উইমেনের নির্বাহী পরিচালক ফুমযিল ম্লাম্বোর আমন্ত্রণে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘দ্য উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্ডা ইন এ চেঞ্জিং গ্লোবাল কনটেক্সট’ সেমিনারে অংশ নেয়। সেখানে ফাতিহা লিখিত বক্তব্য দেয়।
ফাতিহা ১৬তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলন ২০১৯, ইউএন ডে ২০১৭ এবং উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্ডা ২০১৭তে অংশ নেয়। এসব জায়গায় ফাতিহা শিশু নির্যাতন, লিঙ্গ বৈষম্য, পারিবারিক সহিংসতা, শরণার্থী শিবিরে অমানবিক জীবন ও শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সোচ্চার হয়। এমনকি ফাতিহা যেসব গণিতের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, সেখানেও সে শিশুদের আনন্দময় শিক্ষার অধিকার নিয়ে কথা বলে।২০১৮ সালে ২৪ অক্টোবর ব্রুকলিন বারাহ হলে আয়োজিত জাতিসংঘ দিবস উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে ফাতিহা জাতিসংঘে আমেরিকার ইয়ুথ অবজারভার মুনিরা খলিফাকে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে শিশুদের করণীয় হিসেবে প্রশ্ন রাখে এবং ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্টসহ উপস্থিত অন্যান্য জাতিসংঘ নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা কুড়ায়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ফাতিহা কুয়ালালামপুরে অবস্থিত ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম অব মালয়েশিয়া থেকে ব্রোঞ্জ সার্টিফিকেট লাভ করে।
Columbia University এবং Harvard University, Muslims community network,জাতিসংঘ ইত্যাদি তে বক্তব্য দিয়েছে এই ছোট্ট মেয়েটি। এছাড়া জাতিসংঘের এর সাথে কাজ করছে ফাতিহা।শিশুদের মধ্যে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভীতি দূর করার জন্য প্রচলিত নিয়মের বাইরে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে শেখাতে কাজ করছে সে। ফাতিহা কোডিং শিখে নিজেই তৈরি করছেন অ্যাপস। ইতিমধ্যেই একজন প্রত্যয়িত অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অ্যাপ ডেভেলপার, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র বর্তমানে জাভাস্ক্রিপ্ট এবং এইচটিএমএল শিখছে এবং খুব শীঘ্রই তার নিজস্ব অ্যাপ চালু করার পরিকল্পনা করছে।স্কুল থেকে যা শিখে আসে তা সে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করে অন্যদের শিখানোর চেষ্টা করে।ফাতিহার করা কিছু ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে ওর ফেসবুক পেজে। গণিত ছাড়াও ফাতিহা শিশুদের উপযোগী করে বিজ্ঞান, ভূগোল, কোরআনের তাফসির, সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়েও বিভিন্ন কনটেন্ট আপলোড করে।
আমেরিকার একটি টিভি চ্যানেল পুরো রমজান মাস জুড়ে একটি প্রোগ্রাম করেছিল। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল “Ramadan with fatiha” এই অনুষ্ঠানের প্রধান ছিল সঞ্চালক ফাতিহা। ২০১৮ সালে ন্যাশনাল ম্যাথমেটিকস পেন্টাথলন অ্যাকাডেমিক টুর্নামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অনারেবল মেনশন খেতাব জয় করে নিয়েছে ফাতিহা আয়াত। যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করতে ব্যস্ত সেখানে এই ছোট্ট মেয়েটি পরিবেশ বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনা করছে।হ্যাঁ, ফাতিহা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে কাজ করছে এবং কিভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যেই Bear with a bear (বিআর উইথ অ্যা বিআর)এবং Sisters’ reunion(সিস্টার রিইউনিয়ন) ও একটি মুসলিম শিশুর ডায়েরি নামে ফাতিহার তিনটি বই পাবলিশ হয়েছে এবং আমাজন থেকে সেটি পাবলিশ হয়েছে। কালার্স অব আর্ট হিউম্যানিটি'তে প্রদর্শিত হয়েছে ফাতিহার অসংখ্য আর্ট।
ফাতিহা মনের ভেতর স্বপ্ন বুনেন একদিন মহাকাশচারী হবেন। মহাকাশে গিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়াবে।তাইতো ফাতিহা বাবার সাথে কেনেডি স্পেস সেন্টারে ২৭ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী বিখ্যাত নভোচারী ‘ডন থমাস’ এর সাথে সাক্ষাৎ করে নভোচারী হওয়ার জন্য মূল্যবান দিক নির্দেশনা গ্রহণ করে। অ্যাস্ট্রনট ডন থমাস এর সাথে মিশন কন্ট্রোল রুম ঘুরে এসে ফাতিহা ঘরের এক কোণে বানিয়েছে নিজের ব্যক্তিগত স্পেস রিচার্জ কর্নার নাম দিয়েছে বায়তুল আয়াত বা ‘আয়াতের ঘর’। ফাতিহা নিজের ঘরকেই একটা গবেষণাগার বানিয়ে নিয়েছে।Science Bee এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে ফাতিহা আয়াতকে প্রশ্ন করা হয়, তুমি যেহেতু মহাকাশচারী হতে চাও, সেক্ষেত্রে মঙ্গলে যেতে চাও কিনা?জবাবে ফাতিহা আয়াত বলেন, আমি মঙ্গলে যেতে চাই না দুটি কারণে।প্রথম কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানেই এসেছিলেন, আমি তার উম্মাহ হতে চাই এখানে। এবং দ্বিতীয় কারণ এখন পর্যন্ত এমন উপায় নেই যে, মঙ্গলে যাব আবার ফিরে আসব। কেবল মঙ্গলে যাব এবং ওখানেই থাকতে হবে, আবার ফিরে আসার উপায় নেই। আমি আসলে যেতে চাই এবং ফিরে আসতে চাই।
ফাতিহা চায় বড় হয়ে এমন কিছু করে বিশ্বসভ্যতায় অবদান রাখতে, যেন আর একটি শিশুও ক্ষুধাকাতর দিন না কাটায়। তাই ফাতিহা গড়ে তোলেছে ‘চিল এন্ড ডি' নামে সহযোগী সংগঠন। যেখান থেকে শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা ও ক্লাইমেট চেইঞ্জ নিয়ে কাজ করা হয়। টিভি চ্যানালের সাক্ষাৎকারে ফাতিহা বলেন, যদি জেনেটিক সায়েন্টিস্ট হই, বিভিন্ন খাবারের ডিএনএ প্রোফাইল আবিস্কার করে সেগুলোকে শিশুদের জন্য আরও বেশি পুষ্টিকর করতে চাই। ফাতিহা বলেন, কী হতে চাই জানি না, কিন্তু যা-ই হই না কেন, চাই সেই পেশাটা হোক শিশুদের জন্য। একটি নতুন পৃথিবী তৈরি হোক শিশুময়।
অসংখ্য বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার, পুরস্কার, স্বীকৃতি, অংশগ্রহণ এবং স্বীকৃতি ছাড়াও, আয়াত গণিত, বিজ্ঞান এবং শিল্প প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছে।ন্যাশনাল ম্যাথমেটিকস পেন্টাথলন অ্যাকাডেমিক টুর্নামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অনারেবল মেনশন খেতাব জয় করে নেয় ফাতিহা আয়াত।ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ইন্ডিয়ানাপলিসের সাউথপোর্ট হাইস্কুলে প্রায় ১৫০ প্রতিযোগীর অংশগ্রহণে ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল ম্যাথমেটিকস পেন্টাথলন অ্যাকাডেমিক টুর্নামেন্ট ২০১৮। এই প্রতিযোগিতার পাঁচটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে তিনটিতে বিজয়ী হয়ে ১১ পয়েন্ট পেয়ে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি হিসেবে ‘অনারেবল মেনশন’ জয় করে নেয় ফাতিহা। তখন সে নিউইয়র্কের গিফটেড ও ট্যালেন্টেড প্রোগ্রামের গ্রেড ওয়ানের শিক্ষার্থী ছিল।
বহুমাত্রিক মেধার জন্য অল্প বয়সেই ফাতিহা অর্জন করেছে এন আর বি স্পেশাল টেলেন্ট অ্যাওয়ার্ড।তিনি নিউইয়র্কে ন্যাশনাল ম্যাথ লিগ ২০১৯ এর আঞ্চলিক রাউন্ডে প্রথম পুরস্কার জিতেছেন, এবং আটলান্টায় বার্ষিক গণিত টুর্নামেন্ট ২০১৯, নিউইয়র্কে জেইআই ম্যাথ অলিম্পিয়াড ২০১৯, ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল ম্যাথ ফেস্টিভাল ২০১৯, নতুন গ্লোবাল ম্যাথ উইক ২০১৯ ।২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর, শিশুদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে ও শিক্ষার অধিকারের লড়াইয়ের জন্য মালালা ইউসুফজাই ও ভারতীয় সমাজকর্মী কৈলাশ সত্যার্থীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়।মাত্র ১৭ বছরে মালালা এই পুরস্কারলাভের সময় বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ীর সম্মান লাভ করেন। কিন্তু মাত্র দশ বছর বয়সে মালালার চেয়ে শতগুণ কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখার পরও কোনোদিন ফাতিহা আয়াতকে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হবে না। কেননা ফাতিহা আয়াত একজন ধর্মভীরু মুসলিম এবং সে তার কাজের পাশাপাশি ধর্মীয় প্রচারণা চালায়। যা নোবেল পুরস্কার কমিটির কাছে গাত্রদাহের বিষয়।২০১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৯০৪ জন লোক বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। তম্মধ্যে ২০০ জন ইহুদি যা মোট নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর ২২.৬ ভাগ। অথচ ইহুদির সংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ০.০২ ভাগেরও কম। নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ইহুদির মধ্যে ৪০ ভাগ অর্থশাস্ত্রে, ২৮ ভাগ চিকিৎসা শাস্ত্রে, ২৬ ভাগ পদার্থ বিদ্যায়, ১৯ ভাগ রসায়ান শাস্ত্রে, ১৩ ভাগ সাহিত্যে এবং ৯ ভাগ শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। মুসলমানদের মধ্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ীর সংখ্যা ১০; যা মোট নোবেল পুরষ্কার বিজয়ীর মাত্র ১.০ ভাগ। অথচ সারা বিশ্বে মোট মুসলমানের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ। মুসলমানদের মধ্যে ৬ জন শান্তিতে, ২ জন সাহিত্যে, ১ জন পদার্থ বিদ্যায়, ১ জন রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...