ইউরেশিয়ার দেশ তুরস্ক

 


ইউরোশিয়ার (ইউরোপ এশিয়াদেশ তুরস্ক। চতুর্ভুজাকৃতির একটি দেশদেশটির পশ্চিমে এজিয়ান সাগর ও গ্রিস; উত্তর-পূর্বে জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও স্বায়ত্বশাসিত আজারবাইজানি প্রজাতন্ত্র নাখচিভান;পূর্বে ইরান; দক্ষিণে ইরাক, সিরিয়া ও ভূমধ্যসাগর। ইউরোপ সঙ্গমস্থলে অবস্থিত বলে তুরস্কের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিবর্তনে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়েছে। গোটা মানবসভ্যতার ইতিহাস জুড়েই তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপের মানুষদের চলাচলের সেতু হিসেবে কাজ করেছে। নানা বিচিত্র প্রভাবের থেকে তুরস্কের একটি নিজস্ব পরিচয়ের সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে এখানকার স্থাপত্য, চারুকলা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে। গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও অনেক অতীত ঐতিহ্য ও রীতিনীতি ধরে রাখা হয়েছে।তুরস্কের প্রায় পুরোটাই এশীয় অংশে,পর্বতময় আনাতোলিয়া বা এশিয়া মাইনর উপদ্বীপে পড়েছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা আনাতোলিয়াতেই অবস্থিত। তুরস্কের বাকী অংশের নাম পূর্ব বা তুর্কীয় থ্রাস এবং এটি ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় অবস্থিত। তুরস্কের রয়েছে বিস্তৃত উপকূল, যা দেশটির সীমান্তের তিন-চতুর্থাংশ গঠন করেছে।সামরিক কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জলপথ এশীয় ও ইউরোপীয় তুরস্ককে পৃথক করেছে— মারমারা সাগর এবং বসফরাস প্রণালি ও দারদানেল প্রণালিএই তিনটি জলপথ একত্রে কৃষ্ণ সাগর থেকে এজীয় সাগরে যাবার একমাত্র পথ তৈরি করেছে।


রাজধানী : আংকারা

আয়তন : সাত লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৬ বর্গকিলোমিটার

জনসংখ্যা : আট কোটি আট লাখ ১০ হাজার ৫২৫ জন।

জাতিগোষ্ঠী : তুর্কি, কুর্দি, আরব, লাজ প্রভৃতি

ধর্মঃ মুসলমান ৯৯.০৮ শতাংশ আর খ্রিস্টান ০.০২ শতাংশ।

দাপ্তরিক ভাষা : তুর্কি

আইনসভা : গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি

মুদ্রা : টার্কিশ লিরা

জাতিসংঘে যোগদান : ২৪ অক্টোবর ১৯৪৫।

 

তুর্কিদের পরিচয়-

তুর্কিদের প্রাচীন ইতিহাস পুরোপুরিভাবে ইতিহাসের আলোয় উজ্জ্বল নয়। এর কিছুটা লোকশ্রুতি ও কিংবদন্তির নিচে চাপা পড়েছে। কিছু দিন আগেও কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করতেন তুর্কিরা উরালীয়-আলতীয় ভাষাভাষী গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম। আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ফিনিস, এস্তোনীয়, হাঙ্গেরীয় প্রভৃতি উরাক্ষীয় ভাষার সাথে তুর্কি, মঙ্গোলিয়ান, মাঞ্জু-তুগু ও কোরীয় ভাষার মতো আলতাই ভাষা গোষ্ঠীর খুব বেশি যোগাযোগ নেই। তবে এ কথা প্রায় সব ঐতিহাসিক স্বীকার করেন যে, মোঙ্গল, মাঞ্জু বালগার এবং সম্ভবত হানদের মতো তুর্কিরাও বৃহৎ আলতীয় মানব গোষ্ঠীর অন্তর্গত।বাইফলে হ্রদের দক্ষিণে এবং গোটা মরুভূমির উত্তরে তাদের প্রথম পদচারণা। চৈনিক সূত্র থেকে জানা যায়, চীন সাম্রাজ্যের প্রান্তদেশে এক বৃহৎ যাযাবর গোষ্ঠী বসবাস করত। এদের মধ্যে মোঙ্গল ও তুর্কি জাতির লোক ছিল বলে অনুমান করা হয়। এসব দলের মাঝে নিরন্তর অন্তর্দ্বন্দ্ব লেগে ছিল। এবং ষষ্ঠ শতকে এ ধরনের যুদ্ধবিগ্রহের মধ্যে আমরা তুর্কি নামক দলের সন্ধান পাই। চৈনিক ঐতিহাসিকরা এদের ‘তু-কিউ’ নামে অভিহিত করেছেন। তুর্কি জাতির লোকেরা, এবং অতীতের বুলগার, হুন, সেলজুক, উসমানীয়, তৈমুরীয়, ইত্যাদি জাতিগুলি অন্তর্ভুক্ত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং আধুনিক বিশ্বে তুর্কদের প্রধান রাষ্ট্র হিসেবে বর্তমান তুরস্কের জন্ম হয়। তুর্কি সংবিধানের ৬৬ নম্বর আর্টিক্যাল অনুসারে, ‘তুরস্কের নাগরিকত্ব যাদের আছে তারাই তুর্কি বলে পরিচিত।

ইতিহাস-

তুরস্কের ইতিহাস দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল। প্রাচীনকাল থেকে বহু বিচিত্র জাতি ও সংস্কৃতির লোক এলাকাটি দখল করেছে। ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে এখানে হিটাইটদের বাস ছিল। তাদের সময়েই এখানে প্রথম বড় শহর গড়ে ওঠে। এরপর এখানে ফ্রিজীয়, গ্রিক, পারসিক, রোমান এবং আরবদের আগমন ঘটে। সপ্তম শতকে আরবদের ইরান বিজয়ের পর কিছু কিছু তুর্কি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং ইসলামি রাজ্যের মধ্যে বসবাস শুরু করে। নবম ও দশম শতকে এই যুদ্ধপ্রিয় তুর্কিদের অনেকে সৈন্য বিভাগে ও শাসনযন্ত্রের অন্যান্য বিভাগে প্রবেশ করতে শুরু করে। দশম শতকে তুর্কিদের বেশির ভাগই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এদের মধ্যে সেলজুক তুর্কিরা উল্লেখযোগ্য। অর্ধ-পৃথিবীর মহান সুলতান তুঘরিল বেগ ও তুর্কি জাতির অন্তর্ভুক্ত, তুর্কিতেই উনার জন্ম। ১২৪৩ সালে সেলজুকরা মঙ্গোলদের কাছে পরাজিত হয়। এতে তুর্কি সুলতানদের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। পরে প্রথম ওসমান ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সূচনা করেন।

ইস্তাম্বুল

তুরস্কের ইস্তাম্বুল একটি শুধু শহরই নয় বরং বলা চলে একটি কিংবদন্তি।এর পুরোনো নাম কন্সটান্টিনোপল। এছাড়া এটি বাইজান্টিয়াম নামে পরিচিত ছিল। ১৪৫৩ সালে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ ওই শহরটি জয় করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লেখান। এটি ছিল রোমান (বাইজেন্টাইন) সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। কনস্টান্টিনোপলে বিজয়কে ১৫০০ বছরের মত টিকে থাকা রোমান সাম্রাজ্যের সমাপ্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।১৪৫৩ সালে এটি তৎকালীন উস্‌মানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হয়।১৯৩০ সালে শহরটির নাম হয় ইস্তাম্বুল১৯২৩ সাল পর্যন্ত এখানেই ছিল তুরস্কের রাজধানী। ইস্তাম্বুলের আয়তন ৫,৩৪৩ বর্গ কিলোমিটার।এশিয়া ও ইউরোপকে একত্রে বলা হয় ইউরেশিয়াযার বিভাজন রেখা হলো বসফোরাসআর এই বরফোরাস প্রণালীর অবস্থান প্রাচীন ইস্তাম্বুল শহরে। ইস্তাম্বুলের ভেতর দিয়ে যে বসফোরাস প্রণালী বয়ে গেছে এর আয়তন ৩২ কিলোমিটার। উত্তরে কৃষ্ণসাগর ও দক্ষিণে মর্মর সাগর। প্রণালীর গভীরতা গড়ে ৫০ মিটারের মতো। প্রশস্ততা কোথাও কমআবার কোথাও বেশি। ইউরোপ ও ভলকান রাষ্ট্রগুলোর জাহাজ চলে এই প্রণালী দিয়ে।ইস্তাম্বুলের ইতিহাসে অসংখ্য সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ঘটেছিল। একসময় এই ইস্তাম্বুল শহরই ছিল তুরস্কের রাজধানী। তবেপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শহরটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়। তাই বলে প্রাচীন রাজধানী ইস্তাম্বুলের গুরুত্ব কোনো অংশে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। একসময় ইস্তাম্বুলই ছিল পৃথিবী শাসনকারী বাইজানটাইন ও পরবর্তীতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের রাজধানী। ইস্তাম্বুল ইউনেস্কোর তালিকায় ইউরোপের রাজধানী শহরের মর্যাদা পেয়েছিল ২০১০ সালে। এটাই একমাত্র শহর যার ভৌগোলিক অবস্থান দুই মহাদেশে। পরিকল্পিত শহরটি দেখতে স্বপ্নের জগতের মতো।একবার নেপোলিয়ন বোনাপার্ত বলেছিলেন, “পুরো পৃথিবীকে যদি একটি রাজ্য ভাবা হয়ইস্তাম্বুল হবে তার রাজধানী।

উসমানীয় সাম্রাজ্য(১২৮৭-১৯২৪ খ্রি. )

উসমানীয় সাম্রাজ্য সুদীর্ঘ ছয়শত বছরেরও বেশি ধরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে।উসমানীয় সাম্রাজ্য তুরস্কেরআনাতোলিয়া ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে।উসমানীয় সাম্রাজ্য ঐতিহাসিকভাবে তুর্কি সাম্রাজ্য বা অটোমান সাম্রাজ্য বলে পরিচিত। এই সম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজীর পিতা আরতুগ্রুল গাজী।প্রথম মুরাদ কর্তৃক বলকান জয়ের মাধ্যমে উসমানীয় সাম্রাজ্য বহুমহাদেশীয় সাম্রাজ্য হয়ে উঠে এবং খিলাফতের দাবিদার হয়। ১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের কনস্টান্টিনোপল জয় করার মাধ্যমে উসমানীয়রা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য উচ্ছেদ করে। ১৫২৬ সালে হাঙ্গেরি জয়ের পর ইউরোপের বলকান অঞ্চল সমূহ নিয়ে বড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৬শ ও ১৭শ শতাব্দীতে বিশেষত সুলতান প্রথম সুলাইমানের সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, উত্তরে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর, পশ্চিম এশিয়া, ককেসাস, উত্তর আফ্রিকা ও হর্ন অব আফ্রিকা জুড়ে , মধ্যপ্রাচ্য ও আরব অঞ্চলসহবিস্তৃত একটি শক্তিশালী বহুজাতিক, বহুভাষিক সাম্রাজ্য ছিল।১৭শ শতাব্দীর শুরুতে সাম্রাজ্যে ৩৬টি প্রদেশ ও বেশ কয়েকটি অনুগত রাজ্য ছিল। এসবের কিছু পরে সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত করে নেয়া হয় এবং বাকিগুলোকে কিছু মাত্রায় স্বায়ত্ত্বশাসন দেয়া হয়। ১৯১৪ সালে তুরস্ক অক্ষশক্তির পক্ষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয় এবং পরাজিত হয়। মূলত নিজের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্যই তুরস্ক এ যুদ্ধে অংশ নেয়। এ সময় চারটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টে তুর্কি বাহিনী নিয়োজিত ছিল। ফ্রন্ট চারটি হলো দার্দানেলিস, সিনাই-প্যালেস্টাইন, মেসোপটেমিয়া ও পূর্ব আনাতোলিয়া। যুদ্ধের শেষের দিকে প্রতিটি ফ্রন্টেই তুর্কি বাহিনী পরাজিত হয়। তুর্কি বাহিনীর মধ্যে এ সময় হতাশা দেখা দেয়। প্রতিটি ফ্রন্টে পর্যুদস্ত তুরস্কের পক্ষে যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখে তুর্কি ও ব্রিটিশ প্রতিনিধিরা লেমনস দ্বীপের সমুদ্র বন্দরে অবস্থিত ব্রিটিশ নৌবাহিনীর আগামেমনন জাহাজে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।বলকান ও মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যের সাবেক অংশগুলো প্রায় ৪৯টি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেখণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়ে তুরস্ক। খণ্ডিত তুরুস্কের মূল ভূখণ্ডেই পরে গড়ে ওঠে আধুনিক তুরস্ক। এর পত্তন করেন মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক। তাকে আধুনিক তুরস্কের জন্মদাতা বলা হয়। এর ফলে পতন ঘটে ৬০০ বছরের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের। একই সাথে মুসলিম বিশ্ব থেকে বিলুপ্তি ঘটে খিলাফত ব্যবস্থার।

সাঈদ নুরসি

সাঈদ নুরসি (১৮৭৭-১৯৬০) বদিউজ্জামান নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক।নুরসির জন্ম ১৮৭৭ সালে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত পূর্ব আনাতোলিয়ার বিতলিস ভিলায়েত প্রদেশের নুরস নামকগ্রামে।পিতা মির্জা আর মা নুরী’র চতুর্থ সন্তান সাঈদ নুরসীদের পরিবারটি ছিল কুর্দি গোত্রভুক্ত।এই শিশুর নাম ছিল সাঈদ, মানে ভাগ্যবান। নুরসে জন্ম নিয়েছেন- তাই নুরসি। বাল্যকালে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় মুহাম্মদ এফেন্দির মাদ্রাসায়। এরপর ১৮৮৮ সালে শাইখ আমিন এফেন্দির মাদ্রাসা এবং পরে আরো বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন শেষে শাইখ মুহাম্মাদ জালালির কাছ থেকে শিক্ষাসনদ লাভ করেন। ‘বদিউজ্জামান’ তার সম্মানসূচক খেতাববা যুগের বিশ্বয় (Wonder of the age) । ইংরেজিতে বলা হতো ‘দি মোস্ট ইউনিক অ্যান্ড সুপিরিয়র পারসন অব দ্য টাইম’।এখানে তিনি ধর্মীয় বিতর্কে পারদর্শিতা দেখান।তিরিশের দশকে তুরস্ক থেকে যখন কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে ইসলামের নাম-নিশানা মুছে ফেলা হয়, মানুষকে ধর্মচর্চা থেকে জোর করে বিমুখ করে বিস্মৃত করা হয় তাদের ঈমানি চেতনা, ধর্মীয় সঙ্কটের নিদারুণ সেই ক্রান্তিকালে উস্তাদ বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসি মানুষের ভেতর ঈমানি চেতনা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে এ মিশনের সূচনা করেন। প্রচলিত পীর-মুরিদি এবং সুফিজমকে তিনি অস্বীকার করেননি, কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে মানুষকে আধ্যাত্মিক সাধনা ও আত্মশুদ্ধির প্রতি আকৃষ্ট করতে এই ধারাকে উপযোগীও মনে করেননি। তাই সিলসিলাগত আধ্যাত্মিকতার প্রাচীন ধারা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ও অভিনব পদ্ধতিতে মানুষের আত্মশুদ্ধির এক মেহনতের সূচনা করেন। রচনা করেন ‘রিসালায়ে নুর’ নামক বিখ্যাত গ্রন্থখানির। এটির আকার ছয় হাজার পৃষ্ঠার অধিক। এই বইগুলোকে রিসালা-ই-নুর বলা হয়ে থাকে। বিশ্বের ৪৯টি ভাষায় রিসালা-ই-নুর অনূদিত হয়েছে। যেখানে মানুষের জীবন-জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছেন তিনি নতুন এক পদ্ধতিতে। ঈমানের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছেন গবেষণার ধাঁচে। আধুনিক তুরস্কের সেকুলার ভাবাপন্ন মানুষ বিপুলভাবে আকৃষ্ট হন তাঁর এ পদ্ধতির প্রতি। বিপুলভাবে পঠিত ও চর্চিত হতে থাকে রিসালায়ে নুর গ্রন্থখানিও।
বহুমতকে তিনি ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেননি। তিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে মাজহাব নিয়ে বিরোধও পছন্দ করতেন না। তিনি বলে গেছেন, ‘আমার রাস্তাই একমাত্র সঠিক ও সত্য, অন্যটি নয়’ কিংবা ‘উৎকর্ষ ও সৌন্দর্য শুধু আমার তরিকাতেই আছে, অন্যটির মধ্যে নেই’ এমন বক্তব্য অন্যের পথ, পন্থা ও পদ্ধতিকে মিথ্যা ও বাতিল বলে ঘোষণা দেয়। এমন কথা কখনোই বলা উচিত নয়।
আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিকে ভবিষ্যতের পথ বিবেচনা করে তিনি সাধারণ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় জ্ঞান ও ধর্মীয় বিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন।নুরসি একটি বিশ্বাসভিত্তিক আন্দোলনের সূত্রপাত করেন।এই আন্দোলন তুরস্কে ইসলামের পুনর্জাগরণে ভূমিকা রাখে। বর্তমানে সারাবিশ্বে এর ব্যাপক অনুসারী রয়েছে। তার অনুসারীদের প্রায় "নুরজু" বা "নুর জামাত" নামে অবিহিত করা হয় । ষাটের দশকের শুরুর দিকে সাঈদ নুরসি ইন্তেকাল করেন। কিন্তু তাঁর তিন দশকের মেহনতে পুরো তুরস্ক জুড়ে রেখে যান রেসালায়ে নুরের লাখ লাখ একনিষ্ঠ পাঠক। রেখে যান বেশুমার অনুসারী। তাঁর ইন্তেকালের পর এরাই আঁকড়ে ধরেন তাঁর মিশনকে, এবং নুর জামাত নামে তাঁরা পুরো বিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তুরস্কসহ বর্তমানে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, ইরান, আফ্রিকার মৌরতানিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নুরসি জামাতের কার্যক্রম চলমান। তুরস্কের ইস্তাম্বুলেই মাদরাসায়ে নুর নামে পরিচালিত তাঁদের কেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজারের ওপরে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন তুরস্কের অন্যান্য প্রদেশ ও শহরে এর সংখ্যা আরও বেশি। সৌদি আরবের ১০টি শহরে আছে মাদরাসায়ে নুরের কার্যক্রম।নুরসির জীবনী নিয়ে ২০১১ সালে তৈরী হয়েছে তুর্কী চলচ্চিত্র হুর আদম।

কামাল আতাতুর্ক

১৯২৩ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের তুর্কিভাষী এলাকা আনাতোলিয়া ও পূর্ব থ্রাস নিয়ে মুস্তাফা কামাল (পরবর্তীতে কামাল আতাতুর্ক)-এর নেতৃত্বে আধুনিক তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়।ক্ষমতা গ্রহণের পর তুরস্ককে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেন। তার অনেক পদক্ষেপই ছিল তুরস্কের ইসলামপন্থী জনগণের চেতনাবিরোধী। তার পরও সংস্কার ছিল অপরিহার্য। ১৯২৩ সালে তিনি তুরস্ককে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। আর তিনি হন সে প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। এভাবেই যাত্রা শুরু হয় একটি আধুনিক তুরস্কের।১৯৩৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আতাতুর্ক তুরস্কের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি একটি শক্তিশালী, আধুনিক ইউরোপীয় রাষ্ট্র হিসেবে তুরস্কের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তার সরকারের মূলনীতিগুলি কামালবাদ নামে পরিচিত এবং এগুলি পরবর্তী সমস্ত তুরস্ক সরকারের জন্য নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করেছে। আতাতুর্কের একটি বিতর্কিত মূলনীতি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। কামালের কট্টর অনুসারীরা মনে করেন ব্যক্তিগত জীবনের বাইরে ধর্মের স্থান নেই এবং রাজনৈতিক দলগুলির ধর্মীয় ইস্যু এড়িয়ে চলা উচিত।

 

কামাল আতাতুর্ক উত্তর তুরস্ক

১৯৪৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়। মূলত উদ্ভূত কিছু পরিস্থিতি মোকাবেলায় এর কোনো বিকল্প ছিল না দেশটির সামনে। যুদ্ধের পর দেশটি জাতিসঙ্ঘে ও ন্যাটোতে যোগ দেয়।এ সময় থেকে তুরস্কে বহুদলীয় রাজনীতির প্রবর্তন হয়।১৯৫০-এর দশক থেকে রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকা তুরস্কের একটি বিতর্কিত ইস্যু। তুরস্কের সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে কামালবাদের রক্ষী বলে মনে করে।১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে। ফলে ১৯৬০, ১৯৭১ ও ১৯৮০ এবং ১৯৯৭ সালে মোট চারবার তুরস্কের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার স্বার্থে হস্তক্ষেপ করেছে। দেশটিতে সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে ১৯৯৭ সালে। কিন্তু পরে আবার দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু ২০১৩তে গাজি পার্কের বিক্ষোভ ও ২০১৫তে সুরুক বোমা হামলা পুনরায় অস্থিরতার জন্ম দেয়।সর্বশেষ ২০১৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করা হয় তবে শেষ পর্যন্ত তুর্কি জনগনের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে তা ব্যর্থ হয়।বর্তমানে দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার রয়েছে।

রাজনীতি

তুরস্কের রাজনীতি একটি বহুদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। তুরস্কে ৫৫০ আসনের একটি সংসদ আছে, যার সদস্যরা ৫ বছরের জন্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন করে এবং সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতিকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করেন। রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রপতি এবং বিনালি ইলদিরিম দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

একে পার্টি

মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ১৯২৩ সালে ওসমানীয় খিলাফত বিলুপ্ত করে তুরস্ককে কঠোর ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করেন। নিষিদ্ধ হয় ধর্মভিত্তিক দল। ১৯৭০ সালে ইসলামপন্থি দল ন্যাশনাল অর্ডার পার্টি গঠিত হলে তা নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭২ সালে গঠিত ইসলামপন্থি দল ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টি ১৯৮৮ সালে নিষিদ্ধ হলে ওয়েলফেয়ার পার্টি গঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলটি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলেও তুর্কি সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন আরবাকানকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দলটি নিষিদ্ধ হয়২০০১ সালে এরদোগান ওয়েলফেয়ার পার্টির ধর্মীয় পরিচয় ঝেড়ে ফেলে উদার ও গণতান্ত্রিক পরিচয়ের একে পার্টিতে রূপান্তর করেন। ২০০২ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন এরদোগান। টানা তিন দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে ২০১৪ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হন তিনি।

রজব তায়িপ এরদোয়ান

সামরিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এই মুহূর্তে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ তুরস্ক। তারা সামরিক জোট ন্যাটোরও সদস্য। কামাল আতাতুর্কের আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্রের নীতির কারণে তুরস্ক সম্পর্কে ইসলামি বিশ্বে একধরনের দ্বিধা লক্ষ করা গেছে। তবে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আমলে তুরস্কের ভাবমূর্তির বদল ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের দায়িত্বকাল মিলিয়ে এরদোয়ান অনেক দিন ধরেই তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন। তিনি ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত।রজব তায়িপ এরদোয়ান হলেন তুরস্কের ১২তম রাষ্ট্রপতি যিনি ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এরদোয়ান।২০০১ সালে তিনি একে পার্টি (জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি বা একেপি) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই দলটি জনসমর্থনের মাধ্যমে এক নম্বর অবস্থানে চলে আসে। দলটি ১৯৮৪ সালের পর প্রথমবার তুরস্কের ইতিহাসে একদলীয় দল হিসেবে এবং পরপর ৪ বার (২০০২, ২০০৭, ২০১১,২০১৪) সাংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়। রাষ্ট্রপতি হবার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ক্ষমতাসীন এই দলের সভাপতি ও প্রধান দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেনরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পুর্বেও ২০০৩ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তুরষ্কের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং তার পূর্বে ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্টে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর তুরস্কের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিচয় আবারো ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মুসলিম বিশ্বের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক পুনরায় জাগিয়ে তোলেন তিনি। তুরস্কের অর্থনীতির স্বার্থে আরব দেশগুলোর সাথে ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছে ছিল।তুরস্কে ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে কাজ করছেন তিনি। এরদোয়ানের জোর প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে ইসলামিক বিশ্বে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে আঙ্কারা। ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার পর তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের অবস্থান আরও সুসংহত হয়েছে। অধিকতর সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন তিনি। এখন তো তাঁকে অনেকে তুরস্কের নতুন সুলতান সুলেমান বলেও অভিহিত করেন। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাসহ (ওআইসি) বিভিন্ন ফোরাম এরদোয়ান নিজের যোগ্যতা তুলে ধরছেন। ২০১৬ সালের এপ্রিলে তুরস্কে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে এরদোয়ান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, ‘আমি সুন্নি বা শিয়া নই, আমার ধর্ম ইসলাম’ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকারের চুক্তি, বিগত দশবছর ধরে চলাকালীন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তুর্কি লিরার (তুর্কি মুদ্রা) মুল্য পুনর্নিধারণ, সুদের হার কমানো,অতীতে অট্টোমান শাসনাধীন দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও বিশ্বমহলে নেতৃস্থানীয় ও সৌহার্দ্যপুর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্তিকে মুল লক্ষ্য রেখে বৈদেশিক নীতি গ্রহণ (নব্য-অটোম্যানবাদ), বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কারণে বিশ্বমহলে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত। বর্তমান তুরস্কে দেশটির সেনাবাহিনী পুরোপুরি বেসামরিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে।প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান প্রকাশ্যে আমেরিকার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন।ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে 'একটি সন্ত্রাসী দেশের নেতা' হিসেব টুইটারের মাধ্যমে উল্লেখ করেন মি: এরদোয়ান।ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। গাজাকে একটি 'উন্মুক্ত কারাগার' হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।এরদোয়ানের এসব বক্তব্য বিশ্বে তার ভক্ত বাড়িয়েছে।তুরস্কের নতুন সংবিধান অনুসারে তিনি ২০২৩ সালের পর ফের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন, তখন জয়ী হলে ২০২৮ পর্যন্ত তিনিই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট থাকবেন।

নোবেল জয়ী তুর্কি –

ওরহান পামুক একজন তুর্কি ঔপন্যাসিক, চিত্রনাট্য সম্পাদক ও শিক্ষক। তুরস্কের অন্যতম প্রধান লেখক ওরহানের বই বিশ্বের ৬০টির বেশি ভাষায় ও ১০০টির বেশি দেশে এবং ১৪ মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছে। তিনি তুরস্কের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কথাসাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। মাই নেম ইজ রেড’ নামক বইয়ের জন্য জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছান তুর্কি লেখক ওরহান পামুক। ২৩টি ভাষায় অনূদিত বইটি ২০০৩ সালে জিতে নেয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অর্থমূল্যের সাহিত্য পুরস্কার।১৯৯৫ সালে প্রকাশিত পামুকের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ৫ম উপন্যাসনিউ লাইফ সবচেয়ে দ্রুত বিক্রি হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি করে। উত্তরাধুনিক ও প্রাচুর্যপূর্ণ সাহিত্যের জন্য ২০০৬ সালে তাকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।সাহিত্যে পুরস্কার পাওয়া তিনি একমাত্র তুর্কি লেখক। পামুক ১৯৫২ সালে ইস্তাম্বুলের এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সাল থেকে তিনি নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন।তুরস্ক বংশোভূত আমেরিকান বিজ্ঞানী আজিজ সানজার একাধারে প্রাণ রসায়নবিদ এবং কোষ বৈজ্ঞানিক। ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ পুনরুৎকার সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ২০১৫ সালে তুর্কি বিজ্ঞানী আজিজ সানজার রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম তুর্কি রসায়নবিদ এবং দ্বিতীয় তুর্কি (প্রথম ওরহান পামুক ) ও তৃতীয় মুসলিম বিজ্ঞানী ( মুহাম্মদ আবদুস সালাম ১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে , আহমদ জুয়েল হাসান ১৯৯৯ সালে রসায়নে ) হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। আজিজ সানজার তুরস্কের মারদিন প্রদেশের সাভুর নামক জেলায় এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৪৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ৮ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। অশিক্ষিত বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নিলেও পড়ালেখার জন্য করেছেন সংগ্রাম। তিনি আজিজ এবং গুয়েন সানজার নামক প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানটি তুরস্কের সংস্কৃতির বিস্তার করা এবং যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তুরস্কের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে থাকে।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

প্রশাসনিক সুবিধার্থে তুরস্ককে ৮১টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়েছে।সব বিভাগ আবার সাতটি অঞ্চলে বিভক্ত। তবে এই সাতটি অঞ্চল কোনো প্রশাসনিক বিভাজন নয়। প্রতিটি প্রদেশ কয়েকটি করে জেলায় বিভক্ত। তুরস্কে মোট জেলা আছে ৯২৩টি। প্রতিটি প্রদেশের নামই সেই প্রদেশের রাজধানীর নাম। আর প্রতিটি প্রাদেশিক রাজধানী সংশ্লিষ্ট প্রদেশের কেন্দ্রীয় জেলা। সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুল। এটি হচ্ছে তুরস্কের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু। তুর্কি জনগণের প্রায় ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ লোক শহরে বসবাস করে।

পররাষ্ট্রনীতি

জাতিসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তুরস্ক।এ ছাড়া ওইসিডি, ওআইসি ওএসসিই], ইসিও, বিএসইসি, ডি-৮ এবং জি-২০ ইত্যাদি সংগঠনের সদস্য তুরস্ক। ২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর তুরস্ক ১৫১টি দেশের সমর্থন পেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়। তার এ সদস্যপদ ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এর আগেও তুরস্ক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ছিল ১৯৫১-১৯৫২, ১৯৫৪-১৯৫৫ এবং ১৯৬১ সালে।পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক, বিশেষ করে ইউরোপের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখাই তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতির মূল কাজ। কাউন্সিল অব ইউরোপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তুরস্ক। দেশটি ১৯৫৯ সালে ইইসি’র সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করে এবং ১৯৬৩ সালে দেশটি সংস্থাটির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায়। ১৯৮৭ সালে তুরস্ক ইইসি’র পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করে। ১৯৯২ সালে ওয়েস্টার্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে। দেশটি ইইউ’র পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য ১৯৯৫ সালে একটি চুক্তি করে। এ চুক্তি অনুসারে ২০০৫ সালের ৩ অক্টোবর সমঝোতা শুরু হয়। তবে সে সমঝোতা এখনো শেষ হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে গ্রিক সাইপ্রাসকে কেন্দ্র করে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সাথে তুরস্কের যে বিরোধ তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সমঝোতা চলতেই থাকবে।এ ছাড়া তুর্কি পররাষ্ট্রনীতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক।এখানে উভয় দেশেরই অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। আর তা হলো সোভিয়েত আগ্রাসন মোকাবেলা। আর সে লক্ষ্যে তুরস্ক ১৯৫২ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয়। এর মাধ্যমে দেশটি ওয়াশিংটনের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলে। স্নায়ুযুদ্ধের পর তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। ইরাক ও সিরিয়া সীমান্তের কাছে তুরস্কে ন্যাটোর বিমান ঘাঁটি রয়েছে। ইসরাইলের সাথেও তুরস্কের ভালো সম্পর্ক রয়েছে১৯৮০ সালের পর তুরস্ক পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বড় ধরনের লেনদেনে জড়ায় দেশটি। আর এসব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সমর্থন পেয়েছে তুরস্ক।

সামরিক শক্তি

ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে তুরস্কের চেয়ে বড় প্রতিরক্ষা শক্তি। তুরস্ক ১৯৫২ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয়।সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী নিয়ে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠিত। জেন্ডারমেরি ও কোস্টগার্ডরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করলেও যুদ্ধের সময় এরা যথাক্রমে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর কমান্ড অনুসরণ করে। এ সময় বাহিনী দু’টিতে নিজস্ব আইন কার্যকর থাকলেও এরা সামরিক কিছু নিয়মকানুন মেনে চলে।ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম।একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে তুরস্কের চেয়ে বড় প্রতিরক্ষা শক্তি। তুরস্কে প্রতিরক্ষা বিভাগে মোট ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫০ জন সামরিক সদস্য রয়েছে। ন্যাটোভুক্ত যে পাঁচটি দেশ যৌথ পরমাণু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তুরস্ক তার অন্যতম সদস্য। বাকি দেশগুলো হলো বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ড। প্রতিরক্ষা বিভাগকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে তুরস্ক ১৬ হাজার কোটি ডলারের কর্মসূচি গ্রহণ করে।বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিশনে তুর্কি বাহিনী কাজ করছে। জাতিসঙ্ঘ ও ন্যাটোর অধীনেই তারা বিভিন্ন মিশনে অংশ নিচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর অধীনে তুর্কি বাহিনীর সদস্যরা বর্তমানে সোমালিয়ায় কাজ করছে। এ ছাড়া সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় শান্তি মিশনে ও প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাথে সহায়তা করেছে। বর্তমানে তুর্কি স্বীকৃত সাইপ্রাসে ৩৬ হাজার তুর্কি সেনা দায়িত্ব পালন করছে এবং ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সাথে ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানেও দায়িত্ব পালন করছে তুর্কি সেনারা। ইসরাইল-লেবানন সঙ্ঘাত এড়াতে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় ২০০৬ সালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তুরস্ক কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ ও ৭০০ সৈন্য মোতায়েন করে।দেশটির সেনাপ্রধানকে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ। জাতীয় নিরাত্তার ব্যাপারে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ। কোনো যুদ্ধ ঘোষণা, বিদেশে সৈন্য প্রেরণ কিংবা দেশের ভেতরে বিদেশী সৈন্যদের ঘাঁটি স্থাপন প্রত্যেকটি বিষয়েই পার্লামেন্টের অনুমোদন লাগে।

বিমান বাহিনী

তুরস্কের বিমানবাহিনী তার প্রয়োজনের তুলনায় ক্ষুদ্র। বেশ কিছু ক্ষেত্রে মার্কিন নীতির বিরোধিতা করলেও দেশের বিমান বাহিনী মূলত ৯০টি একক আসনের একক ইঞ্জিনের মার্কিন এফ-১৬সি যুদ্ধ বিমানে সজ্জিত।

শিল্প ও সাহিত্য

তুর্কি সাহিত্য ও অন্যান্য রচনায় ইসলামি বিশ্বের ছাপ স্পষ্ট।তুর্কি সাহিত্যে পারসিক ও আরব সাহিত্যের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এক সময় তুর্কি লোকসাহিত্যে ইউরোপীয় সাহিত্যের প্রভাব বেড়ে গেলেও এখন তা আবার ধীরে ধীরে কমছে।

ধর্ম ও সংস্কৃতি সেমা চলাকালীন সময়ের দারভিশ (দরবেশ) নৃত্য।বর্তমানকালে তুরস্ক একটি সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ যার কোন রাষ্ট্রধর্ম নেই এবং সংবিধানে এর প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তায় গুরুত্তারোপ করা হয়েছে। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তুরস্কের ৯৬.৫ শতাংশ লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী ০.৩ শতাংশ খ্রিস্টান ও ৩.২ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।তুরস্কের সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। গ্রিক, রোমান, ইসলামিক ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মিশ্রণে তাদের একটি সংকর সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। অটোমান সম্রাটদের সময় তুরস্কে পশ্চিমা সংস্কৃতি ভিড়তে থাকে এবং আজও তা দেশটিতে অব্যাহত আছে। ১৯২৩ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সময় সাংস্কৃতিক জগতের আধুনিকায়নে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়। ললিতকলার বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে জাদুঘর, থিয়েটার, অপেরা হাউজ এবং অন্যান্য স্থাপত্যসহ বিভিন্ন শাখায় এসব বিনিয়োগ করা হয়। প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে তুরস্কে ধর্মকে রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে পৃথক করা হয়। তবে দীর্ঘদিন পর সে ব্যবস্থায় আবার পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।

খেলাধুল তুরস্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। ফুটবলে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য হচ্ছে ২০০২ সালে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন। সর্বশেষ সাফল্য হিসেবে তুরস্ক ফুটবল দলটি ২০০৮ সালের ইউরো কাপের সেমিফাইনালে উঠতে সক্ষম হয়। অন্যান্য খেলার মধ্যে বাস্কেটবল ও ভলিবল খেলা খুব জনপ্রিয়২০০১ সালে ইউরো বাস্কেটবলের আয়োজক দেশ ছিল তুরস্ক। ওই টুর্নামেন্টে তুরস্ক দল দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। এ ছাড়া ভলিবলেও তাদের অর্জন খুব ভালো। তবে তুরস্কের জাতীয় খেলা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ইয়াগলি গুরেস বা অয়েলড রেসলিং। অটোমানদের সময় থেকেই এ খেলাকে জাতীয় খেলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়তুরস্কের জাতীয় রেসলাররা বিশ্ব ও অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এ ছাড়া অন্যান্য খেলার মধ্যে ভারোত্তোলন এবং মোটর রেসিং তুর্কিদের খুবই প্রিয়। ভারোত্তোলনে তুর্কিরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা অলিম্পিক পদক ও ইউরোপিয়ান পদকও জিতেছে কয়েকবার।

কৃষিপ্রধান

বহু শতাব্দী ধরে তুরস্ক ছিল মূলত কৃষিপ্রধান একটি দেশ। বর্তমানে কৃষি খামার তুরস্কের অর্থনীতির একটি বড় অংশ এবং দেশের শ্রমশক্তির ৩৪% এই কাজে নিয়োজিত। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তুরস্কে শিল্প ও সেবাখাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, বিশেষত অর্থসংস্থান, পরিবহন, এবং পেশাদারী ও সরকারি সেবায়। অন্যদিকে কৃষির ভূমিকা হ্রাস পেয়েছে। টেক্সটাইল ও বস্ত্র শিল্প দেশের রপ্তানির প্রধান উৎস।অর্থনৈতিক রূপান্তরের সাথে সাথে নগরায়নের হারও অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তুরস্কের ৭৫% জনগণ শহরে বাস করে। ১৯৫০ সালেও মাত্র ২১% শহরে বাস করত। জনসংখ্যার ৯০% তুরস্কের এশীয় অংশে বাস করে। বাকী ১০% ইউরোপীয় অংশে বাস করে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল