বাইডেনের মানবাধিকার!




গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আটোমান বাহিনীর হাতে আর্মেনীয়দের মৃত্যুর ঘটনাকে গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন ।আর্মেনীয়দের দাবি ১৯১৫ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে সংঘটিত ওই হত্যাযজ্ঞে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে তুরস্ক বলে আসছে মৃতের সংখ্যা এর পাঁচভাগের একভাগ। আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধের কারণেই এটি ঘটেছে।অবশ্য গণহত্যা গবেষকদের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের (আইএজিএস) ধারণা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ওই ঘটনায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান ঘটনাটিকে গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু তার পরে আমেরিকাতে যত প্রেসিডেন্ট এসেছেন কেউই বিষয়টিকে গণহত্যা বলেননি।প্রতি বছর এ দিবসটি পালনকালে তারা সবাই এটিকে মহা বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং এই বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ থেকে দূরে থেকেছেন।
গত মাসে আরমেনীয় গণহত্যা বিষয়ে এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ‘যা আমরা হারিয়েছি তার জন্য আজ শোক প্রকাশ করছি। আর চলুন সেই পৃথিবী গড়ার দিকে নজর দেই, যা আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য গড়তে চাই। যেখানে অসহিষ্ণুতা আর গোঁড়ামির জায়গা হবে না। মানবাধিকারকে সম্মান জানানো হবে। মানুষ খুঁজে পাবে তার মর্যাদা ও নিরাপত্তা।বিবৃতিতে বাইডেন পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে এ ধরনের নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সংকল্পে পুনরায় একত্রিত হওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। বলেন, ‘চলুন আমরা সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য উপশমের খোঁজে নামি।
বাইডেনের মতে আরমেনীয় গণহত্যার এই স্বীকৃতির পেছনে মূল উদ্দেশ্য, বিশ্বের অন্য কোথাও যেন গণহত্যা না ঘটে সেটা নিশ্চিত করা। তাহলে কি প্রশ্ন আসে না যে আমেরিকা এবং তার দোসররা কাশ্মীরে, ফিলিস্তিনে, সিরিয়াতে, লিবিয়াতে, ইয়েমেনে, আরাকানে, আফগানিস্তানে যে গণহত্যা চলাচ্ছে তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করার জন্য তিনি কী টু শব্দটি পর্যন্ত করেছেন?
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের সংঘাত নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, হাজারো রকেট ছুড়লে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। গাজা উপত্যকায় চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।বাইডেন বলেছেন, যখন আপনার অঞ্চলে হাজার হাজার রকেট উড়ে আসবে, তখন আপনার আত্মরক্ষা অধিকার রয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ডেমোক্রেটদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মানবাধিকার রক্ষার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটি নিয়ে ডেমোক্রেটরা প্রশ্ন তুলছেন।ইসরায়েলকে চাপ দিতে বাইডেন প্রশাসনের জোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন একদল ডেমোক্রেট নেতা। তাদের মধ্যে কয়েকজন ইসরায়েলকে উস্কানি দেওয়া ও মানবাধিকার উপেক্ষা করে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউসের সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে ইসরায়েল যে পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদ করছে সেটি নিয়ে বাইডেন প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করায় তার দলের মধ্যেই তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলার একটি সাধারণ মন্ত্র হলো, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও একই কথা বলেন। এরপরই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা আইনসভার নিম্নকক্ষে লিবারেলরা এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান।নিউইয়র্কের আইনপ্রণেতা আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘ফিলিস্তিনিদের কি বেঁচে থাকার অধিকার আছে?’ টুইটারেও বাইডেন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন এই ডেমোক্রেট নেতা। তিনি বলেন, ‘এরপরেও বাইডেন প্রশাসন কীভাবে মানবাধিকারের পক্ষে বলে দাবি করেন?
ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর টানা ৭ দিন ধরে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। এ পর্যন্ত ১৮৮ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে যুক্তিরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিইয়ামিন নেতানিয়াহুকে গতকাল টেলিফোন করেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছেন, তিনি ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।তিনি বলেন, হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রকেট হামলা ঠেকাতে নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে ইসরাইলের।বাইডেনের এই ফোনে ফিলিস্তিনে হামলা উসকে দেওয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি ইসরাইলিদের অধিকারের প্রতি তার (বাইডেন) একনিষ্ঠ সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন। বাইডেনের ফোন পেয়ে গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, হামলা মধ্য পর্যায়ে আছে। আরও চলবে। এদিকে শুধুমাত্র গতকাল ইসরাইলের হামলায় অন্তত ৪২ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় কমপক্ষে দুটি আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। এ হামলায় কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন।
গাজা ও পশ্চিম তীরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, যারা চুপ থেকে কিংবা প্রকাশ্যে ইসরাইলি রক্তপাতকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, জেনে রাখা উচিত, একদিন তাদেরও পালা আসবে।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষ ও নিপীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই রাষ্ট্রটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করতে হবে।নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর প্রতিবেদনে গত এপ্রিলে এ কথা বলা হয়েছিল।জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর কীভাবে ইহুদি-ইসরাইলি একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে তা এইচআরডব্লিউর ২১৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল