সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খালেদ মেশাল আরব বিশ্বের মুকুটবিহীন সম্রাট




মো.আবু রায়হান
খালেদ মেশাল একজন শীর্ষ স্থানীয় হামাস নেতা।হামাসের পলিট ব্যুরোর প্রধান তিনি । মেশাল ১৯৫৬ সালে জর্ডানের অধিকৃত পশ্চিম তীরের সিলওয়াডে ২৮ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। [তিনি সিলওয়াড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তার বাবা আব্দুল কাদির মেশাল, একজন কৃষক ছিলেন এবং ১৯৫৭ সালে কুয়েতে যান । সেখানে কৃষি কাজ এবং ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফিলিস্তিনি গেরিলা নেতা আবদ আল-কাদির আল-হুসাইনির সাথে ১৯৩৬-১৯৩৯ আরব বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিলেন।ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে পশ্চিমতীর জবরদখল করলে সপরিবারে পশ্চিমতীর ত্যাগ করতে বাধ্য হন মেশাল।১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধের সময় থেকে তিনি নির্বাসনে রয়েছেন। এরপর কখনো জর্ডানে, কখনো সিরিয়ায় আবার কখনোবা কাতারে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।The Six-Day War in 1967 forced Mashal's family to flee the West Bank and he has since then lived in other parts of the Arab world exile. For that reason, he was considered part of Hamas' "external leadership."দীর্ঘ ৪৫ বছর নির্বাসন জীপন যাপন শেষে ২০১২ সালে তিনি ফিলিস্থিনে ফেরেন।১৯৬৭ সালের ৬দিনের যুদ্ধ শেষে সেই যে তিনি ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন , এই গত দীর্ঘ সময়ে এর আগে আর কখনোই খালেদ মেশাল ফিলিস্তিনী ভূখন্ডে ফেরেননি । পৌঁছুনোর পর পরই ফিলিস্তিনের মাটিতে চুমু খান তিনি – বন্ধূবান্ধব-হামাস নেতৃবৃন্দকে উষ্ন আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেছেন আগ্রহভরে ।
১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠার পর, খালেদ মেশাল সংগঠনের কুয়েত শাখার নেতা হন। ১৯৯২ সালে, তিনি হামাসের পলিটব্যুরোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং এর চেয়ারম্যান হন। ২০০৪ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিন এবং তার উত্তরসূরি আবদেল আজিজ আল-রান্তিসিকে হত্যার পর তিনি হামাসের প্রধান হন। ২০১৬ সালের শেষ দিকেই হামাসের রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবে খালেদ মেশালের মেয়াদ শেষ হয়েছিল।২০১৭ সালে ইসমাইল হানিয়া গাজা ভিত্তিক ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হলে হামাসের খালেদ মেশালকে সংগঠনটির পরামর্শক পরিষদের প্রধান করা হয়।
এরদোগান-মেশালের বৈঠক
১৯৯৭ সালে জর্দানে এক ইসরাইলী হত্যা প্রচেষ্টা থেকে এই হামাস নেতা বেঁচে যান।ইসরায়েলি গুপ্তচররা ১৯৯৭ সালে জর্দানে হামাসের নেতা খালেদ মেশালকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে ত্রাসসৃষ্টিকারী গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা হয়ে ওঠে এক বড়ধরনের কূটনৈতিক কেলেঙ্কারি এবং মোসাদের তৎকালীন প্রধান ড্যানি ইয়াটমকে সরে দাঁড়াতে হয় তার পদ থেকে ।কঠোর সমালোচনার মুখে এক সপ্তাহ পরে প্রচারিত হয় তার পদত্যাগের খবর। ইসরায়েলী বিশ্লেষকরা জর্দানে ওই হামলাকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে ব্যাখ্যা করেছেন।সংবাদ মাধ্যমে খবর হয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বয়ং নাকি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ মেশাল জর্ডানের আম্মানে হামাসের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় দু’জন ইসরায়েলি গুপ্তচর তার কানে কোনো বিষাক্ত পদার্থ স্প্রে করে৷ মেশাল অক্ষতই থাকেন এবং পরে ঐ দুজন ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ধরাও সম্ভব হয়৷তার উপর প্রয়োগ করা রাসায়নিকটি ছিল ফ্যান্টানিল, যা মরফিনের চেয়ে দু'শগুন বেশি শক্তিশালী। মোসাদ প্রধান ড্যানি ইয়াটম বলেন, “অভিযানের আগে আমি প্রার্থনা করছিলাম খালেদ মেশালের মৃত্যু চেয়ে। কিন্তু যখন অপারেশন ব্যর্থ হলো, তখন আমিই আবার প্রার্থনা করছিলাম যে মেশাল যেন কোনমতেই না মারা যায়!"পাঁচজন মোসাদ এজেন্টের বিনিময়ে ইসরাইল ৬১ জন জর্ডান ও ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে ছিলেন শেখ আহমদ ইয়াসিন, যাকে বলা হয় ইসরাইলের সবচেয়ে ঘৃণিত শত্রু। হামলার পাঁচদিন পর আহমদ ইয়াসিনকে জর্ডানে পৌঁছে দেওয়া হয়। আহমদ ইয়াসিন ও আরো বেশ কিছু হামাস নেতার মুক্তির ফলে হামাস নতুন করে উজ্জীবিত হয়। সেই সাথে মেশালও হয়ে ওঠেন নতুন নায়ক।
১৯৯৯ সালে জর্দানের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ হামাসের তিন শীর্ষ নেতাসহ খালেদ মেশালকে বহিষ্কার করে এবং জর্দানে অবস্থান করা হামাস নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দমনাভিযান শুরু করে।২০১২ সালে খালেদ মেশাল ঐতিহাসিক রাষ্ট্রীয় সফরে জর্দানের রাজধানী আম্মানে যান। ১৯৯৯ সালে জর্দানের তৎকালীন সরকার খালেদ মেশালকে বহিষ্কারের পর দেশটিতে রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে কোনো হামাস নেতার প্রথম সফর এটি।
সিরিয়াতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সাথে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি সিরিয়া ত্যাগ করেন।মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে তিনি প্রধান শত্রু ইসরাইলের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হন। তিনি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও হামাসের বিবাদ মিটিয়ে ফেলার ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।বর্তমানে তিনি কাতারে অবস্থান করছেন ।২০১৪ সালে সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন , আপনি গাজায় না থেকে কাতারে অবস্থান করছেন কেন?মেশাল বলেন, এটি অত্যন্ত যৌক্তিক প্রশ্ন। আপনি শুধু খালেদ মেশালকেই নন, ভিনদেশে বসবাসরত ৬০ লাখ ফিলিস্তিনিকে এ কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন। কেন তারা পশ্চিম তীরে অবস্থান করছে না? কেন তারা গাজায় বসবাস করছে না? কারণ, সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালে বের করে দিয়েছে ইসরায়েল। আমি পশ্চিম তীর থেকে এসেছি। সেই ১৯৬৭ সাল থেকে আমি বিতাড়িত। জর্ডান ও কুয়েতে থেকেছি, যখন ছাত্র ছিলাম। তারপর সিরিয়ায় চলে যাই এবং এখন কাতারে আছি। আপনি আমেরিকায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে পাবেন। তারা দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনে ফিরে যেতে চায়। মার্কিন নাগরিক হলেও তারা মাতৃভূমি ফিলিস্তিনে ফেরার জন্য গভীর তাগিদ অনুভব করে। আর সে কারণেই আমরা শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চাই। এটাই আমার ও অন্যদের আকাঙ্ক্ষা। আমার অস্তিত্বের শিকড় পড়ে আছে ফিলিস্তিনে, অথচ আমি এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। অপর এক সাক্ষাতকারে খালেদ মেশাল বলেন, দখলদার ইসরাইল তাদের কায়েমি স্বার্থ হাসিলের জন্য হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। আসলে হামাস ফিলিস্তিনি নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকে বলেই ইহুদিবাদীরা এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।
n an op-ed shortly after Hamas' 2006 election victory, Mashal suggested a long-term truce:
Our message to the Israelis is this: We do not fight you because you belong to a certain faith or culture. ... Our conflict with you is not religious but political. We have no problem with Jews who have not attacked us -- our problem is with those who came to our land, imposed themselves on us by force, destroyed our society and banished our people.
We shall never recognize the right of any power to rob us of our land and deny us our national rights. We shall never recognize the legitimacy of a Zionist state created on our soil in order to atone for somebody else’s sins or solve somebody else’s problem.
But if you are willing to accept the principle of a long-term truce, we are prepared to negotiate the terms. Hamas is extending a hand of peace to those who are truly interested in a peace based on justice.
In 2007, Mashal made comments which some saw as a "softened stance" towards Israel:
As a Palestinian today I speak of a Palestinian and Arab demand for a state on 1967 borders. It is true that in reality there will be an entity or state called Israel on the rest of Palestinian land. This is a reality, but I won't deal with it in terms of recognising or admitting it.




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...