সংযুক্ত আরব আমিরাত

 


 

সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় অবস্থিত। সাতটি আমিরাতকে সংযুক্ত করে বিশ্বের মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে আরব দুনিয়ার এই দেশ। এগুলি একসময় ট্রুসিয়াল স্টেটস নামে পরিচিত ছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত মরুময় দেশএর উত্তরে পারস্য উপসাগর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে সৌদি আরব, এবং পূর্বে ওমান ও ওমান উপসাগর। ১৯৭১ সালে দেশগুলি স্বাধীনতা লাভ করে। প্রতিটি আমিরাত একটি উপকূলীয় জনবসতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এবং ঐ লোকালয়ের নামেই এর নাম। আমিরাতের শাসনকর্তার পদবী আমির। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি আমিরাতের নাম হল আবু ধাবি, আজমান, দুবাই, আল ফুজাইরাহ, রাআস আল খাইমাহ, আশ শারজাহ্ এবং উম্ম আল ক্বাইওয়াইন। আরব আমিরাতে রয়েছে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন ও গগণচুম্বী ভবন।স্বাধীনতার পর খুব কম সময়ে আরব আমিরাত বিশ্বের অন্যতম সুন্দর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

রাজধানীঃআবুধাবি রাজধানী ও দুবাই দেশের বৃহত্তম শহর। গোটা দেশের আয়তনের ৮৭ শতাংশ রাজধানীর দখলে।

আয়তনঃ ৮৩ হাজার ৬০০ বরগকিলোমিটার

ধর্মঃ মুসলমান ৯৬% যাদের ১৬% শিয়া । খ্রিস্টান ও হিন্দু ।

মুদ্রাঃ দিরহাম

জাতিসংঘের যোগদান-১৯৭১ সালে ।

ও আইসির সদস্য -

জনসংখ্যাঃ৮২ লক্ষ ।২০১৪ সালের তথ্য অনুযায়ী এখানে বসবাসকারীদের মধ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা সবচেয়ে বেশি রয়েছেন। দূতাবাসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩৫ লাখ ভারতীয় রয়েছে, যারা দেশটির জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ। ভারতীয়রাই সেখানে সবচেয়ে বড় বিদেশী জাতিগোষ্ঠী।এছাড়া ১২ লক্ষ পাকিস্তানী রয়েছেন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১১ লক্ষ। এই দেশের দেশের জনসংখ্যার ২৭.১৫ শতাংশই ভারতীয় প্রবাসী।

ধর্মঃ ইসলাম সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারী ধর্ম। সংযুক্ত আরব আমিরাত এর জনসংখ্যার ৮০% এর বেশি মানুষ অনাগরিক। বস্তুত আরব আমিরাতের সকল নাগরিক মুসলমান; দেশটির প্রায় ৮৫% মুসলমান সুন্নি এবং ১৫% মুসলমান শিয়া পন্থার অনুসারী। তবে দেশটিতে ইসমাইলা, শিয়া এবং আহমদিয়া মুসলিমদের সংখ্যা খুব কম। এখানকার বিদেশীরা প্রধানত দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হতে আগত, যদিও অনেক বহিরাগত মধ্য-পূর্ব, ইউরোপ, মধ্য এশিয়া, কমনওয়েলথের স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ, উত্তর আমেরিকা হতে আসে।

ইসলামের আগমন

৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদের কাছ থেকে দূতের আগমনে এই অঞ্চলটি ইসলামে রূপান্তরিত হয়। মুহাম্মদের মৃত্যুর পর, বর্তমান ফুজাইরার দিব্বায় রিদ্দার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে অমুসলমানদের পরাজয়ের ফলে সমগ্র আরব উপদ্বীপে ইসলামের জয়জয়কার ঘোষিত হয়।

৬৩৭ সালে, জুলফার অঞ্চলকে (বর্তমান রাস-উল-খাইমা) ইরান বিজয়ের সূচনাকারী হিসেবে ব্যবহার করা হত। জুলফার ছিল একটি সমৃদ্ধশালী বন্দর এবং মুক্তো ব্যবসার কেন্দ্র; এখান থেকে পালতোলা নৌকো করে ভারত মহাসাগরের মধ্যে দিয়ে অনেক দেশে ভ্রমণ করা হত।

ইতিহাস

আমিরাতে প্রাপ্ত হস্তনির্মিত বস্তু থেকে এই অঞ্চলের মনুষ্য বসতিস্থাপনের ও মেসোপটেমিয়ার মত সভ্যতার সঙ্গে স্থানীয় বাণিজ্য চলাচলের সুপ্রাচীন ইতিহাস পাওয়া যায়। এই অঞ্চলের উপকূলে ও অভ্যন্তরস্থ স্থানে কিছু সংখ্যক উপজাতি প্রথমে বসতি স্থাপন করে এবং তাদের খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে ইসলামীকরণ করা হয়। বর্তমান আমিরাত ভূখণ্ড খ্রীস্টিয় ১৬শ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যের সরাসরি অধিকারে আসে। ভাস্কো-দা-গামার সমুদ্র জলপথ আবিষ্কারের পর ১৬শ শতকে ভারত মহাসাগরে পর্তুগীজদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বহু উপকূলীয় দ্বীপে লুণ্ঠন চালাতে থাকে।

আলবুকার্কের নেতৃত্বে পর্তুগিজ আক্রমণের সময় এই অঞ্চলের উপকূল বিভাগে বেশ কিছু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। ফলে ১৮২০ সালে আত্মারক্ষার প্রয়োজনে ব্রিটেনের সঙ্গেচুক্তিবদ্ধ হয়। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলটিকে জলদস্যুদের উপকূল বলত। চিরস্থায়ী উপকূলীয় শান্তির চুক্তিসহ, আরো বেশ কিছু চুক্তি ১৮৫৩ সালে স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত উপকূল অঞ্চল বরাবর শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় ছিল; এরপর মুক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই উপকূল অঞ্চলের অধিবাসীদের অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়।১৯৬৮ সালে ব্রিটিশরা একটি সিদ্ধান্তে আসে যে তারা চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর ওপর নিজেদের কার্যকলাপ বন্ধ করবে এবং একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করবে। এই সিদ্ধান্তটি চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রের সব থেকে প্রভাবশালী দুই নেতা – আবুধাবির শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান এবং দুবাইয়ের শেখ রশিদ বিন সৈয়দ আল মাকতুম সমর্থন করে। এরা দুজন অন্যান্য চুক্তিবদ্ধ শাসকদের এই যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান করবার আহ্বান জানায়। ১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭টি আমিরাত দ্বারা গঠিত একটি যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সাতটি আমিরাতের মধ্যে ছ’টি (আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমান, উম্মুল কুয়াইন এবং ফুজিরা) ঐ দিন সংযুক্ত হয়। সপ্তমটি, রাস-আল-খাইমা, ১৯৭২ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান করে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজনীতি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজনীতি একটি যুক্তরাষ্ট্রীয়, রাষ্ট্রপতিশাসিত, নির্বাচিত রাজতন্ত্রের কাঠামোতে সংঘটিত হয়। প্রশাসন ও সংবিধান

সাতটি রাজ্য মিলে একটি যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই যার প্রধান আবুধাবির আমির।কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দায়িত্ব আর সকল বিষয়ে রাজ্যগুলো স্বাধীন। সে কারণে তেলসমৃদ্ধ রাজ্যগুলি তেলবিহীন রাজ্যগুলির তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ।আজ যে শেখরাই প্রধান শাসক। এক কক্ষ বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় জাতীয় সংসদের সদস্য ৪০জন, সকলে মনোনীত সদস্য। দেশে কোনো রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি নেই। কোনো নির্বাচন হয় নাআবু ধাবির আমির হলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান। অন্যদিকে দুবাইয়ের আমীর হলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও সরকার প্রধান।খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ২০০৪ সাল থেকে রাষ্ট্রটির রাষ্ট্রপতি এবং মোহাম্মেদ বিন রাশিদ আল মাক্তুম ২০০৬ সাল থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

আমির

আবুধাবি-শেখ খলিফা বিন যায়েদ আল-নাহিয়ান

দুবাই-শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুম

শারজাহ-শেখ সুলতান বিন মোহাম্মদ আল-কাশিমি

আজমান-শেখ হুমাইদ বিন রশিদ আল-নুয়াইমি

ফুজাইরাহ-শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ বিন মোহাম্মদ আশ-শারকি

রাস আল খাইমাহ-শেখ সৌদ বিন শাকর আল-কাশিমি

উম্ম আল কোয়াইন-শেখ সৌদ বিন রশিদ আল-মু'আল্লা

তেল-

১৯৫০-এর দশকে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত মূলত ব্রিটিশ সরকারের অধীন কতগুলি অনুন্নত এলাকার সমষ্টি ছিল। খনিজ তেল শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে এগুলির দ্রুত উন্নতি ও আধুনিকায়ন ঘটে, ফলে ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে আমিরাতগুলি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে আসতে সক্ষম হয়। দেশের খনিজ তেলের বেশির ভাগ আবু ধাবিতে পাওয়া যায়, ফলে এটি সাতটি আমিরাতের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালীতেল শিল্পের কারণে এখানকার অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং জীবনযাত্রার মান বিশ্বের সর্বোচ্চগুলির একটি।

বুর্জ খলিফা

বুর্জ খলিফা বর্তমানে পৃথিবীর গগনচুম্বী অট্টালিকা বা উচ্চতম ভবন যা ৪ঠা জানুয়ারী ২০১০ তারিখে উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি আরব আমিরাতের দুবাই শহরে অবস্থিত। এটি "দুবাই টাওয়ার" নামেও পরিচিত।নির্মাণকালে এর বহুল প্রচারিত নাম বুর্জ দুবাই থাকলেও উদ্বোধনকালে নাম পরিবর্তন করে "বুর্জ খলিফা" রাখা হয়।এটির উচ্চতা ৮২৮ মিটার ।২০০৪ থেকে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এটিই ছিল পৃথিবীর উচ্চতম স্থাপনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে অবস্থিত উইলিস টাওয়ারটি ৪৪২ মিটারউঁচু। "বুর্জ খলিফা" এতই উঁচু একটি ভবন যে নিচতলা আর সর্বোচ্চ তলার মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য ৬° সেলসিয়াস।

বুর্জ খলিফার" নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে, আর কাজ শেষ হয় ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে। এটি তৈরীতে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। এর বহিঃপ্রাঙ্গনে অবস্থিত ফোয়ারা নির্মাণেই ব্যয় হয়েছে ১৩৩ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। এই ভবনে ১,০৪৪টি বাসা (এপার্টমেন্ট) আছে; ১৫৮তলায় আছে একটি মসজিদ; ৪৩তম এবং ৭৬তম তলায় আছে দুটি সুইমিং পুল। আরো আছে ১৬০ কক্ষবিশিষ্ট একটি হোটেল। ১২৪তম তলায় দর্শকদের জন্য প্রকৃতি দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ভবনে সংস্থাপিত কোনো কোনো লিফটের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ মাইল। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে শিলান্যাসের পর থেকে অতি দ্রুত নির্মাণ কাজ অগ্রসর হয়েছে। এমনো দিন গেছে যে দিন ১২ হাজার নির্মাণ কর্মী একযোগে নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত ছিল। সে সময় প্রতি তিন দিন পর পর একটি ছাদ তৈরি করা হয়েছে। আরব দুনিয়ার এই দেশের এক শীর্ষ মৌলবির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের উচ্চতম বিল্ডিং বুর্জ খলিফার ৮০ তলার উপরে যাঁরা বাস করেন তাঁদের রমজানের সময় অতিরক্তি ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় ইফতারের জন্য। কারণ, উঁচুতে সূর্যকে বেশ কিছুক্ষণ দেখতে পান তাঁরা।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দেশটির সঙ্গে এক ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।এই চুক্তির আগ পর্যন্ত উপসাগরীয় কোনো আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। আরব আমিরাতই প্রথম দেশ যারা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করল। তবে এটি ইসরায়েলের সঙ্গে তৃতীয় কোনো আরব রাষ্ট্রের শান্তি চুক্তি। এর আগে মিশর ১৯৭৯ সালে এবং জর্ডান ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে। সামনের দিনগুলোতে ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত বিনিয়োগ, পর্যটন, সরাসরি ফ্লাইট, নিরাপত্তা, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পথে হাঁটবে।

আরব বিশ্বের মধ্যে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

আরব বিশ্বের মধ্যে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সফলভাবে চালু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। রাজধানী আবুধাবির আল ধাফরাহ অঞ্চলে বারাকাহ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আরব আমিরাতের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে দেখছেন দেশটির নেতারা। আরব আমিরাত তাদের জ্বালানি চাহিদার এক-চতুর্থাংশ এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পূরণ করতে চায়।

স্যাটেলাইট হোপ মিশন

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহের পথে যাত্রা করেছে। জাপানের সবচেয়ে বড় রকেটবন্দর তানেগাশিমা থেকে উড্ডয়ন করে আমিরাতের স্যাটেলাইট ‘হোপ মিশন’। মহাকাশযানটির ওজন ১ দশমিক ৩ টন। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এ রোবটিক মহাকাশযানটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গন্তব্যে পৌঁছাবে। ওই একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত তার ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করার কথা রয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় এর আগে দুবার মহাকাশযানটির উৎক্ষেপণের সময় পেছাতে হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মঙ্গল অভিযান সফল হলে তাদের নাম যুক্ত হবে বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশের তালিকায়। এ তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ আর ভারতের মতো গুটিকয়েক দেশ, যারা মঙ্গলগ্রহে সফল মহাকাশ অভিযান করতে পেরেছে। সারাহ আল-আমিরি ‘হোপ মিশনের’ বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। একই সঙ্গে তিনি দেশটির অ্যাডভান্সড সায়েন্সবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। এই নবীন বিজ্ঞানী এরই মধ্যে আরব বিশ্বের নারীদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। ‘হোপ মিশন’ পৃথিবী ছেড়ে যখন রওনা হয়েছে মঙ্গল অভিমুখে, তখন একই সঙ্গে সবার নজর সারাহ আল-আমিরির দিকেও।

মসজিদ

সংযুক্ত আরব আমিরাত পারস্য উপসাগরের অন্যতম একটি দেশ। ধনাঢ্য এই দেশে অনেক সুন্দর ও মনোরম মসজিদ রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে মোট ৪৮১৮ টি মসজিদ রয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দুবাইয়ে ১৪১৮টি মসজিদ, আবু ধাবিতে ২২৮৯টি মসজিদ এবং শারজাতে ৬০০টি মসজিদ রয়েছে।

অ-মুসলিম ধর্মীয় প্রার্থনাস্থল

সংযুক্ত আরব-আমিরাতে অ-মুসলিম ধর্মীয় প্রার্থনাস্থলগুলোর কোনও আইনি বৈধতা ছিল না। এতদিনের ঐতিহ্য ভেঙে এবার অ-মুসলিম ধর্মস্থানগুলিকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে দেশটির সরকার। আগামী সপ্তাহে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ১৮টি সংখ্যালঘুদের প্রার্থনাস্থলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে । এতদিন পর্যন্ত আবু ধাবিতে অ-মুসলিম ধর্মীয় প্রার্থনাস্থলগুলির কোনও আইনি বৈধতা ছিল না। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে গড়ে উঠতে চলেছে প্রথম ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দির। সম্প্ৰতি হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে সেই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বোচাসনবাসী শ্রী অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামীনারায়ণ সংস্থার মহন্ত স্বামী মহারাজতারাই এই হিন্দু মন্দিরটি নির্মাণ করছে।

লিভ টুগেদার ওইসলাম বিরোধী আইন

আরব আমিরাতে বহু ধর্ম-বর্ণের লোকের বসবাস রয়েছে। তবে দেশটি মূলত আরব মুসলিমের বাসস্থান ও তাদের শাসনাধীন।এক সময়কার ইসলামি অনুশাসনের দেশটিতে এখন থেকে অবিবাহিত নারী-পুরুষ একসঙ্গে থাকতে পারবেন। আইনগতভাবে তাদেরকে কোনো ধরনের বাধার মুখে পড়তে হবে না। ২১ বছরের বেশি বয়সী অবিবাহিত নারী-পুরুষ আত্মীয় হোক বা না-হোক, একসঙ্গে বসবাসের ক্ষেত্রে কোনো জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হবে না। বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক করা ও একসঙ্গে বসবাসের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষকে কয়েক মাসের জেল দেয়ার বিধান ছিল ইসলামিক পারিবারিক আইন অনুযায়ী। তবে ব্যভিচারের সন্দেহ না হলে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্তে যেত না। আমিরাতের অনেক স্থানেই কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে অন্ধ থাকার ভান ধরত। যেমন: দুবাইয়ের মতো শহরগুলোয় হোটেলে অবিবাহিত নারী-পুরষের একসঙ্গে থাকার বিষয়ে কোনো বাধা দেয়া হতো না।একইসঙ্গে লাইসেন্স ছাড়া মদপানের সুযোগও দেয়া হয়েছে মানুষকে। এতদিন আমিরাতের আইনে লাইসেন্স ছাড়া মদ ও মাদক রাখা এবং বিক্রির দায়ে ধরা পড়লে শাস্তির মুখে পড়ার বিধান ছিল। এ জন্য অন্তত ৮০টি বেত্রাঘাতের বিধান ছিল। অবশ্য এ ধরনের শাস্তি বাস্তবায়নের ঘটনা দেখা গেছে খুবই কম। সরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দ্রুত এ আইন কার্যকর হচ্ছে। এখন থেকে মাদবদ্রব্য ও মদপান, বিক্রি ও মালিকানায় রাখার কারণে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। একইসঙ্গে কথিত ‘অনার কিলিং’-কে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টিও অনুমোদন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির আইনে এসব পরিবর্তন করা হয়েছে জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে। সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইল-আরব আমিরাত সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হয়। এরপরই ইসরাইলের কাছ থেকে বিনিয়োগ ও পর্যটক আকর্ষণের চেষ্টা করছে মুসলিম দেশটি। আরব আমিরাতে বসবাসকারী বিদেশিদের ক্ষেত্রে এখন থেকে বিবাহবিচ্ছেদ ও উত্তরাধীকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোয় স্থানীয় আইনের পরিবর্তে বাদী-বিবাদীদের নিজ দেশের আইন অনুসরণ করা হবে।

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল