হাগানাহ জঙ্গি সংগঠন এখন ইসরায়েলর সামরিক বাহিনী
মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম জঙ্গি সংগঠন ছিল ইহুদিদের হাগানাহ( Haganah) নামের একটি দল। ব্রিটিশদের সহায়তায় এই জঙ্গি সংগঠনটি গঠন করেছিল ইহুদিরা। উদ্দেশ্য ছিল, ফিলিস্তিন ভূখণ্ড থেকে আরবদের তাড়িয়ে সেখানে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।Haganah Zionist military organization representing the majority of the Jews in Palestine from 1920 to 1948. Organized to combat the revolts of Palestinian Arabs against the Jewish settlement of Palestine, it early came under the influence of the Histadrut (“General Federation of Labour”). Although it was outlawed by the British Mandatory authorities and was poorly armed, it managed effectively to defend Jewish settlements.( Britannica)
হাগানাহ’র ইতিহাস জানতে হলে প্রথমেই চলে যেতে হবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়টাতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে তুরস্ক ভিত্তিক ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত ফিলিস্তিন শাসনের ম্যান্ডেট পায় ব্রিটিশরা। ফিলিস্তিনি আরবদের জন্য সেখানে একটি রাষ্ট্র গঠনের কথা থাকলেও ১৯১৭ সালে হঠাৎ করেই বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ওই ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয় ব্রিটিশ সরকার।ফিলিস্তিনে তখনও আরব জনগোষ্ঠী ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। সুতরাং রাতারাতি ইহুদিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব ছিল না। সেজন্য দেরি করতে থাকে ব্রিটিশ সরকার। আর এতেই মরিয়া হয়ে ওঠে ইহুদিরা। যত দ্রুত সম্ভব ফিলিস্তিনে স্বাধীন ইহুদিরাষ্ট্র ‘ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে চাপ দিতে থাকে তারা। এদিকে স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা বেলফোর ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আন্দোলন শুরু করে। অনিবার্য হয়ে ওঠে সংঘাত।
এই সময়টাতে আরবদের দমনে সশস্ত্র পথ বেছে নেয় ইহুদিরা। একের পর এক তারা সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরি করতে থাকে। ১৯২০ সালে প্রথমেই তারা তৈরি করে হাগানাহ। এরপর তৈরি করে ইরগুন ( Irgun )
এবং স্টার্ন গ্যাং ( Stern Gang) নামের আরও দুটি গোষ্ঠি। প্রথমে তারা যে হাগানাহ তৈরি করেছিল, সেটাই ছিল মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম কোনও জঙ্গি সংগঠন। প্রথমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইহুদীবাদীদের সহায়তা করা হাগানাহ বাহিনীর দায়িত্ব হলেও পরবর্তীকালে তারা আধা-সামরিক বাহিনীতে পরিণত হয় এবং ১৯৪৮ সালে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এই হাগানাহ-ই হয় তাদের সামরিক বাহিনী ‘ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস’ (আইডিএফ)। আজও ইসরায়েলে সেই বাহিনীটিই প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করে। After the United Nations’ decision to partition Palestine (1947), the Haganah came into the open as the defense force of the Jewish state; it clashed openly with British forces and successfully overcame the military forces of the Palestinian Arabs and their allies. By the time of the creation of the State of Israel (1948) the Haganah controlled not only most of the settled areas allocated to Israel by the partition but also such Arab cities as ʿAkko (Acre) and Yafo (Jaffa). By order of the provisional government of Israel (May 31, 1948) the Haganah as a private organization was dissolved and became the national army of the state. Its name is perpetuated in the official name of the Israeli armed services, Tzva Haganah le-Yisraʾel (“Israel Defense Forces”).
বর্তমানে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সক্রিয় সেনা সদস্য এক লাখ ৭০ হাজার।প্রশিক্ষিত জনসংখ্যা ৩০ লাখ। এবং সেনাবাহিনীর বাজেট ২০ বিলিয়ন ডলার।অস্ত্রের নিজস্ব কারখানা রয়েছে। বিদেশেও রপ্তানি করে। ৯০টি গোপন পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। যুদ্ধবিমান ৬৮৪টি। বিমান বাহিনী ৩৪ হাজার, নৌবাহিনী ১০ হাজার, যুদ্ধ জাহার চারটি। ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বোট ৮টি। সাবমেরিন ৫টি। প্যাট্রোল বোট ৪৫টি। সাপোর্ট শিপ ২টি।অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র পার্শ্ববর্তী দেশ মিসর, সিরিয়া ও ইরানে হামলা করতে সক্ষম। এক হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার কিমি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রোড ডোম। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অস্ত্র রফতানি করে ইসরায়েল।
হাগানাহ ইহুদিবাদী রাষ্ট্র তৈরির কাজে কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা এবার দেখে আসি।১৯২০ সাল থেকে আরব নিধনের কাজ শুরু করে হাগানাহ। প্রথমে তাদের কার্যক্রম ছিল জেরুজালেম এবং তেলআবিবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। শুরুর দিকে তারা অস্ত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ করতে থাকে। আর এসব কাজে হাগানাহকে সহায়তা দিতে থাকে ব্রিটিশরা।
when the British refused to open Palestine to unlimited Jewish immigration, the Haganah turned to terrorist activities, bombing bridges, rail lines, and ships used to deport “illegal” Jewish immigrants.১৯২৪ সালে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতির অভিযোগে তারা জ্যাকব দে হান নামের এক ইহুদিকে হত্যা করে। এটাই তাদের প্রথম স্বীকৃত হত্যাকাণ্ড। এরপর একের পর এক হত্যাকাণ্ড এবং আরবদের ওপর দমন পীড়ন চালাতে থাকে হাগানাহ। হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টির মাধ্যমে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের তারা বাধ্য করে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে। তাদের এসব অপকর্ম যখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারিত হচ্ছিল, তখনই ভোল পাল্টে ফেলে এই জঙ্গি দলটি। একদিকে তারা বেছে নেয় আত্মঘাতি হামলার পথ। অপরদিকে কিছু ইহুদি এবং ব্রিটিশদের ওপরও হামলা চালাতে থাকে।
১৯৩৭-১৯৩৯ সালের ফিলিস্তিনের মধ্যে বিভিন্ন গণপরিবহণ এবং ব্রিটিশ সেনাদের টহল যানে হামলা চালায় তারা। এতে ২৪ জন নিহত হয়। ১৯৪০ সালের ২৫ নভেম্বর হাগানাহ প্রথমবারের মত বড় আকারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ফ্রান্সের জাহাজ এসএস প্যাট্রিয়া প্রায় ১ হাজার ৮০০ ইউরোপীয় ইহুদিসহ ফিলিস্তিনের হাইফা বন্দরে উপস্থিত হয়। অনুমোদন না থাকায় ব্রিটিশ প্রশাসন জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে দেয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে হাগানাহ। তারা এই ১ হাজার ৮০০ ইহুদিকে যে কোনও মূল্যে ফিলিস্তিনের মাটিতে নামাতে জাহাজের ভেতর বোমা স্থাপন করে, যাতে জাহাজটি কার্যকারিতা হারিয়ে বন্দর ত্যাগ করতে না পারে। কিন্তু বোমায় বিধ্বংসী উপাদান বেশি হওয়ায় জাহাজটি একেবারে ডুবেই যায়। এতে ২৬৮ জন ইহুদী নিহত এবং ১৭২ জন আহত হয়।
১৯৪৬ সালে আরেকটি বড় ধরনের অভিযান চালায় হাগানাহ। একে ‘অপারেশন মারকোলেট’ বা ‘নাইট অব দ্য ব্রিজেস’ বলা হয়। ফিলিস্তিনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী আরব দেশ লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান এবং মিসরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার জন্য ওই বছরের ১৬ ও ১৭ জুন ১১টি সেতু ধ্বংস করে দেয় সংগঠনটি। তাদের সাথে যোগ দেয় আরেক ইহুদি জঙ্গি সংগঠন পালমাচ
(Palmach)। একই বছরের ২৬ জুলাই হাগানাহ এবং অপর জঙ্গি সংগঠন ইরগুন একসঙ্গে জেরুজালেমে কিং ডেভিড হোটেলে বোমা হামলা চালায়। এতে ৯১ জন নিহত হয়। এরমধ্যে ছিল ২৮ ব্রিটিশ, ৪১ আরব এবং ১৭ জন ইহুদি।
১৯৪৭ সাল থেকে গণহারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে শুরু করে হাগানাহ। ১৯ ডিসেম্বর সাফাদ নামক একটি আরব গ্রাম আক্রমণ করে দুইটি বাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। এতে পাঁচ শিশুসহ মোট ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি মাউন্ট ক্যারমেলের একটি গ্রামে হামলা করে ১৭ জনকে হত্যা করে তারা। ৪ জানুয়ারি তারা ব্রিটিশ সেনাদের পোশাক পরে ছদ্মবেশে জাফফায় প্রবেশ করে আরব ন্যাশনাল কমিটির সদর দপ্তর উড়িয়ে দেয় হাগানাহ। এতে ৪০ জন নিহত এবং ৯৮ জন আহত হন।
হাগানাহ’র এসব অপকর্মের কাহিনী লেখা আছে ইসরায়েলের হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং ইতিহাসবিদ ইলান প্যাপ’র ‘এথনিক ক্লিনজিং অব প্যালেস্টাইন’ বইতে। এই বইতেই পাওয়া যায় দেইর-ইয়াসিন নামক একটি ফিলিস্তিনি গ্রামের কথা। ইহুদি সৈন্যরা গ্রামটি অবরোধ করে প্রথমে তারা বেপরোয়া গুলিতে বহু মানুষকে খুন করে। বাকিদের একটি স্থানে এনে জড়ো করে। আরব তরুণীরা নির্বিচার ধর্ষণের শিকার হন। শেষে ৩০ শিশুসহ সেখানে মোট ৯৩ জনকে হত্যা করা হয়। অনেকেই মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হবে।
তৎকালীন প্রধান ইহুদি নেতা বেন-গুরিয়ন ১৯৩৮ সালে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি ফিলিস্তিন থেকে আরবদের বলপূর্বক বের করে দিতে চাই এবং আমি মনে করি এতে অনৈতিকতার কিছু নেই।’ ১৯৪৮ সালে বিশেষ অনুকূল পরিস্থিতিতে তার সেই ‘নৈতিকতা’ বাস্তবরূপ পায়। ওই বছর ১৪ মে ফিলিস্তিনে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের ম্যান্ডেট শেষ হয়। সেদিন রাত ১২টা ১ মিনিটে জুয়িস্ট পিপলস কাউন্সিল ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।
এরপরও অব্যাহত থাকে নৃশংসতা, নির্মম সশস্ত্র আগ্রাসন। ছয় মাসের পরিকল্পিত অভিযানের মাধ্যমে ৫৩১টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। ১১টি শহর করা হয় জনশূন্য, ফিলিস্তিনি জনসাধারণের অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ, প্রায় ৮ লাখ মানুষকে দেশ থেকে পুরোপুরি উৎখাত করা হয়। হারানো ভূখণ্ড ফিরে পেতে আজও লড়ে যাচ্ছে ‘নিজ দেশে পরবাসী’ ফিলিস্তিনিরা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন