রোজার শারীরিক উপকার

 

রমজানের রোজার ধর্মীয় গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। ধর্মীয় গুরুত্ব বাদেও শারীরিক ক্ষেত্রে রোজার রয়েছে বেশ প্রভাব ও উপকার। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘজীবন লাভের জন্য খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন বেশি নয়; বরং পরিমিত খাওয়াটাই দীর্ঘজীবন লাভের চাবিকাঠি।বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি ও গবেষণার যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বলেছেন, মানুষের সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে রোজার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।বছরে এক মাস রোজা রাখার ফলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। এটা অনেকটা শিল্পকারখানার মতো। আধুনিক পৃথিবীতে রোজার প্রতি চেতনা সৃষ্টি করার পেছনে ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত একটি বই অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। বিখ্যাত জার্মান চিকিৎসাবিদ Hellmut Luetzner এর
The secret of successful fasting অর্থাৎ ‘উপবাসের গোপন রহস্য’ বইটি। বইটিতে লেখক মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন ও কার্যপ্রণালি বিশ্লেষণ করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে বছরে কতিপয় দিন উপবাসের অভ্যাসের কথা বলেছেন। তার মতে, উপবাস খাবারের উপাদান থেকে সারা বছর শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি দান করে।শরীরের জমে থাকা বিষগুলো রমজানে নির্গত হয়, যা ধ্বংস না হলে শরীরে উচ্চরক্তচাপ, একজিমা, পেটের পীড়া ইত্যাদি রোগ জন্ম নেয়। উপবাসে কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ইসলামের একটি কল্যাণকামী বিধান রোজা নিয়ে ১৯৫৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার মুয়াযযম কর্তৃক (মানব শরীরের ওপর রোজার প্রভাব) গবেষণায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য; যেমন-রোজা মানব শরীরের কোনো ক্ষতি করে না, কেবল সামান্য ওজন কমায়। যারা মনে করে, রোজা রাখলে শূলবেদনা বেড়ে যায়, তাদের এ ধারণা নিতান্তই অবাস্তব। কারণ, উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই বাড়ে। এ অতীব সত্য কথা না জেনে অনেক ডাক্তার শূলবেদনার রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন।
আমরা যে খাবার খাই, পাকস্থলীতে তা পুরোপুরি হজম হতে এবং এর পুষ্টি শোষণ করতে অন্তত আট ঘন্টা সময় নেয় শরীর।যখন এই খাদ্য পুরোপুরি হজম হয়ে যায়, তখন আমাদের শরীর যকৃৎ এবং মাংসপেশীতে সঞ্চিত থাকে যে গ্লুকোজ, সেটা থেকে শক্তি নেয়ার চেষ্টা করে।শরীর যখন এই চর্বি খরচ করতে শুরু করে, তা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
গর্ব করেই বলতে হয়, আধুনিক যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞান রোজার ব্যবহারিক তাৎপর্য উপলব্ধি করে তার সত্যতা প্রমাণ করেছে। ইউরোপের ঘরে ঘরে ইদানীং রোজা রাখার হিড়িক পড়েছে। সবার মুখে শোনা যাচ্ছে-শরীরটাকে ভালো রাখতে চাও তো রোজা রাখ। জার্মানির স্বাস্থ্য ক্লিনিকের ফটকে বড় অক্ষরের টাঙানো আছে-রোজা রাখ স্বাস্থ্যবান হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল