বারকিনা ফাসো
বারকিনা ফাসো পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ
।এই দেশটির সংক্ষিপ্ত নাম হল বারকিনা। খ্রিস্টানশাসিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ
বুরকিনা ফাসো। উত্তরে ও পশ্চিমে মালি,
পূর্বে
নাইজার, এবং দক্ষিণে বেনিন, টোগো, ঘানা ও আইভরি কোস্ট। এটি একটি ভূমিবেষ্টিত
রাষ্ট্র।
রাজধানী: উয়াগাদুগু।
আয়তন: ২ লক্ষ ৭৪ হাজার বর্গকিলোমিটার।
জাতিগোষ্ঠীঃ মোসসি, গুরুনসি, সেনুফো ,লোদি ,বুবো, মান্দে ,ফুলানি ।
জনসংখ্যা: ১,৭০,০০,০০০ জন।
ধর্ম: ৬০ ভাগ লোক সুন্নি মুসলিম, ২৩ ভাগ খ্রিস্টান, ১৫ ভাগ আদিবাসী এবং বাকি ২ ভাগ অন্যান্য
সম্প্রদায়ের।
ভাষা
দাপ্তরিক ভাষা ফরাসি হলেও দেশটির বেশির
ভাগ লোকই মোরে ভাষায় কথা বলে। এ অঞ্চলের গোড়াপত্তনকারী মোসি জাতির নিজস্ব ভাষা
এটি। সংখ্যায় এরা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হলেও আরো বিভিন্ন গোষ্ঠী-ভাষা এখানে
বিদ্যমান।
বুর্কিনা ফাসোর মুদ্রার নাম সিএফএ ফ্রঁ
জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ: ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৬০ সালে।
দেশটির নামকরণ-
বারকিনা ফাসোয় বসবাসকারী দুটি প্রধান
আদিবাসীদের ভাষা থেকে একটি করে শব্দ নিয়ে দেশটির নামকরণ করা হয়েছে। বারকিনা শব্দটি
মুরি ভাষা থেকে এবং ফাসো শব্দটি দিওলি ভাষা । মুরিদের বারকিনা অর্থ ইনটিগ্রিটি বা
সততা আর দিওলাদের ফাসো অর্থ ফাদারল্যান্ড বা পিতৃভূমি। এইভাবে বারকিনা ফাসো শব্দের
অর্থ দাঁড়িয়েছে ল্যান্ড অব অনেস্ট পিউপিল বা যার অর্থ নৈতিক জাতির দেশ।বারকিনা
ফাসোর অধিবাসীরা বারকিনেবি নামে পরিচিত।
ইতিহাস
যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগে ১৪০০০ থেকে ৫০০০
এর মধ্যে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শিকারিরা পশু শিকার করতে যেত। ৩৬০০-২৬০০
খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেখানে আস্তে আস্তে মানুষের বসতি গড়ে ওঠে। সেটাই বর্তমানে
বারকিনা ফাসোর কেন্দ্রস্থল মোজি রাজ্য। এই মোজি সাম্রাজ্য ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত
ফ্রান্সের অধীনে ছিল। ১৯৬০ সালে দেশটি ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।সে দেশের
মানুষ একসময় হাতুড়ি, বাটালি,
শর, বল্লম দিয়ে পশু শিকার করে বেড়াত। আস্তে আস্তে
তারা কৃষিকাজ করে ফসল ফলাতে শিখেছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে তারা লোহা, সিরামিক, পোলিশ স্টোন ব্যবহার করতে শিখেছে। সেই
দেশের মানুষ এখন উন্নতির শিখরে উঠতে শুরু করেছে।
আফ্রিকার একটি আদিবাসীর নাম দগোন।
আফ্রিকার পশ্চিম দিকে মালির মালভূমির কেন্দ্রীয় এলাকায়, দক্ষিণে নাইজারের ঢালে বান্দিয়াগারা শহরের কাছে মপতি এলাকায় এবং বারকিনা
ফাসোতে দগোনদের বাস। চার থেকে আট লাখ দগোনের বাস সেখানে। দগোনরা বিশেষভাবে পরিচিত
তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের জন্য। তাদের বিশেষ মাস্ক নৃত্য, কাঠের মুর্তি এবং বিশেষ কারুকাজের জন্য এরা বিশেষভাবে পরিচিত। বিগত
শতাব্দিতে সামাজিক সংগঠন, শিল্প সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের জন্য
দগোনভূমি পর্যটকদের বেশ আকর্ষণ করেছে। বারকিনা ফাসোর মধ্যবর্তী এলাকায় ওয়াগাডুগো
এবং ওয়াতিংগার মোজি সাম্রাজ্যটি বেশ সমৃদ্ধ। ষোড়শ শতাব্দির শুরু থেকে এই দেশটির
উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে।
বুরকিনা ফাসোর মোসসি জাতির লোকেরা বহু
শতাব্দী আগে এখানে যে রাজ্য স্থাপন করেছিল,
তা ছিল
আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীন রাজ্যগুলির একটি। দেশটি১৯৫১ সালের আগস্ট মাসের পূর্বে
আপার ভোল্টা নামে পরিচিত ছিল। পূর্বে এই স্থলবেষ্টিত দেশ ফরাসি পশ্চিম আফ্রিকার একটি
অঙ্গ ছিল । ১৯৬০সালে ৫ আগস্ট তারিখে দেশটি ফ্রান্সের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
স্বাধীনতা লাভের পর দেশটিতে বারংবার সামরিক অভ্যুথান বা কু (coup) ঘটে এবং সামরিক শাসন চলে। ১৯৯১ সালে নতুন সংবিধান পাস হবার পর দেশটিতে
বর্তমানে গণতন্ত্র বিদ্যমান।
ইসলামের আগমন
ইসলামের প্রথম যুগেই বুরকিনা ফাসোতে
ইসলামের আগমন ঘটে। তখন অবশ্য এটি আলাদা ভূখণ্ড ছিল না। বরং ঘানার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে এ অঞ্চলের ইসলামের ইতিহাস। তাই বুরকিনা
ফাসোতে ইসলামের আগমনে তিনটি পর্যায়ের কথা ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন।প্রথম পর্যায় :
৬৪০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দ। মিসরসহ উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো জয় করার পর মুসলিম
সেনাবাহিনী পশ্চিম আফ্রিকার দিকে অগ্রসর হয়। রোমান সৈন্যদের পরাজিত করে তারা এ
অঞ্চলে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেন। রোম সাম্রাজ্যের সহযোগী স্থানীয়
জাতিগোষ্ঠী বিশেষত বার্বার জাতির পরাজয়ও নিশ্চিত হয় এ যুদ্ধে। তবে বার্বার জাতির
ইসলাম গ্রহণের আশায় মুসলমানরা তাদের সঙ্গে সন্ধি করে নেয়।দ্বিতীয় পর্যায় :দশম
শতাব্দীর শেষের দিকে বার্বার জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান, রোমান সৈন্যদের আক্রমণ এবং মরক্কোর শাসকদের ষড়যন্ত্রের কারণে এ অঞ্চলে ইসলামের
অগ্রযাত্রা থেমে যায়। তবে একাদশ শতকে মুরাবিতিন তথা আফ্রিকান মুসলিমদের সম্মিলিত
প্রয়াসে বার্বার জাতির একটি বড় অংশ ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত তাদের
হাতেই এ অঞ্চলে ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বার্বার জাতি ১০৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঘানার শাসকদের পরাজিত করে ক্ষমতা হাতে নেয়।
ফলে তাদের মাধ্যমে অনেক মানুষই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। তৃতীয় পর্যায় :
অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ইসলামী ব্যক্তিত্বদের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইসলামের
পুনরুত্থান ঘটে। আফ্রিকার অনেক মুসলিম শাইখ ও দাঈ এখানে ইসলামের পুনর্জাগরণে
মনোযোগী হন। তাঁদের মধ্যে শাইখ উসমান ডানফোডিয়ো,
মুহাম্মদ
আমিন কানিমি, হাজি উমর ইবনে ইদরিস, মুহাম্মদ আল-মাহদির নাম বুরকিনা ফাসোসহ পশ্চিম আফ্রিকার ইসলামের ইতিহাসে
সোনালি হরফে লেখা থাকবে।
প্রশাসনিক অঞ্চল
বুর্কিনা ফাসো প্রশাসনিকভাবে বেশ কিছু অঞ্চলে
বিভক্ত। প্রতিটি রেজিওঁ আবার কিছু প্রদেশে বিভক্ত। প্রদেশগুলি একইভাবে কিছু জেলায়
বিভক্ত। প্রতিটি রেজিওঁ একজন গভর্নর এবং প্রতিটি প্রোভঁস একজন উচ্চ-কমিশনার দ্বারা
শাসিত হয়।
নদ-নদী ও জলাশয়
মালভূমিটিকে গভীরে চিরে দেশটির তিনটি
প্রধান নদী প্রবাহিত হচ্ছে - মুওঁ বা কালো ভল্টা,
নাজিনোঁ বা
লাল ভোল্টা এবং নাকাম্বে বা শ্বেত ভোল্টা। এই তিনটি নদীই দক্ষিণে ঘানাতে গিয়ে
মিলিত হয়ে ভোল্টা নদী গঠন করেছে। ভোল্টা নদীর আরেকটি উপনদী ওতি নদী বুর্কিনা
ফাসোর দক্ষিণ-পূর্বে উৎপত্তি লাভ করেছে। ঋতুভেদে নদীগুলির জলপ্রবাহে ব্যাপক তারতম্য
ঘটে। শুস্ক মৌসুমে অনেক নদীই পুরোপুরি শুকিয়ে যায়।
উদ্ভিদ ও প্রাণী
বুর্কিনা ফাসোর উত্তর অংশে সাভানা তৃণভূমি
অবস্থিত, যেখানে কাঁটাময় ঝোপঝাড় এবং বামনবৃক্ষ
দেখতে পাওয়া যায়; এগুলি মূলত বর্ষা মৌসুমে জন্মায় ও বৃদ্ধি
পায়। দক্ষিণের দিকে এগোলে ঝোপঝাড়ের বদলে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন বনভূমির আবির্ভাব
ঘটে এবং এই বনভূমিগুলি চিরপ্রবহমান নদীগুলির তীরে আরও ঘন আকার ধারণ করে। ক্যারাইট
বা শেয়া বৃক্ষ এবং বাওবাব বা হিবিস্কাস বৃক্ষ এই অঞ্চলের স্বজাত উদ্ভিদ।প্রাণীর
মধ্যে মহিষ, কৃষ্ণশার হরিণ, সিংহ, জলহস্তী,
হাতি, কুমির ও বানরের দেখা মেলে। পাখী ও কীটপতঙ্গগুলি সমৃদ্ধ ও বিচিত্র।
নদীগুলিতে বহু প্রজাতির মাছ রয়েছে। দেশেটিতে অনেক জাতীয় উদ্যান আছে যার মধ্যে
দক্ষিণ-মধ্য অংশে অবস্থিত "পো",
দক্ষিণ-পূর্বে
"আর্লি" এবং পূর্বে বেনিন-নাইজার সীমান্তে অবস্থিত "উয়"
উদ্যান উল্লেখযোগ্য।
কৃষি
খরা ও দুর্ভিক্ষের কারণে প্রতিবছর হাজার
হাজার লোক প্রতিবেশী ঘানা, আইভরি কোস্টসহ অন্যান্য দেশে পাড়ি জমায়।
নয়-দশমাংশ লোকই এখানে কৃষিকাজ ও গবাদি পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে।কৃষিকাজ
মূলত খাদ্যশস্য উৎপাদনে নিয়োজিত। উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য অর্থকরী শস্য হিসেবে বিক্রি
করা হয়। উওৃত্ত তুলা, শেয়া বাদাম, তিসি এবং আখ রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে সোরগোম, জোয়ার, ভুট্টা,
চিনাবাদাম
এবং ধান স্থানীয় ভোগের জন্য উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও ফোনিও নামের এক ধরনের ঘাস, যার বিজদানাগুলি খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কাসাভা, মিষ্টি আলু এবং শীম জাতীয় বীচিও চাষ করা
হয়। পশুপালন জীবিকার অন্যতম উৎস। গবাদি পশু,
ভেড়া, শূকর, গাধা,
ঘোড়া, উট, মুরগী,
হাঁস ও
গিনি মুরগী পালন করা হয়।
প্রাকৃতিক সম্পদ
বুর্কিনা ফাসোতে বেশ কিছু খনিজের সন্ধান
মেলে, যাদের মধ্যে ম্যাঙ্গানিজ এবং স্বর্ণ
অন্যতম। এগুলি দেশটির সম্পদের অন্যতম সম্ভাব্য উৎস। কুদুগু শহরের দক্ষিণ-পুর্বে
পুরা শহরে স্বর্ণখনি আছে। এছাড়া দেশের উত্তরে সেব্বা এবং দোরি-ইয়লোগোতে
তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র আয়তনের স্বর্ণমজুদ আছে। এছাড়াও দেশটিতে নিকেল, বক্সাইট, দস্তা,
সীসা এবং
রূপার মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে। উত্তর-পূর্বে তামবাও শহরের কাছে অবস্থিত
ম্যাঙ্গানিজের যে বিশাল মজুদ আছে, সেটি
সম্ভবত দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এটি সারা বিশ্বেই ম্যাঙ্গানিজের
সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাণ্ডারগুলির একটি। তবে বিদ্যমান পরিবহন ব্যবস্থার অকার্যকারিতার
কারণে এটি উত্তোলন-নিষ্কাশন এখনও সীমিত।
বাণিজ্য
২১শ শতকে এসে বুর্কিনা ফাসো মূলত তুলা, স্বর্ণ, গবাদি পশু,
চিনি এবং
ফল রপ্তানি করছে। বেশিরভাগ দ্রব্যই পার্শ্ববর্তী আফ্রিকান দেশগুলিতে রপ্তানি করা
হয়। তবে কিছু কিছু পণ্য, যেমন তুলা এবং খনিজ পদার্থসমূহ চীন, সিংগাপুর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে রপ্তানি হয়। আমদানিকৃত প্রধান
পণ্যগুলি হল পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি এবং খাদ্যদ্রব্য। এগুলি মূলত পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ এবং ফ্রান্স
থেকে আমদানি করা হয়।
আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম বলে দেশটির
পরিশোধন-বিবরণীতে (balance of payments) ঘাটতি আছে।
রপ্তানিকৃত দ্রব্যের অর্থমূল্য ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আমদানি করা
দ্রব্যের অর্থমূল্যের জন্য যথেষ্ট নয় বলে এমনটি ঘটেছে।
মুসলমানদের হালচাল
১৯১৯ সালে বুরকিনা ফাসো ফ্রান্সের
উপনিবেশে পরিণত হলে মুসলমানদের পতন হয়। রাজনীতি ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে পড়ে
তারা। ষাটের দশকে ফ্রান্স দেশ ছাড়লেও এ দেশের মুসলমানদের ভাগ্যোন্নয়ন হয়নি। মোট
জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তারা সংখ্যালঘু খ্রিস্টান শাসকগোষ্ঠীর
করতলে শাসিত ও নির্যাতিত হয়ে আসছে। উপনিবেশকাল থেকে সরকারি স্কুলগুলোতে ফরাসি কৃষ্টি-কালচার
পাঠ্য হওয়ায় মুসলমানরা তা থেকে দূরে থাকে। ফলে খ্রিস্টানরা দখল করে নেয় প্রশাসন, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ময়দান।
প্রাচীনকাল থেকে বুরকিনা ফাসোতে গ্রাম্য
মক্তবভিত্তিক ধর্মশিক্ষা চালু ছিল। উপনিবেশকালে সরকারি স্কুলের বিকল্প হিসেবে
মুসলমানরা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে এ দুটি শিক্ষাব্যবস্থাই চালু আছে। তবে
মক্তবভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় স্থানীয় ভাষায় কোরআন-হাদিস ও ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা
দেন প্রথাগত ধর্মশিক্ষকরা। পক্ষান্তরে মাদরাসাগুলোতে আরবি ভাষা শেখানোর মাধ্যমে
ইসলামের উৎস-জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত করানো হয়। তবে
দারিদ্র্যের কারণে এ দেশের মানুষ লেখাপড়ার তেমন সুযোগ পায় না। সাম্প্রতিককালে
অল্পসংখ্যক মুসলিম তরুণ মাদরাসাগুলো থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর শেষ করে আরববিশ্বে
উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন। ফলে মুসলমানদের ধর্ম শিক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ
হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় মিডিয়াগুলোতেও ইসলামী শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে।
আকিদা-বিশ্বাসে বুরকিনা ফাসোর মুসলমানরা
শতভাগ সুন্নি। অবশ্য সঠিক জ্ঞানের অভাবে ধর্মীয় কুসংস্কারও আছে অনেকের মধ্যে।
মুসলমানদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো বহুধা বিভক্ত। প্রত্যেক দলই অবশ্য মুসলিম
সরকার ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
মিশনারির দৌরাত্ম্য
দারিদ্র্য-মন্দার দেশ বুরকিনা ফাসোর
মুসলমানরা সামাজিকভাবে অনেকটাই কোণঠাসা। মসজিদ নির্মাণ করতে চাইলেও মিশনারিগুলো
বাধা সৃষ্টি করে। খ্রিস্টান সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় দেশজুড়ে তারা খুবই শক্তিশালী
অবস্থানে আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের যেন কোনো অধিকারই নেই! মুসলমানদের
দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের ঈমান-আমল ধ্বংস করার কাজে মিশনারিগুলো বেশ তৎপর।
দেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যেও তাদের একচেটিয়া আধিপত্য। মুসলমানদের
খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ১৯৮৪ সালে
দেশটির নাম আপার ভোল্টা থেকে বুরকিনা ফাসো করা হয়। এর অর্থ হলো নৈতিক জাতি তথা
খ্রিস্টানদের দেশ।
মিশনারি স্কুলগুলোতে ছাত্রদের খাবার, পোশাকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়। ফলে
দারিদ্র্যের কশাঘাতে পিষ্ট মুসলিম সন্তানরাও সেখানে ভর্তি হতে বাধ্য হয়।
স্কুলগুলোতে ভর্তির পূর্বশর্তই হলো মুসলিম নাম বাদ দিয়ে খ্রিস্টান নাম গ্রহণ করা।
সেসব স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে মুসলমানদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি
সখ্য বাড়ছে।
কেউ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে তার জন্য
সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। তার শিক্ষা,
স্বাস্থ্য, চাকরি—সবই মিশনারির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। তা ছাড়া ইসলাম সম্পর্কে তাদের
নানাভাবে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ইসলামের বদনাম করে খ্রিস্টধর্মের মহত্ত্ব তাদের
সামনে তুলে ধরা হয়।
আরো ভয়ংকর তথ্য হলো, বিশ শতকের শেষের দিকে বুরকিনা ফাসোতে সেবাপ্রতিষ্ঠানের ব্যানারে কাদিয়ানিরা
পদার্পণ করে। ইসলামের কথা বলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তারাও মিশনারির মতো অসহায়
মুসলমানদের কথিত ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাতে’ নাম লেখাচ্ছে।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মুসলিম দাতব্য
প্রতিষ্ঠান বুরকিনা ফাসোতে কাজ করছে। তবে তা নিতান্তই নগণ্য। মুসলমানদের
ঈমান-আকিদা, স্বাস্থ্য,
শিক্ষা ও
স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে এখানে মুসলিম দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক
অবদান রাখতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন