রমজানে বিশেষভাবে করণীয়


কুরআন তিলাওয়াতে যত্ম নেয়া: রমজান হলো কুরআনের মাস। এ মাসে হযরত জিব্রাইল (আ.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পূর্ণ কুরআন উপস্থাপন করতেন। সাহাবায়ে কেরাম রমজান মাসে কুরআন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন। অনেক সাহাবী রমজানের প্রতিদিন কুরআন খতম করতেন। বহু পূর্বসুরী রমজান মাসে প্রতি তিন দিনে কুরআন খতম করতেন। তাই কুরআন তেলাওয়াতে বিশেষভাবে যত্ম নেয়া উচিত।
তারাবীহসহ আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতে রাত্রি জাগরণ: হযরত উমর (রা.) রমজানের মধ্যরাতের পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিয়ে ‘নামাজ’ ‘নামাজ’ বলে উৎসাহ দিতেন। হযরত উসমান (রা.) রমজানের রাত্রে এমন দীর্ঘ নামায পড়তেন যে অনেক সময় এক রাকাতে পুরো কুরআন পড়ে ফেলতেন।
দান-সদকা করা: রমজান মাসে তাক্বওয়া অর্জনের আরেকটি মাধ্যম হলো সদকা। নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে স্বত্ব ত্যাগ করে গরীব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেয়াকে সদকা বলে। রাসূল (সা) ছিলেন সবচে’ বড় দানবীর। আর রমজান মাসে তিনি সর্বাধিক দান-সদকা করতেন। তিনি বলেন- সর্বোৎকৃষ্ট সদকা হলো রমজানের সদকা।
রোজাদারকে ইফতার করানো: হযরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- রাসূল (সা) ইরশাদ করেন- ‘যে রমজান মাসে কোন রোজাদারের ইফতারের ব্যবস্থা করবে তবে তার পাপ মোচন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং রোজাদারের মূল প্রতিদানের কোন অংশ কমানো ব্যতিরেকে সে রোযাদারের সমান প্রতিদান পাবে।’
সাহাবারা বলে ওঠলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য তো আমাদের সবার নেই! তখন রাসূল (সা) বলেন- ‘যারা একটুখানি দুধ বা একটি খেজুর বা এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তা‘য়ালা তাদেরকেও এই সওয়াব দিবেন।’ (ইবনে খুযাইমা ও বায়হাকী)
ই‘তিকাফ: রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট মণ্ডিত আমল হলো শেষ দশ দিন ই‘তিকাফে থাকা। রাসূল (সা) প্রতি বছর রমজানের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ থাকতেন। তবে তার ইন্তিকালের বছর তিনি বিশ দিন ই‘তিকাফ ছিলেন।
সুতরাং ই‘তিকাফ যে কোন সময় হতে পারে। কিন্তু অধিক তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ হলো রমজানের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ থাকা। যাতে লাইলাতুল ক্দর লাভের সৌভাগ্য হয়।
লাইলাতুল কদর: রমজান মাসের আরেক নেয়ামত হলো লাইলাতুল কদর। রমজানের শেষ দশ দিনের যে কোন বেজোড় রাত লাইলাতুল ক্দর হতে পারে। তবে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে ২৭ তম রাত্রি লাইলাতুল ক্দর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
লাইলাতুল ক্দরের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘অবশ্যই আমি এ কুরআনকে লাইলাতুল ক্দরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি (হে নবী) কি জানেন- লাইলাতুল ক্দর কি? তা হচ্ছে এমন এক রাত যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ (সুরা ক্দর আয়াত ১-৩)
সদকাতুল ফিতর: সদকাতুল ফিতর রমজান মাসে দিতে হয় এমন একটি অনুদান। যাতে মুসলিম সমাজের অভাবী ব্যক্তিরাও যেন স্বাচ্ছন্দে ঈদ উদযাপন করতে পারে। ঈদের নামাজের পূর্বেই এই সদকা আদায় করতে হয়। সাহাবায়ে কেরাম ঈদের বেশ কয়েক দিন পূর্বে অভাবীদের কাছে এ সদকা পৌঁছে দিতেন। যাতে তারা ঈদের জামা-কাপড় এবং বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী কেনাকাটা করে খুশি মনে ঈদ উদযাপন করতে পারে ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল