অন্যের প্রতি কেমন আচরণ হওয়া উচিত

 

মানুষের আচার-আচরণ মার্জিত, শালীন ও ভদ্রোচিত হওয়ার প্রতি ইসলাম জোরালো তাগিদ প্রদান করেছে। মানুষের আচার-ব্যবহার ও চলাচলের যেসব বিষয় থেকে গর্ব ও অহংকার ফুটে ওঠে, সেগুলো বৈধ কাজ নয়। অহংকার প্রকৃত পক্ষে মানুষের অন্তরের একটি কবিরা গুনাহ। বিনয় ও কোমলতা নবীদের গুণ। অন্যদিকে অহঙ্কার ও কঠোরতা হলো শয়তানের বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর প্রথম মানব আদম (আ.) আল্লাহর নির্দেশ ভঙ্গ করার পর আল্লাহর প্রশ্নের মুখে তিনি অহঙ্কার না করে বরং পুরোপুরি বিনয় ভাব নিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে বলেছেন, হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি, আপনি ক্ষমা ও দয়া না করলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো (সুরা আ'রাফ)। বিপরীতে ইবলিস আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে নিজের পক্ষে অহঙ্কারমূলক যুক্তি প্রদর্শন করে বলেছে, আমি তার চেয়ে উত্তম; আমাকে আপনি আগুন দ্বারা তৈরি করেছেন, আর তাকে বানিয়েছেন মাটি দ্বারা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষকে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত করে বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা অহির মাধ্যমে আমার কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছেন যে বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করো। কেউ যেন অন্যের ওপর গর্ব ও অহংকারের পথ অবলম্বন না করে এবং কেউ যেন কারও ওপর জুলুম বা নির্যাতন না করে।’ (মুসলিম)-‘ রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন , উত্তম নৈতিক চরিত্র ও আচার ব্যবহারের ন্যায় নেকীর পাল্লা ভারী করতে আর দ্বিতীয় কোন আমল নেই। আর আল্লাহ অশ্রাব্য গালমন্দ ও কটুকথা বলে এমন ব্যক্তিকে খুবই ঘৃণা করেন’। (তিরমিযী/আবু দাউদ)
সবারই উচিত অন্যের সঙ্গে সব সময় হাসিমুখে কথা বলা। নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন-‘তোমার ভাইয়ের সাথে মুচকি হাসির বিনিময় করাও সাদকার সওয়াব হয়ে যায়’। (তিরমিযী)।রাসুলুল্লাহ (সা.) জাতি-ধর্ম-বর্ণ, মুসলিম-অমুসলিম, দলমত-নির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। তিনি স্বয়ং সদ্ব্যবহারের সর্বোত্তম নিদর্শন। তাঁর কাছ থেকে ইসলামের প্রকাশ্য শত্রুরাও আশাতীত সুন্দর কোমল আচরণ লাভ করত। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলে; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৫৯)
এরশাদ করেন-‘সবচেয়ে ঈমানদার হচ্ছে ঐ লোক যার চরিত্র সর্বোত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সে লোক সর্বোত্তম যে তাদের স্ত্রী-পরিবারের প্রতি উত্তম আচরণে অভ্যস্ত’। (আহমদ/তিরমিযী)
সহনশীলতার প্রচণ্ড অভাব মানুষের জীবনের মূল্যায়ন বিনষ্ট করে দেয়। পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহনশীলতার অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সহনশীল হওয়ার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সহনশীলতার শক্তি দান করবেন, আর সহনশীলতা থেকে অধিক উত্তম ও ব্যাপক কল্যাণকর আর কিছুই কাউকে দান করা হয়নি।(বোখারি ও মুসলিম)আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ভাল ও মন্দ সমান নয়। উত্তরে তাই বলুন, যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। এ চরিত্র তারাই লাভ করে, যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা অত্যন্ত ভাগ্যবান। ’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত ৩৪-৩৫)
শুধু মানুষ হিসেবে জাতি-গোষ্ঠী, দলমত-নির্বিশেষে যদি কোমলতা ও নমনীয়তার মাধ্যমে মানবতার কল্যাণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান করা যায়, তাহলে তার সুফল আসে বলপ্রয়োগ ও কঠোর ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রাপ্য থেকে আশাতীত বেশি। কেননা, মানব চরিত্রের অপরিহার্য গুণ কোমলতা ও নমনীয়তা থাকাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।সুরা ফোরকানের ৬৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, আর দয়াময়ের বান্দা তো তারাই, যারা জমিনে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খদের সঙ্গে কথা বলার সময় (বিতর্ক না করে) সালাম বলে বিদায় নেয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল