মুফতি ইব্রাহিমের তুঘলকি বক্তব্য ও বাস্তবতা
হঠাৎ নতুন করে আলোচনায় মুফতি কাজী ইব্রাহিম। নতুন মহাদেশ, করোনা ভাইরাস, ভ্যাকসিন কিংবা রক্তের গ্রুপ- ইতালির মামুনের স্বপ্নসহ নানা বিষয়ে এই ইসলামি বক্তার দেয়া অভিনব তত্ত্ব ও তথ্য নিয়ে বিগত এক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলেছে আলোচনা, সমালোচনা ও হাস্যরস। হাদিসবিদ্যায় গভীর পান্ডিত্যের কারণে কাজী ইব্রাহীমকে বিজ্ঞ হিসেবে গণ্য করেন বিশিষ্ট আলেমরা। কিন্তু তার বিতর্কিত বক্তব্যে বিব্রত হয়েছিলেন তারা। কেউ-কেউ মনে করেন, ব্যক্তিজীবনে নানা সমস্যার কারণে হয়তো অসংলগ্ন কথা বলছেন তিনি। কিন্তু, নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন মুফতি ইব্রাহীম। গত বছর ইতালি প্রবাসী মামুন মারুফ নামের এক বাংলাদেশীর স্বপ্ন তিনি ব্যাখ্যা করেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে মুফতি কাজী ইব্রাহিম মামুনের কাছে যা শুনেছেন সেই স্বপ্নটি কাজী ইব্রাহিম সাহেবের কাছে গ্রহণ যোগ্য বলে মনে হয়েছিল।সেই সময় এই স্বপ্ন অনেক হেসে উড়ে দিলেও স্বপ্নের কিছু দিক বর্তমানে মিলে যাওয়ায় অনেকে তার বক্তব্য গুরুত্ব দিতে শুরু করছেন। স্বপ্নের অংশ বিশেষ।
তোমরা কতদিন অবস্থান করবে ?
করোনা উত্তর দিলো : আমরা আসছি আবার চলে যাবো এমন না আমরা এখান থেকে নর্থ ও সাউথ আমেরিকা যাবো সেখানে মেচাকার করবো , তারপর ইরান যাবো সেখানে ধ্বংস করবো কারণ তারা কুরআনকে বিকৃত করছে , তারপর আমরা আরব দেশগুলোকে ধরবো কারণ সেখানে মুনাফেকে ভরে গেছে । এভাবে আমরা পৃথিবীর সাত ভাগের দেড় ভাগ মানুষকে মেরে ফেলবো প্রায় ১.৫ কুটি মানুষ। যার বেশির ভাগ হবে বৌদ্ধ ।
প্রশ্ন : তোমাদের আক্রমণে কি মুসলমানেরা মারা যাবে ?
করোনা উত্তর দিলো : না আমরা মুসলমানদের ভেতর যারা পাঁচ বার নামাজ আদায় করে তাদের ধরবো না কারণ তারা ওযু করে তাদের চেহারা থেকে, চোখ থেকে, হাতের তালু থেকে পায়ের তালু থেকে একটা নূর জ্বলবে আমরা তাদের দেখে চিনে যাবো যে তারা আল্লাহ ওয়ালা, তাই আল্লাহ ওয়ালাদের কোনো ভয় নাই ।
প্রশ্ন : মামুন মারুফ যেহেতু বাংলাদেশী তাই তিনি বাংলাদেশ নিয়ে প্ৰশ্ন করে বললেন, বাংলাদেশ নিয়ে তোমাদের কি পরিকল্পনা ?
করোনা উত্তর দিলো : তোমাদের বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই কারণ পৃথিবীর কোনো দেশে ইসলামের এতো আলোচনা নেই যত আলোচনা তোমাদের দেশে হয় ।তবে কিছু ইসলাম বিরোধী মুনাফিকদের শেষ করে দিবো ।
এর পরে তোমাদের পরিকল্পনা কি ?
করোনা উত্তর দিলো : আমরা আরো অফগ্রেড হয়ে আরো হামলা করবো ভারত হয়ে নিচ থেকে উপরে দিকে, তারপর পাকিস্তানের ইসলাম বিদ্ধেষী মুনাফিকদের ধরবো , তবে আমরা আফগানিস্তাকে ধরবোনা কারণ তারা ইমাম মাহাদির সৈন্য । মুফতি ইব্রাহিম বলেন, প্রিয় ভায়েরা এভাবে করোনা ভাইরাস স্বপ্ন যোগে এসে এইভাবে করে আরো কিছু কথা বলে গেছে, যেমন ভারত মুসলমানদের দখলে চলে আসবে, আর ইহুদিদের আমরা মারবোনা আমাদের অনুমতি নাই, কারণ তাদের মারবে ঈসা (আ) তবে বায়তুল মোকাদ্দাস এর আশ- পাশ্বে যারা ইহুদি আছে তাদের আমরা শেষ করবো বায়তুল মুকাদ্দাসটা মুসলমানদের হাতে তুলে দিবো ইনশা আল্লাহ।
#স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতা
এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৬৭৩ জন করোনায় মারা গেছেন।
এক
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। তারপর ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং ভারতে।জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, এই তিন দেশ মিলেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষের।
দুই
ইরানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ হাজার ৫৫২ তে দাঁড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইরান।করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ রুখতে রমজানের আগে ইরানের প্রায় সকল অঞ্চলে ১০ দিনের জন্য লকডাউন জারি করা হয়। দেশটির ৩১টি প্রদেশের মধ্যে ২৩টিতে এই লকডাউন আরোপ করা হয়েছে।লকডাউনে ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, থিয়েটার ও খেলাধুলার অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে এবং পবিত্র রমজান মাসে লোকজনের জড়ো হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, আমরা আজ চতুর্থ ঢেউয়ে প্রবেশ করেছি।’
তিন
আরব দেশগুলোর মধ্যে শুধু এখানে সৌদি আরবের পরিসংখ্যান দেয়া হলো। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের ৮ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ৩৪৬ জন।
চার
বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্নে কি ছিল তা তো বুঝতেই পারছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১ হাজার ২২৮ জনে।
পাঁচ
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও দুই হাজার ৮১২ জন। এটিই এখন পর্যন্ত দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। করোনায় এ পর্যন্ত ভারতে মারা গেছেন এক লাখ ৯৫ হাজার ১২৩ জন। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এটিই এখন এখন পর্যন্ত দেশটিতে ও বিশ্বে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। ভারতে মোট এক কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ১৬৩ জন শনাক্ত হয়েছেন। সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে ভারতের অবস্থান বর্তমানে দ্বিতীয়তে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২ লাখ ১৯ হাজার ২৭২ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন এক কোটি ৪৩ লাখ ৪ হাজার ৩৮২ জন।
ছয়
আন্তর্জাতিক জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুসারে, পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৩৯। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৮১৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৭ হাজার ৩২৯ জনের।
সাত
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুসারে, আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৩৭০। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫২ হাজার ৭৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৬১১ জনের। জো বাইডেন আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এর অর্থ আবারো তালেবানেরা ক্ষমতায় আসবে।
আট
ইসরায়েলে করোনাভাইরাসে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে। দেশটিতে গত ১০ মাসে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, গত বছরের জুনের শেষে করোনায় দৈনিক মৃত্যু সর্বশেষ শূন্যে নেমে এসেছিল ইসরায়েলে। মহামারির প্রথম ধাক্কা সামাল দিতে আরোপিত লকডাউনের পর এমনটি ঘটে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে ৮ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ৩৪৬ জন।
ইসরায়েলের শীর্ষ পর্যায়ের রাব্বি বা ধর্মযাজকরা এ মুহুর্তে দেশ ছেড়ে অন্যকোথাও যেতে চাচ্ছেন না, কারণ তাতে তারা তাদের প্রতিশ্রুত মসীহর (দাজ্জাল) আগমনকে স্বাগত জানাতে পারবেন না। ইসরায়েলি রেডিওতে দেয়া এক সাক্ষাতকারে গতবছর এমনটিই জানিয়েছে দেশটির একজন রাব্বি। তিনি জানান, মসীহ খুব শীঘ্রই আত্নপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন।ইহুদি জাতির কাছে এ মসীহ হচ্ছেন দাজ্জাল। ইসলাম ধর্মমতে কিয়ামতের আগে পৃথিবীতে দু'জন মসীহ আসবেন। একজন ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) বা ঈসা মসীহ, যিনি হবেন সত্যের ধারক। তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং কিয়ামতের আগে আবার আসবেন। আর অন্যজন মসীহ দাজ্জাল, যে হবে মিথ্যুক এবং সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী।অন্যদিকে ইহুদিরা মনে করে, ঈসা (আ.) আর আসার সুযোগ নেই। তাদের হিব্রু বাইবেলে আসা প্রতিশ্রুত মসীহর আগমণ এখনো ঘটেনি। সে আসবে এবং বিশ্বের সব ইহুদিদের এক স্থানে এনে সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। ফলে ইহুদিরা তাদের সেই মসীহর আগমনের জন্য পৃথিবীকে প্রস্তুত করছে।মুহাম্মদ (স.) একইভাবে বলে গেছেন মিথ্যুক দাজ্জাল হবে ইহুদিদের নেতা এবং তাদের নিয়েই সে সারাবিশ্বে সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে। যাকে হত্যা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন ঈসা (আ.)।ঈসা (আ) ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আঃ)কে দেখে সে পানিতে লবণ গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ ‘‘তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাই পাবেনা।’’ ঈসা (আঃ) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপর মুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থান পাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ বলে পরিচিত। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী বলেন, ‘‘ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবেনা যতক্ষণ না মুসলমানেরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে। অতঃপর মুসলমানগণ ইহুদীরকে হত্যা করবে। ইহুদীরা গাছ ও পাথরের আড়ালে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে আশ্রয় দিবেনা। গাছ বা পাথর বলবে, হে মুসলমান! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে ‘গারকাদ’ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলে পরিচিত’’। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় কিতাবুল ফিতান) এবছর ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পর পবিত্র রমজান মাসে ইবাদতের জন্য আল আকসা মসজিদের সামনের নিরাপত্তা বেষ্টনী সরিয়ে নিয়েছে দখলদার ইসরাইল। তবে শেষ পর্যন্ত পবিত্র রমজানে আল আকসা মসজিদে ইবাদতের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত সাধারণ ফিলিস্তিনিরা।এর আগে ওই মসজিদ খুলে দেওয়ার দাবিতে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে শতাধিক মানুষকে আহত করে ইসরাইলি বাহিনী। আটক করা হয় বহু মানুষকে।পবিত্র রমজানে আল আকসা মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য বেশ কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। রোববার (২৫ এপ্রিল) এ আন্দোলন আরও তীব্র হয়।বরাবরের মতো নির্বিচারে হামলা এবং গ্রেফতারের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। হামলায় আহত হন শতাধিক মানুষ। গ্রেফতার করা হয় ৫০ জনের বেশি আন্দোলনকারীকে।এরপরও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখলে নমনীয় হয় ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী। সরিয়ে নেয় আল আকসা মসজিদের সামনের বেষ্টনী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন