সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমেরিকার প্রশাসন কেন ইহুদিদের বিপক্ষে যেতে পারে না

 

পৃথিবীতে ইহুদিদের মোট সংখ্যা দেড় কোটির মতো।পৃথিবীতে একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল। ইসরায়েলে ইহুদির সংখ্যা ৫৪ লাখ, অবশিষ্ট প্রায় এক কোটি ইহুদি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে আমেরিকায় ৭০ লাখ, কানাডায় চার লাখ আর ব্রিটেনে তিন লাখ ইহুদি থাকে। ইহুদিরা মার্কিন জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ, আর পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২ শতাংশ। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি ৫০০ জনে একজন ইহুদি! পৃথিবীতে ইহুদি এবং মুসলিমদের অনুপাত ১ঃ১০০। অর্থাৎ একজন ইহুদির বিপরীতে এক শ’ জন মুসলিম। এর পরও মুসলিমদের চেয়ে কয়েক শ’ গুণ ক্ষমতাবান ইহুদিরা। এর কারণ হিসেবে বলা যায় সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সব দিক দিয়েই ইহুদিরা এগিয়ে।জনসংখ্যার দিক দিয়ে ঢাকা শহরের কাছাকাছি। হতে পারে ইহুদিরা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ, কিন্তু আমেরিকান রাজনীতিতে তাদের প্রভাব একচেটিয়া। তারা মোট সম্পদের ৫০ শতাংশের মালিক।আমেরিকার ইহুদি জনগোষ্ঠীর ৮৯ শতাংশ বাস করে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে, যাদের বলা হয় ইলেকটোরাল কলেজ স্টেটস। উল্লেখ্য, ইহুদিদের ভোট সব সময় এক দিকে যায়। যারা তাদের জন্য কাজ করবে তাদের ভোট দেয়। তাই সহজেই ভোট দিয়ে নির্বাচন করতে পারে তাদের পছন্দমতো প্রেসিডেন্টকে। আবার এমনও দেখা যায়, যারা ইহুদি নয় কিন্তু ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
তাদের সংখ্যা ধরলে ইহুদিরাই সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক। এটা হলো অনানুষ্ঠানিক ইহুদি লবি, যা আনুষ্ঠানিক ইহুদি লবির অতিরিক্ত। আমেরিকার ১০০ জন সিনেটরের ১৩ জন ইহুদি। এর চেয়ে ভয়ংকর তথ্য হলো, ইহুদিদের সমর্থন ছাড়া কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন না, কোনো প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন না।বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব যতোটা; আমেরিকার রাজনীতিতে ইহুদিদের প্রভাব তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তহবিল সংগ্রহ একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। বারাক ওবামা বা বিল ক্লিনটন নিজের টাকায় প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না। চাঁদা এবং পার্টির টাকায় তাদের নির্বাচনী ব্যয় মিটাতে হয়েছে। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী ফান্ড দাতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক এফেয়ার্স কমিটি ( এআইপিএসি)।যুক্তরাষ্ট্রে এআইপিএসির মতো আরো কিছু ইসরায়েলপন্থী লবি রয়েছে। মূলত তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। তারা সরাসরি কোনো দলকে অর্থ দেয় না। বরং পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচনে অর্থ ব্যয় করে। শুধুমাত্র ট্রাম্পের শাসনামলেই এআইপিএসি অনেকগুলো সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা, ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে আসা এবং ফিলিস্তিনকে দেওয়া সাহায্য বন্ধ করা। কংগ্রেশনাল ক্লাব নামে এআইপিএসির বিশেষ একটি দল আছে। এই দলের প্রত্যেক সদস্য প্রতি নির্বাচনে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ডলার চাঁদা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এই অর্থ ইসরায়েলপন্থী রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে ব্যয় করা হয়। পরবর্তীতের এদের মধ্যে যারা জয়লাভ করে, তাদের মাধ্যমে সিনেট এবং হাউজে প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের নীতির বাস্তবায়ন করে।ইসরায়েল সৃষ্টির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওঠা যেকোনো নিন্দা অথবা শাস্তির প্রস্তাব আটকে দিতেও বরাবরই তৎপর যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র যতবার ভেটো দিয়েছে, তার অর্ধেকই ইসরায়েলের জন্য।এটা হলো ইহুদি লবির প্রতি আমেরিকান প্রশাসনের কৃতজ্ঞতা।
আমেরিকার এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যাংক ইহুদিদের দখলে। ফলে আমেরিকার কেউ চাইলেও এদের কিছু করতে পারবেন না। বরং জুইশ কমিউনিটি বা ইহুদিদের হাতে না রাখলে ক্ষমতায় টেকা মুশকিল। এসব কারণে শুধু জুইশ কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক ভাবে কাজ করে যেতে হয়।
আমেরিকার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলত করপোরেট হাউসগুলো।এসব করপোরেট হাউসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এগুলোর মালিক কিংবা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম্পানিগুলোর মূল দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, সিইও হলেন ইহুদি কমিউনিটির মানুষ।জো বাইডেনের নেতৃত্বে নতুন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর হোয়াইট হাউসের স্টাফ হিসেবে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ২০ জনই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। এ নিয়ে ইসরাইলের একটি থিংকট্যাংক দাবি করছে যে, মার্কিন প্রশাসনে ভারতীয় নাগরিকদের আধিপত্য বিস্তারের নেপথ্যে ইহুদিদের ভূমিকা রয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে হঠাৎ করে ভারতীয় বংশোদ্ভুত নাগরিকদের এভাবে উঠে আসার নেপথ্যে ইসরাইলের সাথে ভারতের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কই মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলে জিউয়িশ পিপল পলিসি ইন্সটিটিউট বা জেপিপিআই জানিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি ইসরাইলের একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পেশাদার নীতি নির্ধারনী থিংক ট্যাংক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।বিগত দুই যুগে মার্কিন ইহুদি গ্রুপগুলো ইহুদি জনগোষ্ঠী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভুত নেতৃবৃন্দের মাঝে শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আমেরিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। কেননা
আশির দশক থেকে আমেরিকার রাজনীতিতে ইসরায়েল বড় এক ইস্যু। কারণ অধিকাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ কারণে আমেরিকার রাজনীতিতে যারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে, তাদেরকে ভালো চোখে দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মার্কিন নাগরিকদের প্রায় ৭০ ভাগই ইসরায়েলকে সমর্থন করেন এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে ইচ্ছুক। বিপরীতে মার্কিন মুলুকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি দিনকে দিন আরো কমছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...