শক্তি না যোগ্যতা কোনটি বড়?



আজকাল জ্ঞান গরীমা যোগ্যতার চেয়ে শক্তিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। হোক না সেটা পেশি শক্তি কিংবা রাজনৈতিক শক্তি। ভারতে এমন একজন লোকও বোধহয় নেই যে গামা পালোয়ানের নাম জানে না।গোলাম মুহাম্মদের পাঞ্জাবি ডাকনাম ছিল গামা। একটি মুসলিম পরিবারে তিনি জন্ম নেন।৫০ বছরের কর্মজীবনে তিনি অপরাজেয় হিসেবে টিকে ছিলেন। তাকে তার সময়ের শ্রেষ্ঠ পালোয়ান হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তিনি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তান চলে যান। আজ থেকে বহু বছর আগে বিশ্বের সকল পালোয়ানকে হারিয়ে তিনি ‘রুস্তমে জহ’ বা বিশ্বজয়ী পালোয়ান খেতাবটি জয় করেছিল।এই উপাধি লাভের পূর্বে তিনি ‘রুস্তমে হিন্দ’খেতাব পেয়েছিলেন ভারতের তাবড় বড়ো পালোয়ানদের পরাস্ত করে।বিশ্ববিখ্যাত কুস্তিগির গামা পালোয়ান আর জগত বিখ্যাত কবি আল্লামা ইকবাল ছিলেন একই এলাকার অধিবাসী। তাদের উভয়ের মধ্যে ছিল গভীর বন্ধুত্ব ও ভালো সম্পর্ক।তাদের মধ্যে প্রায় বিতর্ক হতো যোগ্যতা, জ্ঞান বড় না শক্তি বড় ইত্যাদি নিয়ে? তো ভারতে খেলাফত আন্দোলনের সময় এক সমাবেশে তারা দুজনেই উপস্থিত হলেন। হঠাৎ করে কবি ইকবাল বলে উঠলেন, এইবার গামা সাহেব,বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের মাঝে কিছু বলবেন,সবাই হৈ,চৈ করে উঠলেন। টানটান উত্তেজনা। জনগণ অস্থির। তারা বললেন, হ্যাঁ,হ্যাঁ গামা সাহেবের বক্তব্য শুনবো।
,গামা সাহেব,না,না,না,এই আত্মচিৎকারে সকলের উৎসাহ আর আগ্রহের কাছে পাত্তাই পেল না।
অতি কষ্টের সহিত গামা মঞ্চে দাড়িঁয়ে বললেনঃ "ভাই সকল আপনারা,দেহের শক্তি বাড়ানোর জন্য আপনারা সকল সন্ধ্যা কুস্তি করবেন,কুস্তি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
কাপাঁ গলায় এই কথা বলতে বলতে তিনি বসে পড়লেন। রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে তিনি বলেন,আমি রোজ ভোরে উঠে ৫ সের সর্ষের তেল মালিশ করি।তারপর দুহাজার বৈঠক ও দেড়শো ডন দেই।এরপর খেয়ে দেয়ে ৩ মাইল দৌড়াই।তারপর দুপুরের খাওয়া সেরে লাঙ্গল চালাই।সন্ধ্যায় আবার ডন এবং বৈঠক দেই একটুও ঘাম দেখা যায় না,আর এই শালাপুত কবি আমারে কি মুশকিলে ফেলেছে,আমার সারা গা,ঘামে ভিজে যাচ্ছে,, শালা কবি ইকবাল তুই খেয়াল রাখিস,তুই গামা পালোয়ানের গায়ের ঘাম ঝরাইছিস"।
শুধু গামা পালোয়ানের মত শক্তিশালী কুস্তিবিদ হলে ভালো বক্তা হওয়া যায়না,তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গামা পালোয়ান, শারীরিক,শক্তি,সুন্দর্য্যের কোন দাম নাই,যদি নিজের ভিতর যোগ্যতাশক্তি না থাকে।কেউ যদি শুকনা,বাটি,কুৎসিত,কালো হয় তাতে কিছু আসে যায়না যদি তার ভিতর যোগ্যতা থাকে,, একটু খেয়াল করেন সমাজে যাদের বেশী যোগ্যতা,তারা বেশী সম্মানের অধিকারী, তারা সমাজে প্রতিষ্টিত,আর গামা পালোয়াদের মত লোকদের অবস্থা সারাজীবন কলুর বলদের মত খাটা।
গামার শেষ ১৬ টি বছর চরম দারিদ্র এবং দুঃখ, কষ্টের মধ্যে কেটেছে।রবি নদীর ধারে একটা ছোট্ট কুড়ে ঘরে তাকে শেষের দিনগুলি কাটাতে হয়েছে।পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সোনা এবং রুপার মেডেল এবং অন্যান্য জিনিসপত্তরগুলো বিক্রি করে তাকে বেঁচে থাকতে হয়েছে।এরপর এলো আরো এক বিপদ।রবি নদীর ধারে বেড়ানোর সময় হঠাৎ একদিন একটা সাপ তাকে ছোবল দেয়।সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলো।তার শরীর কালো এবং তিনি দুর্বল হয়ে পড়লেন।তিনি শয্যা নিলেন।তার অসুখের সংবাদ পেয়ে ভারতবাসীরা বিচলিত হলো।পাতিয়ালার মহারাজ,বিড়লা এবং অন্যান্যরা তাকে সাহায্য পাঠানো শুরু করে দিলেন।কিন্তু সেই সাহায্য পৌছনোর আগেই তাঁর মৃত্যু হলো।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল