হক্কানি আলেম কিভাবে চিনবেন ও তাঁদের মর্যাদা


যারা প্রকৃত আলেম তাদের মর্যাদা আল্লাহর দরবারে অতি উচ্চে। সাধারণ মানুষের মাঝে আলেমরা হলেন নক্ষত্ররাজিতুল্য। যাদেরকে অনুসরণ করার মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথের সন্ধ্যান লাভ করে থাকে। মহানবী (সা) বলেছেন, “পৃথিবীতে আলেমদের উদাহরণ হলো নক্ষত্ররাজির মতো। এদের সাহায্যে জল ও স্থলের অন্ধকারে পথের দিশা পাওয়া যায়। আর যদি তারকারাজি নির্মিলিত হয়ে যায়, তবে পথিকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। (মুসনাদে আহমাদ ও জামিউস সগীর)
একজন সাধারণ দ্বীনদার ব্যক্তিদের জন্য হক্কানী আলেম চিনার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল,যে আলেমের চেহারা ও পোশাকে সুন্নতের ছাপ রয়েছে,কথায় আচরণে তাকওয়া পরহেযগারী,দাওয়াত ও তাবলীগের প্রতি মোহাব্বত রাখে, হক তাসাউফের প্রতি বিশ্বাস রাখে, বিদআতের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে, সুন্নতের প্রতি থাকে সদা আগ্রহী।
হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহ) হতে বর্ণিত যে, একদা ওমর (রা) আকাবিরে তাবেয়ীনদের অন্যতম কাবে আহবার (রহ) কে জিজ্ঞেস করলেন-সাহেবে ইলম বা প্রকৃত আলেম কারা? প্রত্যুত্তরে কা’ব (রহ) বললেন-সাহেবে ইলেম বা প্রকৃত আলেম তারা যারা স্ব-স্ব উপার্জিত ইলম অনুযায়ী আমলও করেন। পুনরায় ওমর (রা) জিজ্ঞেস করলেন-কোন বস্তু আলেমদের অন্তর হতে ইলমকে বের করে দেয়? উত্তরে কা’ব (রহ) বললেন-(পার্থিব) লোভ-লালসা (আলেমদের অন্তর হতে) ইলমকে বের করে দেয়।” (দারেমী, মিশকাত) হযরত ইবনে মাসউস (রা) বলেন,যে ব্যক্তি অধিক হাদীস জানে সে ব্যক্তি আলেম নয়। বরং যার মধ্যে আল্লাহর ভীতি অধিক সে ব্যক্তিই প্রকৃত আলেম।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন- এ উম্মাতের আলেমরা দু’শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন সে আলেম যাকে আল্লাহ তায়ালা ইলম দান করেছেন, আর সে তাঁর ইলম জনগণের মধ্যে ব্যয় করেছেন, লোভ-লালসার বশীভূত হয়ে মানুষের নিকট থেকে কোনরূপ বিনিময় গ্রহণ করেননি কিংবা তা বিক্রয়ও করেননি। সেই আলেমের জন্য জল ভাগের মৎস্য, স্থলভাগের সকল প্রাণী এবং মহাশূন্যে উড়ন্ত পক্ষীকুল তার জন্যে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর দ্বিতীয় শ্রেণির আলেম হচ্ছে- যাকে আল্লাহ ইলম দান করেছেন, কিন্তু সে আল্লাহর বান্দাদের সাথে (তার ইলম খরচ করার ব্যাপারে) কৃপণতা করেছে, লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে (ইলম খরচ করে কিংবা ইলম শিক্ষা দিয়ে) বিনিময় গ্রহণ করেছে এবং মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয় করেছে। (তার শাস্তি হলো) কিয়ামত দিবসে তাকে আগুনের লাগাম দেয়া হবে এবং একজন আহ্বানকারী শব্দ করতে (বলতে) থাকবেন যে, “এ ব্যক্তি হচ্ছে ঐ আলেম, যাকে আল্লাহ তায়ালা ইলম দান করেছিলেন কিন্তু সে আল্লাহর বান্দাদের সাথে (ইলমের ব্যাপারে) কৃপণতা করেছে, লোভের তাড়নায় বিনিময় গ্রহণ করেছে এবং মূল্যের বিনিময়ে ইলম বিক্রয় করেছে।” আর এ’ভাবে হাশর ময়দানের কাজ সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত শব্দ করতে থাকবে। (তিবরানী)উদ্ধৃত হাদীস হতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রথমোক্ত আলেমরা হচ্ছেন সঠিক এবং প্রকৃত আলেম। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলেমরা হচ্ছেন মেকী ও লোক দেখানো আলেম। প্রকৃত আলেম চিনতে আমাদেরকে আল্লাহর রাসূলের হাদীস, বুযুর্গানে দ্বীন ও সালফে সালেহীনের মূল্যবান বাণীর আলোকে চিন্তা-গবেষণা করতে হবে।
কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে আলেমদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সূরা জুমার এর ৯ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, “যারা আলেম এবং যারা আলেম না; তারা কী সমান হতে পারে?” কুরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কী সমান হতে পারে?”(সূরা রাদ -১৬)
সাধারণ মানুষের মাঝে আলেমরাই অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য। কোন বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগলে অথবা কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আলেমদের শরণাপন্ন হওয়ার জন্যে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে বলা হয়েছে, “ তোমরা যদি না জানো তবে আলেমদের জিজ্ঞাসা করো।”(সূরা নাহল - ৪৩)
এছাড়া আলেমদের মর্যাদাদানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা সাধারণ মানুষের উপর আলেমদের দায়িত্বশীল বানিয়ে পাঠিয়েছেন। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, “আলেমরা কেন তাদেরকে পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করে না?” (সূরা মায়েদা -৬৩)
আলেমরাই আল্লাহর কল্যাণ ও অনুগ্রহপ্রাপ্ত বলে কুরআনে বলা হয়েছে, “যাকে প্রজ্ঞা (গভীর জ্ঞান) দান করা হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।” (সূরা বাকারা -২৬৯)
শুধু কুরআনুল কারীমেই নয় বরং রাসূলুল্লাহ (সা) অসংখ্য হাদীসেও আলেমদের সম্মান ও মর্যাদার কথা গুরুত্বের সাথে বলা হয়েছে। নবী (সা) বলেছেন, “একজন আলেমের মর্যাদা একজন সাধারণ মানুষের উপর ততটুকুন, যতটুকুন তোমাদের উপর আমি একজন নবীর মর্যাদা।” (সহীহ তিরমিজি) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, “দ্বীন সম্পর্কে শিক্ষিত একজন আলেম শয়তানের মোকাবেলায় একজন অজ্ঞ ব্যক্তির চেয়ে হাজার গুণ অধিক শক্তিশালী।” (সহীহ তিরমিজি ও ইবনু মাজাহ)
আলেমদের মর্যাদাদানের কারণ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা আলেম তারাই তাঁকে অধিক ভয় করে।” (সূরা ফাতির - ২৮)
অতএব যারা হক্কানী আলেম-ওলামা তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দান সকলের অবশ্য কর্তব্য। আলেম-ওলামাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দানের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মহব্বত (অনুসরণ) করলো সে ব্যক্তি আমাকেই মহব্বত (অনুসরণ) করলো।” (মেশকাত, মেরকাত)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ