উপমহাদেশের কারবালা ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস আজ

 


১৮৩১ সালের ৬ মে আজকের দিনে ইংরেজ ও শিখ ধর্মের অনুসরণকারীরা যৌথভাবে আক্রমণ করে মুসলমানদের হত্যা করে বালাকোট যুদ্ধে।বালাকোট শহর পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খাইবার-পাখতুনখাওয়ার মানসেহরা জেলা থেকে ৩৮ কি: মি: পূর্ব-উত্তরে অবস্থিত। বালাকোট ময়দানে মর্দে মুজাহিদ সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভী তার তিন শতাধিক মুজাহিদ সঙ্গী সাথীসহ শাহাদাত বরণ করেন। মুজাদ্দিদে আলফে সানীর সূচিত সংস্কার ও সংগ্রামের ধারার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন তিনি।তিনি ছিলেন আরেক সংগ্রামী সংস্কারক শাহ ওয়ালীউল্লাহ(রহ) এর ছেলে শাহ আব্দুল আজীজ (রহ) এর ছাত্র,যিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম জিহাদের ফতোয়া দিয়েছিলেন।শাহ আব্দুল আজীজ (রহ) এর আদেশেই সৈয়দ আহমাদ ব্রেলভী (রহ.) জিহাদে নেমেছিলেন।
১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজ বণিকরা এ অঞ্চলে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ রাজদণ্ডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের উপর এক জোরজবরদস্তি মূলক আধিপত্যবাদী শাসন কায়েম করে। একদিকে এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অন্যদিকে স্বয়ং মুসলিম সমাজের ইসলামী জীবনাচরণে দীর্ঘকাল যাবৎ বিপুল অনৈসলামিক আক্বীদা-বিশ্বাসের শক্ত অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই এ অঞ্চলে এক সর্বব্যাপী সংস্কারমূলক বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিল। এই প্রেক্ষাপটে সাইয়েদ আহমাদের আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল মূলত দুটি উদ্দেশ্যে-
এক. পারিপার্শ্বিক অন্যান্য জাতির প্রভাবে কলুষিত মুসলিম জাতির ঈমান-আকিদাকে শিরকমুক্ত করা।
দুই. মুসলিম জীবনধারা ও জাগরণের অন্তরায় অশুভ শক্তিসমূহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। অস্তিত্ব হারাতে বসা মুসলিম জাতির জন্য তখন এ দুটি কর্মসূচি ছিল অত্যন্ত যুগোপযোগী ও প্রয়োজনীয়। অনাগত বিপ্লবের হাতছানিই যেন ঊনবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে সাইয়েদ আহমাদ শহীদের ‘তরীকায়ে মুহাম্মাদিয়া’ আন্দোলনের হাত ধরে উপমহাদেশের শিরক-বিদ‘আতী জঞ্জালের অন্ধকার গহ্বরে তাওহীদী নবপ্রভাতের সূচনা ঘটায়। এই আন্দোলনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ঘটে যায় বালাকোট যুদ্ধ ।
বালাকোট যুদ্ধ একদিকে যেমন ছিল সংস্কারবাদী আন্দোলনের জন্য চরম বিপর্যয়ের, অপরদিকে বিদেশী বেনিয়াদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য উপমহাদেশের বুকে পরিচালিত সর্বপ্রথম সুসংঘবদ্ধ রণডঙ্কা।ঊনিশ শতকের শুরুর দিকে সাইয়েদ আহমাদ শহীদের ‘তরীকায়ে মুহাম্মাদিয়া’ আন্দোলনের হাত ধরে সমাজের অভ্যন্তরে গেড়ে বসা শিরক-বিদ‘আতী কার্যক্রম প্রতিহত করে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও উপমহাদেশের আযাদীর জন্য সংঘবদ্ধভাবে প্রথম সংঘটিত হওয়া বালাকোট ময়দানের এই যুদ্ধই পরবর্তীকালে শামেলির জিহাদ, সিপাহী বিদ্রোহ, রেশমী রুমাল আন্দোলন ও ফরায়েজি আন্দোলনের প্রেরণা যুগিয়েছে।বালাকোটের ঐতিহাসিক ট্রাজেডির মাধ্যমে সূচিত সংগ্রামের সিঁড়ি বেয়েই এ দেশের মুসলমানরা ফিরে পেয়েছিল তাদের স্বাধীনতা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল