শুধু অক্সিজেনের জন্য আমরা আল্লাহর কাছে কতটা ঋণী




#মো.আবু রায়হান
মুমূর্ষু প্রিয়জনদের বাঁচানোর প্রয়োজনে অনেক মানুষ এখন হন্যে হয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডারের খোঁজ করছে। সিলিন্ডার বাসায় বা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে মহামারি পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। প্রতিদিনই ভাঙছে মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করছে। কোভিড রোগীদের সেবায় অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে হাসপাতাল গুলোতে।অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে দেশটিতে রোগীদের করুণ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।করোনার এই মহামারিতে মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে যে প্রতিদিন তারা মহান আল্লাহর কত অমূল্য নিয়ামত ভোগ করে।ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত ৯৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ সুস্থ হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর তাকে বলা হলো হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে যেখানে ১ দিনের ভেন্টিলেটর বিল ছিল ৫০০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় ৫ লক্ষ টাকার উপরে! বৃদ্ধ বিলের কথা শুনে কাঁদতে লাগলেন, ডাক্তাররা তাকে আস্বস্ত করলেন যেন বিল পরিশোধের জন্য কান্না না করেন ! তিনি বললেন, আমার কান্না বিলের জন্য নয়, আমি সম্পুর্ণ বিল পরিশোধ করবো। আমি বরং কান্না করছি একদিন নিশ্বাস নেয়ার জন্য আমাকে ৫০০০ ইউরো দিতে হচ্ছে অথচ ৯৩ বছর ধরে আমি সৃষ্টিকর্তার দেয়া সতেজ বাতাসে নিশ্বাস নিচ্ছি -যার জন্য আমাকে কখনো পরিশোধ করতে হয়নি! ! তাহলে সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি কতটা ঋণী!
প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ গড়ে ৫৫০ লিটার বা ১৯ কিউবিক ফুট বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করে।যার জন্য কাউকে কোনো দিন কোনো টাকা পয়সা দিতে হয় না। ধনী-গরিব সবাই একইভাবে এই নিয়ামত ভোগ করেন। অথচ করোনা আক্রান্ত হয়ে বা অন্য কোনো কারণে যদি কাউকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়, তাহলে বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ১.৪ কিউবিক মিটারের একটি সিলিন্ডার কিনতে গুনতে হচ্ছে ২২ থেকে ২৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দুই লাখ ৭১ হাজার থেকে তিন লাখ ৩৯ হাজার টাকার অক্সিজেন বিনা মূল্যে গ্রহণ করে।মহান আল্লাহ যখন ইউনুস (আ.)-কে মাছের পেট থেকে মুক্তি দিলেন, তখন তাঁর প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অক্সিজেনের জন্য তরুলতাহীন ভূমিতেই একটি লতাবিশিষ্ট গাছের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কারণ দীর্ঘদিন মাছের পেটে অবস্থান করার কারণে তিনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর এক বড় আকারের মাছ তাঁকে গিলে ফেলল, আর তিনি ছিলেন ধিকৃত। অতঃপর তিনি যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হতেন, তাহলে তাঁকে উত্থানের দিন পর্যন্ত (কিয়ামত পর্যন্ত) থাকতে হতো তার (মাছের) পেটে। অতঃপর ইউনুসকে আমরা নিক্ষেপ করলাম এক তৃণহীন প্রান্তরে এবং তিনি ছিলেন অসুস্থ। আর আমি তাঁর ওপর ইয়াকতিন প্রজাতির এক গাছ উদ্গত করলাম...।’ (সুরা সফফাত, আয়াত ১৪২-১৪৬)
মোটকথা, সেখানে অলৌকিকভাবে এমন একটি লতাবিশিষ্ট বা লতানো গাছ উৎপন্ন করা হয়েছিল, যার পাতাগুলো ইউনুস (আ.)-কে ছায়া ও অক্সিজেন দিচ্ছিল এবং ফলগুলো একই সঙ্গে তাঁর জন্য খাদ্য সরবরাহ করছিল এবং পানিরও জোগান দিচ্ছিল।
কোরআনে ঘোষণা এসেছে—‘আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে নয়নাভিরাম সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উদ্গত করেছি। আর আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টিবর্ষণ করি এবং এর দ্বারা উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি উদ্গত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়।(সুরা কাফ, আয়াত: ৭-৯)গাছবিহীন এক মুহূর্তও অসম্ভব। মানুষের যাপিত জীবনের সব কিছুই গাছকে ঘিরে ও গাছকে নিয়ে। তাই গাছ নিধন হলে গাছ শুধু একাই মরে না। মানুষসহ সব প্রাণসত্তার জন্যই তা ঝুঁকি ও উত্কণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটি পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষ বছরে যে পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে, তা কমপক্ষে ১০ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের বার্ষিক অক্সিজেনের চাহিদা মেটায়।
এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের অসংখ্য নিয়ামতে আবৃত করে রাখেন, যা স্বাভাবিক অবস্থায় তারা কোনো দিন উপলব্ধিই করে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।’ (সুরা নাহল আয়াত ১৮)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল