দ্য সেইংস অব মুহাম্মদ (সা.) ও লিও তলস্টয়



মো.আবু রায়হান
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ৪৫১টি হাদিস আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেন স্যার আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী ‘দ্য সেইংস অব মুহাম্মদ (সা.)’ নামে একটি সংকলন প্রস্তুত করেন। প্রকাশিত হয় ১৯০৫ সালে, লন্ডন থেকে। এতে ইসলাম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে তাঁর ছোট্ট দুটি রচনাও অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রকাশের পরপর বইটি পাশ্চাত্য জগতে বেশ সাড়া জাগায়। বইটি বাংলায় অনুবাদ করেন আসজাদুল কিবরিয়া।
১. যার দ্বারা মানবজাতির কল্যাণ বৃদ্ধি পায়, মানুষের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম।
২. যে ব্যক্তি মানবজাতির প্রতি দয়াশীল নয়, আল্লাহ্ও তার প্রতি দয়াশীল নন।
৩. প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মানবজাতি নিরাপদ থাকে।
৪. এমন সময় সমাগত, যখন নাম ছাড়া ইসলামের ও বাহ্যরূপ ছাড়া কোরআনের কিছু অবশিষ্ট থাকবে না, মুসলমানদের মসজিদগুলো প্রার্থনা ও জ্ঞানবঞ্চিত হবে, জ্ঞানী ব্যক্তিরাই বিশ্বের নিকৃষ্টতম ব্যক্তিতে পরিণত হবে এবং তাদের মধ্য থেকেই কলহ ও শত্রুতা উৎসারিত হয়ে তাদের ওপরই পতিত হবে।
৫. অতিরিক্ত প্রার্থনার চেয়ে অতিরিক্ত জ্ঞানচর্চা ভালো এবং সংযমই ধর্মের ভিত্তি। সারারাত প্রার্থনা করার চেয়ে রাতে এক ঘণ্টা বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া ভালো।
৬. এক হাজার মূর্খ উপাসকের চেয়ে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি শয়তানের জন্য শক্তিশালী। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জন করা আল্লাহর নির্দেশ।
এসব বাণী 'দ্য সেইংস অব মুহাম্মদ (সা.)' গ্রন্থে রয়েছে।
লিও তলস্টয় রুশ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক; এমনকি তাকে বিশ্ব সাহিত্যেরও অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জ্ঞানার্জনে অসীম আগ্রহী; অদম্য অনুসন্ধিৎসু, অফুরন্ত জীবনীশক্তির অধিকারী ও কর্মোদ্যমী এই বিখ্যাত মানুষটির জন্ম ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার টুলা প্রদেশে। তলস্টয়ের পুরো নাম কাউন্ট লেভ নিকোলায়েভিচ তলস্টয়। তিনি মানুষের মধ্যে জীবনবোধ, মনুষ্যত্ববোধ, নীতিবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন। টলস্টয় তাঁর সময়ের বিশিষ্ট প্রগতিবাদী বৈপ্লবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ।
তার দু’টি অনবদ্য উপন্যাস রয়েছে । ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘War and peace‘ প্রকাশিত হয়। সাহিত্য মহল এই কাহিনীতে গভীরভাবে আলোড়িত হয়। এরপর ১৮৭৩- ১৮৭৭ এর মধ্যে তাঁর ‘Anna Karenina‘ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য ছোট উপন্যাস হল- ‘The death of Ivan llych‘ এবং ‘Father Sergius‘।তিনি ১৯০২ থেকে ১৯০৬ পর্যন্ত প্রতি বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার-এর জন্য একাধিকবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন, ১৯০১, ১৯০২ এবং ১৯১০ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার-এর জন্য মনোনীত হন এবং তার পুরস্কার না পাওয়ার ঘটনাটি নোবেল পুরস্কার বিতর্কের একটি প্রধান কারণ ছিল। তার একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল, Everyone thinks of changing the world, but no one thinks of changing himself.
তলস্তয় শেষ বয়সে প্রায় সন্তের জীবন যাপন করতে চেয়েছিলেন। নিজের কাজ তিনি নিজে হাতে করতেন, এমনকি নিজে জুতো তৈরি করে পরতেন, চাষাভুষোর মতো সাধারণ ও অল্প আহার করতেন, পরতেন খেতমজুরের পোশাক। শেষ বয়সে তিনি কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পথিমধ্যে ঠাণ্ডা লেগে তার নিউমোনিয়া হয়। এতেই তিনি বাড়ি থেকে দূরে এক রেলস্টেশনে ২০শে নভেম্বর ১৯১০ সালে মারা যান। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর। লিও তলস্তয়ের মৃত্যুর পর তাঁর ওভারকোটের পকেটে দ্য সেইংস অব মুহাম্মদ (সা.)’বইটির একটি কপি পাওয়া গিয়েছিল। বাণীগুলোর নৈতিক মাধুর্য, সৌন্দর্য, সাধারণ জ্ঞান, প্রায়োগিক দিক ও চিন্তাশীলতা বিভিন্নভাবে মনকে আলোড়িত করে। বইটিতে ইসলামের আত্মিক ও ইহজাগতিক তাৎপর্য সংক্ষেপে অথচ সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল