সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামে শহিদ রানতিসি


মো.আবু রায়হান
পুরো নাম আবদুল আজিজ আলি আবদুল মজিদ আল রানতিসি। রানতিসির জন্ম হয় ১৯৪৭ সালের ২৩ অক্টোবর অর্থাৎ ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র ঘোষিত হওয়ার সাত মাস আগে। ইসরাইলের অস্তিত্ব ঘোষিত হওয়ায় তার বাবা মা ইয়াফা থেকে হিজরত করে গাজার খান ইউনুস শরণার্থী শিবিরে উঠেন। রানতিসি ছয় বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু প্রকট আর্থিক সমস্যার কারণে পরিবারকে সহায়তার জন্য তাকে ওই বয়সেই পড়াশুনার পাশাপাশি বিক্রেতার কাজ করতে হয়েছে। হাইস্কুলের পাঠ শেষে মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিভাগের ছাত্র হন রানতিসি।১৯৭৬ সালে এই বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে পাস করেন তিনি। এরপর রানতিসি সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চিকিৎসা শিক্ষাদান এবং অসুস্থ ও আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসায় নিয়োজিত হন।
ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ রানতিসি ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার কারাগারে পাঠায়। ১৯৯৭ সালে শেষ বারের মত কারামুক্ত হয়েছিলেন রানতিসি। ১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
১৯৯২ সালে হামাস এবং ইসলামী জিহাদ দলের চার শত জন সক্রিয় মুজাহিদ ও নেতাসহ ডক্টর রানতিসিকে লেবাননে নির্বাসনে পাঠায় ইসরাইল। সেখানে তিনি তাদের আনুষ্ঠানিক মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। এর কিছুকাল পর জনমতের চাপের মুখে ইসরাইল রানতিসিসহ নির্বাসিত ওই ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদেরকে ফিলিস্তিনে ফিরে আসার অনুমতি দেয়। ফিরে আসার পর পরই রানতিসিকে গ্রেফতার করে ইসরাইল এবং ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখে। জীবনের শেষের দিনগুলোতে ডক্টর রানতিসি ফিলিস্তিনি জাতির শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী সংগ্রামী নেতা এবং হামাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রধান হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। তাই ইসরাইলের গুপ্তচররা তাকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকে। ২০০৩ সালের বসন্তে রানতিসিকে হত্যার ইসরাইলী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শহীদ রানতিসি হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ ইয়াসিনের ২০০৪ সালে শাহাদতের পর হামাসের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ২৬ দিন পর ইসরাইলের ঘাতক-স্কোয়াড তাকেও শহীদ করে। ২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল ইসরাইলী হেলিকপ্টারের হামলায় শহীদ হওয়ার সময় তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। এ হামলায় রানতিসির দুই সঙ্গী ও সন্তানও শহীদ হন। এসব হত্যাকান্ড সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়তেই থাকে।প্রখর স্মৃতি-শক্তি, দূরদর্শিতা এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ ছিল ডক্টর রানতিসির কিছু বৈশিষ্ট্য। তিনি ইংরেজী ভাষায়ও বেশ দক্ষ ছিলেন।
Rantisi opposed compromise with Israel and called for the creation of a Palestinian state (including the whole of the State of Israel) through military action against the Jewish state. তার বিখ্যাত কিছু উক্তি -"ফিলিস্তিন আমাদের ইমানের অংশ। খলিফা ওমর (রা.) এ ভূমিকে মুসলিমদের জন্য ঘোষণা করেছিলেন। তাই, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এ অধিকার নাই যে সে এ পূণ্যভূমি কারো কাছে বিক্রি করে দিবে বা কারো হাতে তুলে দিবে"। ("All the land of Palestine is a part of the Islamic faith and the Caliph Omar bin al-Khattab declared it for all Muslims. Therefore, no individual or group has the right to sell it or give it up.")
• "আমাদের যাত্রা নিরবিচ্ছিন্ন। আমাদের পথ বড়ই কঠিন। কিন্তু এই একমাত্র পথই আমাদেরকে প্রত্যাশিত বিষয় পর্যন্ত পৌঁছে দিবে। তাই দূর্বলতা, নতিস্বীকার ও হীনমন্যতার কোনো অবকাশ নাই।"
• "যারা জালেমের সামনে মাথা উঁচু করার শিক্ষা দেয়না, তারা আল্লাহর সামনে মাথা নিচু করার শিক্ষাও দিতে পারেনা"।
• উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো-
"আপনি কি বিছানায় শুয়ে থেকে মরতে চান, নাকি এপাচি হেলিকপ্টারের গুলিতে?
-মৃত্যুর জন্য আমি এপাচি হেলিকপ্টারের গুলিকেই প্রাধান্য দিবো।
"The Israelis will not know security. We will fight them until the liberation of Palestine, the whole of Palestine." (The New York Times , 22 March 2003)
"If Israel was established in Britain, would you accept compromise?", to British journalist Derek Brown,
আল্লাহ তায়ালা বলেন: মুমিনদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর সাথে তাদের করা অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ (অঙ্গীকার পূর্ণ করে) মারা গেছে এবং কেউ কেউ প্ৰতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব আয়াত -২৩)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...