ইরাক ধ্বংসের খলনায়কের নীরব প্রস্থান
ইরাক যুদ্ধের রূপকার কলিন পাওয়েল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮৪ বছর বয়সে মারা গেছেন।কলিন পাওয়েল ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশ শতকের শেষ দিকে ও একুশ শতকের প্রথম ভাগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে ভূমিকা ছিল তাঁর। কলিন পাওয়েল আমেরিকান সেনাবাহিনীর হয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের বিজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়তা বাড়ে তার। কুয়েতে সাদ্দামের হামলার পাঁচ মাস পর সংঘটিত উপসাগরীয় যুদ্ধে ছয় সপ্তাহব্যাপী ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’ পরিচালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র জর্জ বুশ প্রশাসনের এ হামলায় এক লাখ ৩০ হাজার থেকে এক লাখ ৮০ হাজার ইরাকি মারা যায়।
এরপর সাদ্দামের সেনাবাহিনী কুয়েত থেকে প্রত্যাহার করা হলেও ইরাকিরা দীর্ঘ ১২ বছর মার্কিনীদের নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকে। এর কিছু আজও কার্যকর রয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে।
অপারেশন ডেজার্ট স্টর্মের সময় কলিন পাওয়েল জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ ছিল।নাইন ইলেভেন হামলার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ডের মত কট্টরপন্থীদের সাথে তার মতবাদের বিরোধ বাঁধে। মি. রামসফেল্ড ইরাকে হামলা চালানোর পক্ষে ছিলেন- এমনকি যদি অন্য কোন দেশ আমেরিকাকে সমর্থন না করে তাহলেও- যে যুদ্ধ পরিচিতি পেয়েছেল "ওয়ার অন টেরর" বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নামে।কলিন পাওয়েল শেষ পর্যন্ত ওই যুদ্ধে জর্জ ডাব্লিউ বুশকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনিই ২০০৩ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাঁড়িয়ে এই যুদ্ধের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।আঠারো মাসের মধ্যে সাদ্দাম হুসেনের পতন ঘটে। মি. পাওয়েল তখন স্বীকার করেন যে, ইরাকী নেতার হাতে "ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রসম্ভার" থাকার ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য ভুল ছিল।এরপর তিনি ২০০৪ সালের ১৫ই নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে এবং তার স্থলাভিষিক্ত হয় কনডোলিজা রাইস। পাওয়েলের ফাঁদা মিথ্যা গল্প ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পথ অনেকটাই সুগম করে বলে ধারণা অনেকের। সেই সঙ্গে ইরাকিদের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। আর সেই কারণেই কলিন পাওয়েল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছে যতটা না ‘সুপার হিরো’, ইরাকিদের কাছে ঠিক ততটাই ‘ভিলেন’ বা খলনায়ক।তবে মারা যাওয়ার অনেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক চার তারকা জেনারেল পাওয়েল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরার বিষয়ে অনুশোচনা করেছেন ঠিকই। ২০১১ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ইরাকে আগ্রাসন চালানোর বিষয়ে ভুয়া গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করার জন্য তিনি এখন অনুতপ্ত। এটাকে তাঁর পেশাজীবনে ‘বড় কলঙ্ক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেছিলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া অনেক তথ্যই ভুল ছিল।ইরাকিরাও পাওয়েলকে স্মরণ করবেন, তবে বীর হিসেবে নন, একজন মিথ্যুক হিসেবে। তাঁরা মনে করেন, ইরাকে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার পেছনে কলকাঠি নাড়ানো ব্যক্তিদের একজন পাওয়েল। হাজার হাজার ইরাকির জীবন তছনছ করে দেওয়ার জন্য তিনি দায়ী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন