সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিরা গুনাহ ও শিরক

 

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, কবিরা গুনাহ হলো, যেসব গুনাহের কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যেসব গুনাহের কারণে কোরআন ও হাদিসে ঈমান চলে যাওয়ার হুমকি বা অভিশাপ ইত্যাদি এসেছে, তাকেও কবিরা গুনাহ বলে।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, কবীরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা। (বুখারী)
শিরক হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার মানা, আল্লাহর অস্তিত্ব ও গুণরাজিকে কাউকে শরীক করে নেয়া। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ বিভিন্নভাবে খোদার খোদায়ীত্বে শরীক বানিয়েছে। মানুষ কখনও একাধিক খোদা বানিয়েছে। কখনও খোদাকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে। আবার কখনও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ও বস্তুকে খোদা বানিয়েছে। কখনও নিজেরাই মূর্তি তৈরি করে তার পূঁজা করেছে। আবার কখনও কখনও শক্তিশালী মানুষকে খোদার মর্যাদা দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে মুশরিকদেরও কাফির বলে সম্বোধন করা হয়েছে। যেমন ‘(হে রাসুল সা.!) আপনি বলুন “হে কাফিরেরা! আমি ইবাদত করি না ওই সব উপাস্যের, তোমরা যেগুলোর পূজা করো। আর তোমরা ইবাদতকারী নও সেই মাবুদের, যার ইবাদত (আনুগত্য) আমি করি। আমিও ইবাদতকারী নই ওসবের, যেসবের পূজারি তোমরা। আর তোমরাও ইবাদতকারী নও সেই মাবুদের, যার ইবাদত (দাসত্ব) আমি করি।”’ (সুরাকাফিরুন, আয়াত ১-৬)
শিরক সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘আল্লাহর সঙ্গে শরীক করো না। নিশ্চিত জেনে রেখো শিরক হচ্ছে অতি বড় জুলুম।’ (সুরা লুকমান ১৩)
শিরক দুই প্রকার। এক. শিরকে আকবার, দুই. শিরকে আসগর।
শিরকে আকবার হলো আল্লাহর সঙ্গে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা। অথবা যেকোনো ধরনের উপাসনা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা। যেমন—আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশে প্রাণী জবেহ করা ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তাঁর সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্য গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৪৮)
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি অংশীদারি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোনো কাজ করে আর ওই কাজে আমার সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করে, আমি ওই ব্যক্তিকে তার শিরকে ছেড়ে দিই। ’ (মুসলিম, হাদিস ৫৩০০)
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক পাপ হতে বিরত থাকবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে সাতটি পাপ কি কি? তিনি বললেন, এগুলো হল- আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা, যাদু করা, শরীয়তের অনুমোদন ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল আত্মসাৎ করা, জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা এবং অচেতন পবিত্র ঈমানদার মহিলাদের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ আনা। (বুখারী-মুসলিম)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...