মানবিক সংসার




দশ বছর হয়েছে শিমুর বিয়ের। ঘর আলোকিত করে ফুটফুটে একটি সন্তানের আগমনের ব্যাকুলতায় সে ছিল অস্থির। কিন্তু তার সেই ব্যাকুলতা কখনো আলোর মুখ দেখেনি। বিষন্নতা আর হতাশায় তার মনের কার্নিশে ভারি মেঘ জমে আছে। স্বামী, বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ি নিয়ে তার অপূর্ণ সংসার। অপূর্ণ মানে একটি সন্তানের অভাব বোধ আরকি। উচ্চ শিক্ষিত শিমু একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। চাকরিটা জোটে শ্বশুরের একান্ত চাওয়ায়। স্বামী সোহান একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে জব করে। সেই সুবাদে সেখানেই তার থাকা। কখনো সখনো বাসায় যাওয়া হয়। তবে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটিতে বাসাতেই সময় কাটে সোহানের। সংসার স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য পালনে সোহান বড্ড বেখেয়াল।এদিকে শিমুও তার চেপে রাখা কষ্ট গুলো শেয়ার করার জন্য মরিয়া।নিসঙ্গ জীবনে একটু সঙ্গের আশায় কখনো অমিত,ক্লাসমেট দীপন, কখনো রোহান তার টাইম পাসের বন্ধু। দিনরাত ফোনে কথা চলছে। ননস্টপ কথা না বললে যেন শিমুর পেটের ভাত হজমই হতো না। এরমধ্যে দীপনের সঙ্গে রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে শিমু। রাত বিরাতে দুজনের কথা, মিট করা, আড্ডা সমানতালে চলছে। সোহান এসব দেখেও কেয়ারলেস।তার আবেগ অনুভূতি যেন ভোঁতা হয়ে গেছে। এরমধ্যে শিমু সোহানকে ডিভোর্স দিতে চায়। দীপনের সঙ্গে রিলেশনের বিষয়টি গোপন করে সংসার জীবনের নানান অপ্রাপ্তি নিয়ে শিমু একদিন তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে। একপর্যায়ে শিমু সোহানকে ডিভোর্স দেব বলে তার মাকে সোজা সাপটা জানিয়ে দেয়।তার মা মৌন সম্মতি দেয়। সামনে রমজান মাস।তাই শিমুর মা এক দশকের সংসার জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আপাতত বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ির কথা ভেবে, রমজানের পরে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতে বলে। রমজান শিমুুর জীবনে এক অন্যরকম অনুভূতির। দশ বছরের আগলে রাখা সংসারটা বালির স্তুপের মতো দাঁড়িয়ে।ইদানিং রমজানের তিরিশটা দিন, এ সংসার শিমুর কাছে মানবিক সংসারের মতো মনে হয়!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল