সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঐতিহাসিক মসজিদ আল-হারাম




মো. আবু রায়হান
মসজিদ আল-হারাম বা হারাম শরীফ বা মসজিদে হারাম।মসজিদুল হারাম’ অর্থ সম্মান ও মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদ। এই মসজিদের নামের পিছনেও মক্কার হারাম এলাকার ব্যাখ্যাগুলো প্রযোজ্য । মহান আল্লাহ্‌ এই মসজিদকে সম্মানিত করেছেন, পাশাপাশি এর সীমানায় বিশেষ কিছু কাজ হারাম ঘোষিত। যার মধ্যস্থলে কাবাগৃহ অবস্থিত।মসজিদ আল হারাম, গ্রেট মস্ক অব মক্কা, গ্র্যান্ড মস্ক অব মক্কা নামেও এটি পরিচিত। সৌদি আরবের মক্কা শহরে এর অবস্থান। মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে মহানবী (সা.) ও তার প্রিয় সাহাবীদের স্মৃতিধন্য ইসলামের অনেক পবিত্র স্থান। হজ্জ ও উমরার জন্যও মসজিদুল হারামে যেতে হয়। রাসুল (সা) বলেন , “আমার এই মসজিদে সালাত আদায় করা মসজিদ হারাম ব্যতীত অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার রাকাত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম, আর মসজিদ হারামে এক রাকা‘আত সালাত আদায় করা (মসজিদ নববী ব্যতীত) অন্য যেকোন মসজিদে এক লক্ষ্ রাকাত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। (সুনান ইবন মাজাহ-১৪০৬) রাসুল (সা.) বলেছেন, ঘরে বসে নামাজ আদায়ের সওয়াব এক গুণ, এলাকার মসজিদে নামাজের সওয়াব ২৫ গুণ, শহরের প্রধান মসজিদে নামাজ আদায়ের সওয়াব ৫০০ গুণ, আল-আকসা মসজিদে নামাজের সওয়াব ৫০ হাজার গুণ, আমার মসজিদে ( অর্থাৎ মসজিদে নববীতে) নামাজ আদায়ের সওয়াব ৫০ হাজার গুণ এবং মসজিদুল হারামে নামাজ পড়ার সওয়াব মহান আল্লাহ ১ লক্ষ গুণ বেশি দিয়ে থাকেন।

মসজিদুল হারাম পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্ধারিত প্রথম স্থান।সূরা আলে ইমরানের ৯৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে,সেটাই হচ্ছে এ ঘর,যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য বরকতময় ও হেদায়েতের উৎস।” কাজেই দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর বুকে প্রথম যে স্থাপনাটি তৈরি হয়েছিল সেটি ছিল কাবা শরীফ।হাদিসে এসেছে, সৃষ্টির শুরুতে প্রবল বন্যার পানির নীচে গোটা পৃথিবী তলিয়ে গিয়েছিল। এরপর ভূপৃষ্ঠের যে স্থান সবার আগে পানির উপরে ভেসে উঠেছিল সেটি ছিল কাবা শরীফের এই স্থান। মহান আল্লাহ ভূপৃষ্ঠকে এখান থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।হযরত আবু যর গিফারী (রা.) বর্ণনা করেছেন,‘আমি আল্লাহর রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “হে আল্লাহর রাসূল! পৃথিবীতে কোন মসজিদটি প্রথম তৈরি করা হয়?” তিনি উত্তর দিলেন, “মসজিদুল হারাম।” আমি আবার প্রশ্ন করলাম, “এরপর কোনটি?” তিনি উত্তর দিলেন, “মসজিদুল আকসা।” (মুসলিম)কুরআন-হাদীসের এই বিবরণ প্রমাণ করছে, মসজিদুল হারাম পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদ।
হাদিসে এসেছে, আদি পিতা হযরত আদম (আ.) প্রথম কাবা শরীফ নির্মাণ করেন। এরপর এটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর হযরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)’র সহযোগিতায় এটি পুনর্নির্মাণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)’র নবুওয়াত প্রাপ্তির আগে তাঁর উদ্যোগ ও দিক-নির্দেশনায় প্রাথমিক নকশার ভিত্তিতে কুরাইশ গোত্রের হাতে আবার কাবা শরীফ নির্মিত হয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মসজিদুল হারাম বহুবার পুনর্নির্মাণ করার পাশাপাশি এর উন্নতি ও সমৃদ্ধির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে মাত্র দু’টো মসজিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসার নাম একবার উল্লেখ করা হলেও কুরআন মাজীদে মসজিদুল হারামের নাম এসেছে ভিন্ন ভিন্ন মোট ১৫টি আয়াতে।মসজিদুল আকসা থেকে কেবলা পরিবর্তন করে যখন মসজিদুল হারামের দিকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, আল্লাহ তখন তার রাসূলের কাছে ওহী নাজিল করেন-নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ধারিত সত্য। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কাজ সম্পর্কে যা তারা করে। (সূরা বাকারা আয়াত -১৪৪)

হযরত মুহাম্মদ (সা)র মক্কা বিজয়ের পর কাবার মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলা হয়। ফলে কাবায় পৌত্তলিকতার চর্চা বন্ধ হয়ে যায়। রাসূল (সা)র সময় কাবা ও মসজিদুল হারামকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে অনেক বসতি গড়ে উঠেছিল যা পরবর্তীতে ক্রমবর্ধমান মুসল্লীদের জন্য সালাতের জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না।৬৯২ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদে প্রথম বড় আকারের সংস্কার সাধিত হয়। এর পূর্বে মসজিদ ছিল কাবাকে কেন্দ্র করে একটি খোলা স্থান। সংস্কারে ছাদসহ দেয়াল দিয়ে এলাকাটি ঘিরে দেয়া হয়। ৮ম শতাব্দীর শেষ নাগাদ মসজিদের পুরনো কাঠের স্তম্ভগুলোর বদলে মার্বেলের স্তম্ভ স্থাপন করা হয় এবং নামাজের স্থান বৃদ্ধিসহ মিনার যুক্ত করা হয়। ইসলামের প্রচার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে হাজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদে আরো সংস্কার করা হয়।
খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে প্রথমে উমর (রা) ও পরে উসমান (রা) মসজিদের আশেপাশের জায়গা লোকদের কাছ থেকে ক্রয় এর সীমা বর্ধিত করেন ও প্রাচীর দিয়ে দেন। পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়ের মসজিদের পূর্বদিকে এবং আবু জাফর মনসুর পশ্চিম দিকে ও শামের দিকে প্রশস্ত করেন। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন মুসলিম শাসকদের আমলে মসজিদুল হারামের সীমা বর্ধিত হয় ও সংস্কার সাধিত হয়।এরপর প্রায় এক হাজার বছর মসজিদের সীমা বর্ধিত করার কোনো কাজ করা হয় নেই। ১৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় সেলিম প্রধান স্থপতি মিমার সিনানকে মসজিদ পুনর্নির্মাণের আদেশ দেন। এই পুনর্নির্মাণের সময় সমতল ছাদগুলোর বদলে ক্যালিগ্রাফি সংবলিত গম্বুজ ও নতুন স্তম্ভ স্থাপন করা হয়। এগুলো বর্তমান মসজিদের সবচেয়ে পুরনো প্রত্ননিদর্শ‌ন।১৬২১ ও ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কাবা ও মসজিদ আল হারামের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান চতুর্থ মুরাদের শাসনামলে কাবা পুনর্নির্মিত হয় এবং মসজিদ আল হারাম সংস্কার করা হয়।মসজিদ সংস্কারের সময় পাথরের নতুন খিলান নির্মিত হয় এবং তিনটি নতুন মিনার যুক্ত করা হয়। মেঝেতে মার্বেলের আচ্ছাদন নতুন করে স্থাপিত হয়। এরপর প্রায় তিনশত বছর মসজিদের রূপ অপরিবর্তিত ছিল।সৌদি শাসন শুরু হওয়ার পর ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বড় আকারের সংস্কার সাধিত হয়। এসময় আরো চারটি মিনার যুক্ত করা হয়, ছাদ সংস্কার করা হয় এবং মেঝে পাথর ও মার্বেল দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়। সাফা ও মারওয়াকে এসময় মসজিদের দালানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংস্কারের সময় উসমানীয় যুগের অনেক অংশ বাদ দেয়া হয়েছিল।১৩৭০ হিজরীতে সৌদি বাদশাহ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুর রহমান আল সাউদ এর আমলে মসজিদের জায়গা ছয় গুণ বৃদ্ধি করে আয়তন হয় ১,৮০,৮৫০ মিটার। এ সময়ে মসজিদে মার্বেল পাথর, আধুনিক কারুকার্য, নতুন মিনার সংযোজন করা হয়। সাফা মারওয়া দোতলা করা হয়। ছোট বড় সব মিলিয়ে ৫১টি দরজা তৈরি করা হয় মসজিদে।এরপর সৌদি বাদশা ফাহাদ ইবন আব্দুল আযীয প্রশস্তকরণের কাজে হাত দেন। তিনি মসজিদের দোতলা, তিন তলা ও ছাদে সালাতের ব্যাবস্থা করেন। তিনি মসজিদের আধুনিকায়নের জন্য অনেক কাজ করেন।হারামের প্রশস্তকরনের কাজ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কাজ; কিন্তু মুসল্লিদের এক ইমামের পিছনে একত্রিত করাও ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগে মসজিদে চার মাযহাবের লোকেদের চারটি আলাদা মুসল্লা গড়ে উঠেছিল। এক আযানের পর চার আলাদা জায়গায় চার মাযহাবের লোকদের চারটি আলাদা জামাআত হতো। যার ফলে মুসলিমদের মাঝে ভাঙ্গন ও অনেক বিদ‘আতি প্রথা প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু পরে আল সাউদ এর আমলে সকল মুসলিমকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সালাফে সালেহীনদের পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন ও সকল মুসলিমদের এক ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের আদেশ দেন।১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়।১৯৮৮ থেকে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তৃতীয় সৌদি সম্প্রসারণ সম্পন্ন হয়। এসময় আরো মিনার যুক্ত করা হয়। সেসাথে আরাফাত, মিনা, মুজদালিফাতেও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মিত হয়। তৃতীয় সম্প্রসারণে ১৮টি নতুন ফটক যুক্ত করা হয়, প্রায় ৫০০টি মার্বেল স্তম্ভ যুক্ত করা হয়, তাপ নিয়ন্ত্রিত মেঝে, এয়ার কন্ডিশন, চলন্ত সিড়ি ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যুক্ত হয়।সর্বশেষ ২০১০ খৃঃ সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে মসজিদুল হারামের তাওয়াফ ও মূল মসজিদ প্রশস্তকরনের দায়িত্ব পায় সৌদি ইবন লাদেন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এখন এ প্রশস্তকরনের কাজ প্রতীয়মান। বর্তমানে প্রায় ৩০-৩৫ লক্ষাধিক মুসল্লি একত্রে সালাত আদায় করতে পারেন এবং আশা করা যায় এ কাজ শেষ হলে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক মুসল্লী একত্রে সালাত আদায় করতে পারবেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
সম্পূর্ণ মসজিদে এসি নেই। কিছু কিছু জায়গা ও বেজমেন্টে এসি রয়েছে।মসজিদের ভেতরে কিছু জায়গা মহিলাদের সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে, কিন্তু অনেকসময় দেখা যায় জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে মহিলারা পুরুষের সালাতের স্থানে দাঁড়িয়ে যান।মারওয়া গেট থেকে উমরাহ গেট পর্যন্ত মূল মসজিদুল হারামের সম্প্রসারণ ও অপর মসজিদ বিল্ডিং সংযোজন এর কাজ চলছে।মসজিদের ভেতরে সবসময়ই রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়।আপনি যতবারই মসজিদুল হারামে যাবেন ততবারই কিছু না কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবর্তনের কাজ লক্ষ্য করবেন।দিনের বেলা মক্কার আবহাওয়া একটু বেশি উত্তপ্ত আবার রাতের বেলায় হালকা ঠান্ডা পড়ে।মসজিদুল হারামের গ্রন্থাগারটিতে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রন্থ রয়েছে। ১০টি মৌলিক ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে কিতাবগুলো রাখা হলেও পাঁচ হাজার ৬০০ উপক্যাটাগরিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ৩৬ জন কর্মকর্তা নিরলসভাবে পাঠক-গবেষক ও আগত দর্শনার্থীদের সেবায় নিয়োজিত আছেন।মসজিদুল হারামের আশেপাশে বই বিতরণের কিছু ছোট ছোট বুথ আছে যেখান থেকে প্রায়ই বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়।মসজিদুল হারামের ভিতরে প্রবেশের জন্য ৯০টিরও অধিক গেট রয়েছে। মসজিদের দুই তলায় আরোহনের জন্য সিড়িঁ ও এস্কেলেটরের ব্যবস্থা আছে। কিছু জায়গায় লিফটের ব্যবস্থাও আছে।মসজিদের ভেতরে ও বাইরে পান করার জন্য যমযমের পানি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত এবং মক্কা লাইব্রেরির পাশ থেকে বড় বড় বোতলে কুপের পানি নিয়ে আসা যায়।মসজিদের ভেতরে অসংখ্য বুকশেলফ রয়েছে, সেখান থেকে ইচ্ছে করলে কুরআন শরীফ (নীল রংয়ের) নিয়ে তেলাওয়াত করতে পারবেন।মসজিদুল হারামের বড় বড় গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার সময় খেয়াল রাখবেন গেটের উপরে সবুজ আলো জ্বলছে কি না। যা প্রবেশ করা যাবে কি যাবে না; তা নির্দেশ করে।টয়লেট ও অযু করার ব্যবস্থা মসজিদের বাইরে। মসজিদের ভেতরে অযু করার ব্যবস্থা থাকলেও সংখ্যায় কম।সাফা ও মারওয়ার পাশে ওয়াশরুমের ছাদের উপর হারানো ও পাওয়া জিনিসের খোঁজ নেওয়ার অফিস আছে।মসজিদের আশেপাশে হাদী/ফিদইয়া টিকিট ক্রয়ের জন্য কিছু ব্যাংকের বুথ পাবেন। হাদীর টিকিট কিনার ইচ্ছা থাকলে আগেভাগে কিনে ফেলুন।মসজিদের বাইরে মূল গেটগুলোর পাশে কিছু লাগেজ লকার পাবেন।সাফা মারওয়ার পাশে শিয়াব বনি হাশিম রোডে লাশ পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্স অপেক্ষমান থাকে। জানাযার পর এখান দিয়ে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।তাওয়াফ ও সা‘ঈ করার জন্য মসজিদের ভেতরে বিনামূল্যে ও ভাড়াভিত্তিক হুইল চেয়ার পাওয়া যায়।মসজিদের প্রতি গেটে নিরাপত্তাকর্মী থাকেন ও সন্দেহজনক ব্যাগ চেক করেন। তারা সাধারণত বড় ব্যাগ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে দেন না।মসজিদের ভেতরে সবসময় নীল/সবুজ পোশাক পরিহিত পচ্ছিন্নতাকর্মীরা কাজ করেন; তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক।মসজিদের কিছু অংশের মেঝে কার্পেট দিয়ে আবৃত থাকে। অধিকাংশই থাকে উন্মুক্ত। হজের সময় কাছাকাছি হলে সব কার্পেট তুলে রাখা হয়।প্রায় প্রত্যেক ফরয সালাতের পর জানাযার সালাত হয়। তাই হুট করে সুন্নাত সালাতে না দাঁড়িয়ে জানাযার সালাত পড়ুন।মসজিদ প্রসস্থকরনের কাজের জন্য অস্থায়ীভাবে তাওয়াফের জায়গার উপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে তাওয়াফকারীদের জন্য।মসজিদুল হারাম সম্পর্কে আরও ধারণা নিতে সৌদি আরবের টিভি চ্যানেল দেখতে পারেন, সেখানে ২৪ ঘণ্টাই কাবা থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ চ্যানেলের জন্য আপনার ক্যাবল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন।

মক্কার পবিত্র মসজিদে হারাম প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা নিয়েছে সৌদির মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পরিষদ। এ প্রকল্পের পরিকল্পনা উন্মোচন করেছেন পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পরিষদের প্রধান ড. শায়খ আবদুল রহমান আল সুদাইস।পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায়কারী ও হজ পালনকারীদের জীবন মানউন্নয়ন ও সৌদি আরব সরকারের ভিশন-২০৩০ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বৃক্ষরোপণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।জলবায়ু ও পরিবেশ পরিবর্তনরোধে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন শায়খ সুদাইস। টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দূষণ ও তাপমাত্রা হ্রাস করে পরিবেশের উন্নয়ন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় কাবার আশপাশের শূন্য আঙিনায় বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশবান্ধব করা হবে। শায়খ সুদাইস বলেন, ‘প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিচালনাগত দিক থেকে গবেষণা করা হবে, যাতে করে কাবা প্রাঙ্গণে আসা মুসল্লিদের চলাফেরায় বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
মিসরীয় স্থপতি ড. কামাল মুহাম্মদ ইসমাইল
মসজিদুল হারাম ও মসজিদ-ই-নববীর যে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আমরা দেখছি তার সূচনা হয়েছিল মিসরীয় স্থপতি ড. কামাল মুহাম্মদ ইসমাইলের হাতে। তিনিই মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের আধুনিকায়নের প্রথম কারিগর। কামাল মুহাম্মদ ইসমাইলকে বলা হয় ‘প্রফেসর অব জেনারেশনস’। মিসরীয় এই স্থপতির সেরা অর্জন পবিত্র মক্কা ও মদিনার আধুনিক অবকাঠামো। বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ তাঁকে এই কাজের জন্য মনোনীত করেন।ড. কামাল মুহাম্মদ ইসমাইল মসজিদুল হারাম ও মসজিদ-ই-নববীর আধুনিকায়ন প্রকল্পে কাজের কোনো বিনিময় গ্রহণ করেননি। বাদশাহ ফাহাদ ও বিন লাদেন কম্পানিকে শত কোটি টাকার চেক ফিরিয়ে দেওয়ার সময় তিনি বকর বিন লাদেনকে বলেন, ‘পবিত্র দুই মসজিদের সেবার বিনিময় আমি কিভাবে গ্রহণ করব? তাহলে বিচার দিবসে আল্লাহকে কিভাবে মুখ দেখাব?’মসজিদুল হারামের মার্বেল পাথর স্থাপন নিয়ে একটি চমৎকার ঘটনা রয়েছে—যার সঙ্গে ড. কামাল মুহাম্মদ ইসমাইলের নামও জড়িয়ে আছে। মসজিদুল হারামের আধুনিকায়নের সময় তাওয়াফের স্থানটুকু মার্বেল পাথর বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। তখন গ্রিসের একটি পাহাড়েই সবচেয়ে ভালো সাদা মার্বেল পাথর পাওয়া যেত। তিনি গ্রিসে যান এবং প্রয়োজনীয় মার্বেল পাথরের কেনার চুক্তি করেন। পরে মসজিদুল হারামে মার্বেল পাথর বসানোর কাজ সম্পন্ন করেন। ১৫ বছর পর সৌদি সরকার তাঁকে মসজিদুল হারামের মতো মসজিদ-ই-নববীতেও মার্বেল পাথর বসানোর কথা বলেন। বাদশার পরিকল্পনার কথা শুনে প্রকৌশলী কামাল মুহাম্মদ ইসমাইল চিন্তায় পড়ে যান। কেননা এই মানের পাথর তো কেবল গ্রিসেই পাওয়া যায়। আর মসজিদুল হারামের কাজের জন্য তার প্রায় অর্ধেক আগেই কেনা হয়েছে। তবু তিনি গ্রিসের সেই কম্পানির সিইওর সঙ্গে দেখা করেন এবং সাদা মার্বেল পাথরের মজুদ সম্পর্কে জানতে চান। তাঁকে জানানো হয় তাদের অবশিষ্ট মজুদ ১৫ বছর আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি ব্যথিত হলেন। তবে গ্রিস ত্যাগ করার আগে কম্পানির ক্রেতার ঠিকানা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। পরদিন পাথর কম্পানি জানায় একটি সৌদি কম্পানি মার্বেল পাথরগুলো কিনেছিল। তিনি তাদের কাছ থেকে ক্রেতার ঠিকানা সংগ্রহ করলেন।প্রকৌশলী কামাল মুহাম্মদ ইসমাইল সৌদি আরবে পৌঁছে পাথর ক্রয়কারীর কম্পানির পরিচালকের সঙ্গে দেখা করলেন। তাদের কেনা পাথরের মজুদ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। কম্পানির পরিচালক মজুদখানার দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানান তাদের কেনা পাথরের পুরোটাই থেকে গেছে। তা কোথাও ব্যবহূত হয়নি। পরিচালকের কথা শুনে কামাল শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করলেন এবং কম্পানির পরিচালককে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তিনি তাঁকে একটি ‘ব্লাংক চেক’ দিয়ে বলেন আপনার ইচ্ছামতো পরিমাণ লিখে নিন। কিন্তু মসজিদ-ই-নববীতে ব্যবহূত হবে জেনে কম্পানির পরিচালক এক টাকাও গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। পুরো মার্বেল পাথর মসজিদ-ই-নববীর কাজে ব্যবহূত হয়। ২ আগস্ট ২০০৮ মহান এই প্রকৌশলী ইন্তেকাল করেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...