সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হিজরি সন থেকে যেভাবে বাংলা সনের উৎপত্তি হলো এবং কিভাবে ইংরেজি থেকে বাংলা সন বের করবেন?

 

সন আরবি শব্দ। অর্থ হলো অব্দ বা বর্ষ বা বর্ষপুঞ্জ। আবার সনকে সাল বলা হয়। সাল ফার্সি শব্দ।
ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট ছিলেন আকবর। তিনি প্রায় অর্ধ শতাব্দী ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেন।উল্লেখ্য, আকবরের রাজত্বকাল ছিল ১৫৫৬-১৬০৫ সাল পর্যন্ত। সম্রাট আকবর বাংলাসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশ থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে কতিপয় ‘ফসলি সাল’ প্রবর্তন করেন। বাংলা বর্ষ সম্রাট আকবর প্রবর্তিত সেই সব ফসলি সালের একটি। সেই সময় থেকে এ দেশের মানুষ চাষাবাদ, খাজনা পরিশোধ, সংবছরের হিসাব-নিকাশ সব কিছুতেই বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে থাকে, যেটা মুঘল শাসন আমল সম্রাট বাবর থেকে শুরু করে বাহাদুর শাহ জাফর তারপর ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান শাসনামল পার হয়ে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে বাংলা সন।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)-এর ইন্তেকালের পর ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা:)-এর সময়কালে হজরত আলী (রা:)-এর প্রস্তাবে মহানবী (সা:)-এর হিজরতের দিন থেকে হিজরি সন গণনা শুরু হয়। সেটি ছিল ৬২২ সালের ১৬ জুলাই। হজরত ওমর (রা) ৬৩৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরি সনের প্রবর্তন করেন। বছরটি ছিল ১৭ হিজরি।হিজরি সন থেকেই সূচনা হয় বাংলা সনের। এর আগে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস।
সম্রাট আকবরের অর্থ বিভাগের উপদেষ্টা টোডরমলের সহকারী আমির ফতেউল্লাহ সিরাজী বাংলা মাসের নামগুলো নক্ষত্রের নাম থেকে নিয়ে সৌর মাসের দিন মিলিয়ে বাংলা সন প্রবর্তন করেন। সম্রাট আকবরের দরবারে বিখ্যাত নবরত্ন সভার’ বাইরেও অনেক মেধাবী পণ্ডিত ছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম আমির ফতেউল্লাহ সিরাজী। তাকেই দায়িত্ব দেয়া হয় নতুন বর্ষপঞ্জি প্রণয়নের।
৯৬৩ হিজরি সনের মহরম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস। এ জন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং পয়লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।হিজরি সনের গণনা করা হয় চাঁদের হিসাবে আর বাংলা সন গণনা করা হয় সৌর হিসেবে। চন্দ্র বা চাঁদের হিসাবে ৩৫৪ দিন আর আর সৌর হিসাবে ৩৬৫ দিন। আজ থেকে ৪৩৭ বছর আগে মুঘল সম্রাট আকবর পয়লা বৈশাখ প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলা সনের সূচনা করেন। ইংরেজি ১৫৮৪ সালে পয়লা বৈশাখকে বাংলা সনের প্রথম দিন নির্ধারণ করে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করা হলেও তার কার্যকারিতা দেখানো হয় ২৯ বছর আগে ইংরেজি ১৫৫৬ সালের ১১ মার্চ থেকে অর্থাৎ সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে। সেই হিসাবে ৪৬৫ বছর আগে ৯৬৩ হিজরিতে ৩৫৪ দিনের গণনায় এনে সম্রাট আকবর নতুন বাংলা সন প্রবর্তন করেন। খুব সহজে ইংরেজি তারিখ এবং সালের সাথে মিলিয়ে বাংলা সাল বের করা যায়।আকবর যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন ইংরেজি ছিল ১৫৫৬ এবং হিজরি ছিল ৯৬৩ হিজরি। দুই সনের পার্থক্য (১৫৫৬-৯৬৩)= ৫৯৩। এখন ইংরেজী সন থেকে সহজে ৫৯৩ বিয়োগ করে বাংলা সন বের করে নিতে পারবেন।যেমন বর্তমান (২০২১-৫৯৩) = ১৪২৮। যদি সালটি ১লা জানুয়ারি থেকে ১৩এপ্রিলের মধ্যে হয় তাহলে ইংরেজি সাল থেকে ৫৯৪ বিয়োগ করলেই বাংলা সন বের হবে। যেমন-
১৯৫২ সালের ২১ এ ফেব্রুয়ারি বাংলা কোন সন ছিল? নির্ণয়: ১৯৫২ — ৫৯৪ = ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ।
আর যদি সালটি ১৪ এপ্রিল থেকে বাকি মাস হলে ৫৯৩ বাদ দিলে বাংলা সন বের হবে। যেমন—১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলা কোন সন ছিল? নির্ণয়: ১৯৭১ — ৫৯৩ = ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...