সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুয়েত

 


পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত একটি দেশ যার উত্তর দিকে সৌদি আরব এবং উত্তর-পশ্চিমে ইরাক অবস্থিত। আরবের উত্তরাঞ্চলীয় পারস্য উপসাগরের প্রান্তে এর অবস্থান। কুয়েতের সরকারী নাম স্টেট অফ কুয়েত (দওলত আল কুয়েত)। কুয়েত হলো একটি সুন্দর গ্রীস্ম প্রধান আরব দেশ; দেশটি নয়টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত।

রাজধানীর নাম কুয়েত সিটি।

আয়তন ১৭ হাজার ৮১৮ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১৫২ তম দেশ।

জনসংখ্যাঃ ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী কুয়েতের মোট জনসংখ্যা ৪৩ লাখের কিছু বেশি। যার মধ্যে কুয়েতি ১৩ লাখ, বাকি ৩০ লাখ বিদেশী।অর্থাৎ কুয়েতের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই বিদেশী।

জাতিগোষ্ঠীআরব ৬০% , এশীয় ৩৭.৮% , আফ্রিকান ১.৯%।

ধর্ম কুয়েতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এবং খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৯ শতাংশ। বাকিরা অন্যান্য ধর্ম পালন করে।

ভাষাঃ আদর্শ আরবি ভাষা কুয়েতের সরকারি ভাষা। আদর্শ আরবি ভাষাটি ধ্রুপদী আরবি ভাষার একটি আধুনিকায়িত রূপ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে এখনও ধ্রুপদী আরবি ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য সমস্ত আনুষ্ঠানিক কাজকর্ম, শিক্ষা ও গণমাধ্যমে আদর্শ আরবি ভাষা ব্যবহৃত হয়। কুয়েতের জনগণের প্রায় ৮৫% ভাব মৌখিক আদান-প্রদানের জন্য উপসাগরীয় আরবি ভাষা ব্যবহার করেন। এছাড়া দক্ষিণী আরবি ভাষা মেহরিতেও কিছু কুয়েতি কথা বলেন। বিদেশী ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা বহুল প্রচলিত। ইংরেজিতে বেতার-টিভির অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।

কুয়েত জাতিসংঘে যোগদান করে ১৪ মে ১৯৬৩ সালে।

কুয়েতের সরকারী মুদ্রা কুয়েতি দিনার। ১ কুয়েতি দিনার সমান প্রায় ২৭৭ টাকা। কুয়েতের মুদ্রার দাম পৃথিবীর যেকোন দেশের চাইতে অনেক বেশি।

জাতিসংঘে যোগদান: ১৪ মে, ১৯৬৩ সালে।

ইতিহাস

১৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে কুয়েতের শহর আধুনিক কুয়েত শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রশাসকীয়ভাবে, এটি স্থানীয় শেখদের দ্বারা শাসিত একটি শেখান ছিল।১৭১৬ সালে, বানি উটব কুয়েতে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এই সময়ে কিছু জেলেরা বাস করতেন এবং প্রাথমিকভাবে মাছ ধরার গ্রাম হিসাবে পরিচিত ছিল।অষ্টাদশ শতাব্দীতে, কুয়েত উন্নতিগ্রস্ত এবং দ্রুত ভারত, মস্কাট, বাগদাদ এবং আরবের মধ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৭০০ এর দশকের মাঝামাঝি, কুয়েত ফার্সি উপসাগর থেকে আলেপ্পোর প্রধান বাণিজ্যিক পথ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

১৭৭৫-৭৯ সালে বাসার ফারসি অবরোধের সময়, ইরাকি ব্যবসায়ীরা কুয়েতে আশ্রয় নেয় এবং কুয়েতের নৌ-বিল্ডিং ও বাণিজ্য কার্যক্রম সম্প্রসারণে আংশিকভাবে সহায়ক হয়।ফলস্বরূপ, কুয়েতের সামুদ্রিক বাণিজ্য বেড়ে যায়, কারণ বাগদাদ, আলেপ্পো, স্মির্ণা এবং কনস্টান্টিনোপলের সাথে ভারতীয় বাণিজ্য রুট এই সময় কুয়েতের দিকে চলে যায়।ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিটি ১৭৯২ সালে কুয়েতের দিকে চলে যায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কুয়েত, ভারত এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূলগুলির মধ্যে সমুদ্রপথে সুরক্ষিত।১৭৭৯ সালে পারস্যরা বাসরা থেকে প্রত্যাহারের পর কুয়েত বাসরা থেকে বাণিজ্য আকর্ষণ করতে থাকে।

কুয়েত পার্সিয়ান উপসাগর অঞ্চলের নৌকা নির্মাণের কেন্দ্রস্থল ছিল।অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে কুয়েতে তৈরি জাহাজগুলি ভারত, পূর্ব আফ্রিকা এবং লাল সাগরের বন্দরগুলির মধ্যে প্রচুর বাণিজ্য বহন করে। কুয়েত জাহাজ সমগ্র ভারত মহাসাগর জুড়ে বিখ্যাত ছিল। আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ১৮ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কুয়েতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিল। সম্ভবত কুয়েতের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ হয়ে উঠার পক্ষে সবচেয়ে বড় অনুঘটক ১৮ শতকের শেষের দিকে বাসরা অস্থিতিশীলতার কারণ ছিল১৮ শতকের শেষের দিকে কুয়েত আংশিকভাবে বাসরার ব্যবসায়ীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করত, যারা অটোমান সরকারের অত্যাচার থেকে পালিয়ে এসেছিল। কুয়েতিরা পারস্য উপসাগরের সেরা নাবিক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। ১৮৯০-এর দশকে কুয়েত অটোমান সাম্রাজ্যের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হতে শুরু করে। তার নিরাপত্তা বিষয়ক সমস্যার সমাধান করার জন্য, তখনকার শাসক শেখ মুবারক আস সাবাহ ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, পরবর্তীকালে ১৮৯৯ সালের অ্যাংলো-কুয়েত চুক্তির নামে পরিচিত হন এবং ব্রিটিশ রক্ষাকর্তা হন। কুয়েতের শেখমান ১৮৯৯ সাল থেকে১৯৬১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ রক্ষাকারী ছিলেন।১৯৬১সালের জুন মাসে কুয়েত ব্রিটিশ রক্ষাকর্তার শেষের সাথে স্বাধীন হয়ে ওঠে এবং শেখ আব্দুল্লাহ আস-সালিম আস-সাবাহ কুয়েতের আমির হন। কুয়েতের জাতীয় দিবসটি ২৫ ফেব্রুয়ারি, শেখ আব্দুল্লাহ এর রাজত্বের বার্ষিকী উপলক্ষে উদযাপন করা হয় (এটি মূলত ১৯ জুন, স্বাধীনতার তারিখের উদযাপিত হয়েছিল, কিন্তু গ্রীষ্মের তাপের কারণে এটিকে সরানো হয়।নতুন খসড়া সংবিধানের শর্ত অনুযায়ী, কুয়েত ১৯৬৩ সালে তার প্রথম সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কুয়েত ফার্সি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রথম ছিল সংবিধান ও সংসদ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে কুয়েতকে এ অঞ্চলের সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কুয়েত তেল রপ্তানি থেকে দূরে তার আয় বৈচিত্র্যের মধ্য প্রাচ্যে অগ্রণী ছিল। কুয়েত একটি অর্ধগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক আমিরতন্ত্রের দেশ।একটি মিশ্র রাজনৈতিক ব্যবস্থা কুয়েতে নির্বাচিত সংসদীয় পদ্ধতি এবং নির্ধারিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে।কুয়েতের সংবিধান ১৯৬২ সালে প্রণীত হয়েছে। নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকারের দিক দিয়ে কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম উদার রাষ্ট্র।১৯৯০ সালে কুয়েত দখল করে নেয় ইরাক। আন্তর্জাতিক জোট বাহিনীর হস্তক্ষেপের পর ১৯৯১ সালে এই দখলদারিত্বের অবসান ঘটে। যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবারো অর্থনীতি এবং দেশের অবকাঠামো পুনর্গঠনে জোর তৎপরতা শুরু হয়। সরকার ব্যবস্থা পার্লামেন্ট।পার্লামেন্ট গঠিত হয় ভোটের মাধ্যমে। ২০০৫ সালের পর কুয়েতে মহিলাদের নির্বাচনের প্রতিদন্দ্বিতা করতে আইন পাশ হয়।

প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ

এইযুদ্ধপ্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ , পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধ বা কুয়েত যুদ্ধনামে পরিচিত। কুয়েত এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যেমন সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত একে কুয়েতের স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করে। ইরাকি সেনারা ১৯৯০ ২ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত দুইটার দিকে ইরাক তার তেলসমৃদ্ধ প্রতিবেশী দেশ কুয়েতে আক্রমণ করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুরো দেশটি দখল করে বসে। কুয়েতের আমির তার পরিবার সমেত সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ৮ই আগস্ট সাদ্দাম কুয়েতকে ইরাকের ১৯তম প্রদেশ বলে ঘোষণা করে। প্রদেশটির নাম দেয়া হয় আলকাজিম। পরের দিন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরাকের ওই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে। এ অবস্থায় সৌদি সরকারসহ পারস্য উপসাগরীয় অন্যান্য আরব সরকারগুলো ইরাকি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সেনা সমাবেশের আহ্বান জানায়। আরব লিগও এক প্রস্তাব পাশ করে ওই আহবানে সাড়া দেয়।

এভাবে সাদ্দাম সরকারের বিরুদ্ধে আরব সরকারগুলোর একটি জোট গড়ে ওঠে মার্কিন সরকারের নেতৃত্বে। ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসের শেষ প্রান্তে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মার্কিন সরকারের চাপের মুখে ৬৭৮ নম্বর প্রস্তাব পাস করে। ওই প্রস্তাবে কুয়েতকে ইরাকের দখলমুক্ত করার জন্য বল প্রয়োগের আশ্রয় নেয়া বৈধ বলে উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টজর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ সৌদি আরবে সেনা মোতায়েন করেন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোকেও তাদের সেনা পাঠাতে অনুরোধ করেন।১৯৯১ সালের ১৭ ই জানুয়ারি আমেরিকার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক জোট ইরাক ও কুয়েতে বিমান হামলা শুরু করে। কুয়েত মুক্ত করার কথিত ওই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল 'ডেজার্ট স্টর্ম বা মরুভূমির ঝড়'বিমান হামলায় ব্যবহার করা হয় দুই হাজার ৯০০টি জঙ্গি বিমান। ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ইরাকি লক্ষ্যবস্তুগুলোতে হামলা চালাতে ১২ হাজার উড্ডয়ন চালায় এইসব জঙ্গি বিমান।৩৮ দিন ধরে বিমান হামলা চালানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশের নির্দেশে ১৯৯১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি স্থল অভিযান শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট। কুয়েত থেকে ইরাকি সেনা তাড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত এ অভিযানের নাম দেয়া হয় মরুভূমির তরবারি বা ডেজার্ট সোর্ড। মাত্র চার দিনেই কুয়েতকে ইরাকি সেনাদের হাত থেকে মুক্ত করে বহুজাতিক বাহিনী। ইরাক ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমস্ত প্রস্তাবগুলো মেনে নিয়ে যুদ্ধ-বিরতিতে সম্মত হয়। ইরাকের এই আগ্রাসন স্থায়ী ছিল সাত মাস। ইরাকের এই যুদ্ধে ১০০০ কুয়েতি নাগরিকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রায় চার লক্ষ মানুষ কুয়েত ছেড়ে চলে যায়। তাদের অনেকেই সৌদি আরব সহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়। এই যুদ্ধে ১৪৮ জন মার্কিন সেনা, ১০০ জন মিত্রবাহিনীর সেনা এবং ২৫,০০০ ইরাকি সৈন্য মৃত্যুবরণ করে। মিত্রবাহিনী পরিচালিত অপেরাশন ডেজার্ট স্টর্মের ফলে প্রায় ১,০০,০০০ ইরাকি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে সাদ্দাম হুসাইন ইরাকের কুয়েত আগ্রাসনকে বড় ভুল ছিল বলে স্বীকার করেন।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

কুয়েতে ৬টি প্রশাসনিক অঞ্চল ও ১১টি জেলা রয়েছে।

অর্থনীতি

কুয়েতের অর্থনীতি হচ্ছে একটি ছোট পেট্রোলিয়ামভিত্তিক অর্থনীতি। পানি পাওয়া যায় না। মাটির নিচে যা পাওয়া যায় তা হলো তেল। কুয়েতের অর্থনীতিতে প্রায় ৯০ শতাংশ আয়ই আসে এই তেল সম্পদ থেকে।কুয়েতি দিনার বিশ্বের মুদ্রাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যবান একক। অ-পেট্রোলিয়াম শিল্প আর্থিক সেবা খাতে অন্তর্ভুক্ত।বিশ্বব্যাংকের মতে মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে কুয়েত বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশ। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে কুয়েত জিসিসি দেশেগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় ধনী দেশ (কাতারের পরে)।

যোগাযোগব্যবস্থা

কুয়েত এয়ারওয়েজ হচ্ছে কুয়েতের জাতীয় বিমান সংস্থা৷ বিমান সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় আল ফারয়ানিয়াহ গভমোরেট এর কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত৷ কুয়েত এয়ারওয়েজ এর প্রধান কেন্দ্র কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইউরোপ, দক্ষিন পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিন আমেরিকায় এর বিমানসমূহ পরিচালনা করে থাকে৷ কুয়েত এয়ারওয়েজ আরব এয়ার ক্যারিয়ার্স অর্গানাইজেশন এর একজন সদস্য৷

বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে কুয়েত অত্যন্ত শক্তিশালী। কুয়েতে প্রথম তেলের খনি পওয়া যায় ১৯৩৮ সালে। বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ তেলের মজুদ রয়েছে দেশটিতে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার মধ্যে কুয়েতি দিনার অন্যতম। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে পঞ্চম অবস্থান তাদের। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় অপেরা হাউসের অবস্থানও এই দেশটিতেই। এ কারণে কুয়েতকে ‘উপসাগরের হলিউড’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। দেশটি পৃথিবীর অন্যান্য অর্থশালী দেশগুলোর থেকে আকৃতিতে ছোট হলেও কুয়েতের কারেন্সি কুয়েতি দিনার যার মূল্য বর্তমানে সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি। একটি কুয়েতি দিনারের মূল্য তিন আমেরিকান ডলারের থেকেও বেশি।কুয়েতের বেশির ভাগ মানুষ কোটিপতি।

আইন

কুয়েতের আইনব্যবস্থা অন্যান্য ইসলামিক দেশগুলির মত নয়। এই দেশের আইনি ব্যবস্থাকে বলা হয় civil law system যা ফ্রান্সের অনুকরণে বানানো হয়েছে।কুয়েতে মাদক দ্রব্য কেনা-বেচাতে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।এখানে রমজান মাসে পাবলিক প্লেসে খাওয়া-দাওয়া এবং জোরে গান বাজিয়ে পার্টি করা পুরোপুরি নিষেধ।

আপনি জেনে অবাক হবেন, কুয়েতের কোন রাষ্ট্রীয় সংগীত কোন শব্দ নেই। এটি এমন একটি দেশ যেখানে কোন রেললাইন নেই। এটি একইসাথে বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে কোনও প্রাকৃতিক জলাশয় নেইএখানকার মানুষ সমুদ্রের নোনা জলকে পান যোগ্য করে তোলে, এতে প্রচুর পরিমাণে টাকাও খরচা হয়। পানযোগ্য পানির অপ্রতুলতায় এখানে অপরিশোধিত পানিকে ওয়াটার ডি নাইজেশন পদ্ধতিতে পরিশোধন করে পানযোগ্য করা হয় এবং সেই পানিই এখানকার জনগন পান করে থাকে।

দেশটিতে চাষবাস হয়না বললেই চলে। কারণ মাত্র ১% চাষ যোগ্য জমি আছে এখানে।কুয়েতেই আরব বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ সাক্ষরতার হার বিদ্যমান। দেশটিতে সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৫ শতাংশ। কুয়েতে দুইটি বিমানবন্দর আছে। এদের মধ্যে কুয়েত ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট দেশটির প্রধান বিমানবন্দর।

দেশটির পর্যটন খাতও দিনকে দিন উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে কুয়েতের মোট জিডীপির প্রায় ১.৫ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে।কুয়েতে ৩৬৩ টিরও বেশি প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ১৮ প্রজাতির পাখি শুধুমাত্র এদেশেই পাওয়া যায়।যেমনটি আগেই বলেছি, দেশটির প্রধান আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে তেল শিল্প।

 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...