সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারীর প্রলোভন ও সাইয়েদ কুতুবের ঈমানী পরীক্ষা




মো. আবু রায়হান
নীল নদের দেশ মিসর, ফেরাউনের দেশ মিসর, পিরামিডের দেশ মিসর, জামাল নাসেরের দেশ মিসর, হাসানুল বান্নার দেশও মিসর। সেই মিসরে জন্মগ্রহণ করেছেন তাফসীর ফি যিলালিল কোরআনের লেখক সাইয়েদ কুতুব শহীদ (১৯০৬ - ১৯৬৬)। মিসরের ইতিহাস পাঠ করলে ফেরাউনের অত্যাচারের লোমহর্ষক ঘটনাবলী সবার মনে আজও মনের অজান্তে ভেসে ওঠে। ফেরাউনের মুখোশ মানুষের সামনে উন্মোচন করে দেওয়ার জন্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত মুসা (আঃ) কে পাঠিয়েছিলেন। মিসরের ইতিহাসে ফেরাউনের পরে অনেক নব্য ফেরাউন জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদেরই একজন ছিলেন জামাল আবদুল নাসের। যিনি মিসরের জালেম-শাহী প্রেসিডেন্ট ছিলেন। জামাল আবদুল নাসের অন্যায় অত্যাচার জুলুম জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্যেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল্লামা সাইয়েদ কুতুব শহীদকে ইসলামের জন্য নির্বাচিত করে পাঠিয়েছিলেন। আল্লামা সাইয়েদ কুতুব শহীদ ১৯০৬ সালে মিসরের উসউত জেলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই মহান ব্যক্তির বংশীয় উপাধি হচ্ছে কুতুব।তিনি ছিলেন মিশরীয় ইসলামী চিন্তাবিদ এবং বিপ্লবী রাজনৈতিক সংগঠক। সাইয়েদ কুতুব মিশরের ইসলামী আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিন দলের মুখপত্র ইখওয়ানুল মুসলিমিন'এর সম্পাদক ছিলেন। তাকে তৎকালীন মিসর সরকারের আদেশে ফাঁসি দেয়া হয়।
সাইয়েদ কুতুব শহীদ(রহ.) সমুদ্র পথে আমেরিকাতে যাচ্ছেন। সাগরের ঢেউয়ের তালে তালে জাহাজ চলছে। পানির কল কল শব্দে তিনি আল্লাহর সৃষ্টির নিয়ে ভাবছেন। নিজের মনের মধ্যে বার বার একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে- আমি কি সেই আমেরিকাতে যাচ্ছি, যারা খাওয়া ও ঘুমকে যথেষ্ট মনে করে। যারা ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে! যাদের জীবনে বৈধ কি অবৈধ এর কোন সীমারেখা নেই। তিনি মনে মনে স্থির করলেন আমেরিকাতে গিয়ে দাওয়াতের কাজ করবেন। আল্লাহর এই বান্দা জাহাজেই পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন। সাইয়েদ কুতুব তার কক্ষে অবস্থান করছেন। বাহির থেকে কে যেন দরজায় নক করছে। তিনি দরজা খুলেই চমকে উঠলেন। এক সুন্দরী রূপসী যুবতী নগ্ন-প্রায় দেহে তার সামনে দণ্ডায়মান। সাইয়েদ কুতুবকে সুন্দরী রমণী বললেন। জনাব,আমি কি আজ রাতে আপনার রুমের মেহমান হতে পারি? সাইয়েদ কুতুব জবাব দিলেন, দুঃখিত। রুমে একটিই খাট। আর তা একজনের জন্যই নির্ধারিত। কুতুবের এই কথা শুনার পর যুবতী বলল, খাট এত প্রশস্ত যে, এতে দুজনই থাকা যায়। যুবতী ঘরে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। আল্লাহর ভয়ে ভীত সাইয়েদের মন যুবতীর দিকে একটুও টলেনি। তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন। কু-প্রবৃত্তির উপর নৈতিকতার এর চেয়ে বড় জয় আর কি হতে পারে? চাওয়া পাওয়ার এই দুনিয়াতে নারীর প্রতি অবৈধ লোভ লালসা জন্মায় না কেবল দ্বীনদার পরহেজগার মুমিনের।
উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,“আমার পর আমি পুরুষের জন্য নারীর ফেতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকারক
কোনো ফিতনা রেখে যাইনি”। (বুখারী ও মুসলিম)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...