সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইহুদিরা চায় সহানুভূতি

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপে ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর তারা সেই হত্যাকে পুৃঁজি করে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সহানুভূতি অর্জন করতে চায়। সেই সহানুভূতি অনেকটা অর্জন করে ফেলেছে ইতোমধ্যে। রাষ্ট্রহীন জাতি ইহুদিরা এর বিনিময়ে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে নিজস্ব রাষ্ট্র পেয়েছে। প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে, হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে উদ্বাস্তু করছে। সহানুভূতির ছাড়াও ইহুদিদের আরেকটি বড় অর্জন হলো আন্তর্জাতিক সমর্থন। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হরহামেশা হত্যা করলেও অবৈধ দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব নিরব থেকেছে। এদের সাথে যুক্ত হয়েছে নামধারী কিছু মুসলিম রাষ্ট্রও।নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বোমারু বিমান, মিসাইল, মরটার, গুলি করে হত্যা করলেও পশ্চিমা বিশ্ব এটা ইসরায়েলের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলে সমর্থন দিয়ে সব জায়েজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
হিটলার হত্যা করেছিলেন পৃথিবীর প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ ইহুদিকে। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনী দ্বারা যে ব্যাপক হারে ইহুদি হত্যা করা হয়েছিল, তা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত।হলোকাস্ট শব্দটা বাংলা করলে দাঁড়ায় সবকিছু পোড়ানো। জার্মানিতে ৬০ লাখের ওপর ইহুদি হত্যা করেছিল হিটলার।ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া ইহুদিদের জার্মানি পরবর্তীতে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে।অর্থ দেওয়া শুরু করে ১৯৫৩ সালে। সব মিলিয়ে ৭,০০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশী অর্থ দিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে আউশভিৎস-বিরকেনাউ বন্দিশিবিরে প্রায় ১২ লক্ষ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে জার্মানির নাৎসি বাহিনী। নিহত লোকজনের অধিকাংশই ছিল ইহুদি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের ধরে এনে এই ক্যাম্পে বন্দী করা হয়েছিল। গ্যাস চেম্বারের জন্য কুখ্যাত হচ্ছে আউশভিৎস-বিরকেনাউয়ের ক্যাম্প। সভ্যতার ইতিহাসের এক বর্বরতম ঘটনা সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আউশভিৎস-বিরকেনাউয়ের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প।কিন্তু সময়ের নির্মম পরিহাস হচ্ছে আউশভিৎস-বিরকেনাউ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নির্যাতিতদের অনেকেই এখন অন্যের দেশ জবরদখল করে নিজের দেশ বানিয়েছেন। গোটা ফিলিস্তিনকেই আউশভিৎস-বিরকেনাউয়ের মতো কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করেছে ইসরায়েল।ফিলিস্তিনের গাজাকে পরিণত করেছে উন্মুক্ত কারাগারে।
প্রগতিশীল ও পশ্চিমারা আউশভিৎস-বিরকেনাউয়ের নির্মমতা অনুভব করে।তাদের একই সঙ্গে ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান,কাশ্মীর,বসনিয়া, চেচনিয়া ও পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া নির্মমতাও অনুধাবন করা উচিত।
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ইহুদিদের রক্ষা করতে না পারায় ডাচ সরকারের ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আরও অনেকেই বিভিন্ন সময় দুঃখ প্রকাশ করেছেন, লজ্জিত হয়েছেন। পোল্যান্ড সাহস করে নিজেদের দায় মোচনের জন্য একটি নতুন আইন পাশ করে, যাতে পোল্যান্ডও হলোকাস্টের সহযোগী ছিল’ বলার জন্য কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। ইউরোপের ফ্রান্সসহ অনেক দেশ হলোকাস্টের বিরুদ্ধে যায় এমন মন্তব্য আইন করে নিষিদ্ধ করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে নুরেমবার্গ ট্রায়ালের মাধ্যমে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধের নামে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই আউশভিৎস-বিরকেনাউয়ের মতো কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হলো, এর জন্য কি পশ্চিমের যুদ্ধবাজ নেতাদের বিচার করা উচিত নয় ?
ইউরোপ আমেরিকায় ইহুদিদের অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে কিছু বললে একে অ্যান্টি সেমেটিক বা ইহুদীবিদ্বেষ বলে চালিয়ে দেয় । কখনো হলোকস্টের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মায়া কান্না শুরু করে দেয়। তাদের ভাবখানা এমন যে অতীতে আমরা অনেক নির্যাতিত হয়েছি সো ফিলিস্তিনিদের মারলে হত্যা করলে তোমরা কিছু বলতে পারবে না। এটা বললে
অ্যান্টি সেমেটিক হবে। পশ্চিমা বিশ্বও অ্যান্টি সেমেটিক অপবাদ নিতে ভয় পায়। তাই নীরবে ইহুদিদের কুকর্মে সায় দিয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...