সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারীর প্রতি অপবাদ

 

অপরের নামে অপবাদ দেওয়া সমাজভুক্ত মানুষের সুসম্পর্ক নষ্ট করে। সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অনৈক্য সৃষ্টির মদদ জোগায় এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রবণতা। জাহেলি যুগের আরব অধিবাসীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অপবাদ সৃষ্টি এবং সংঘাতে মদদ জুগিয়ে আনন্দ পেত।আল্লাহ তায়ালা বলেন ,‘‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছো; অথচ তা আল্লাহ্ তায়ালার নিকট খুবই গুরুতর অপরাধ’’। (সুরা নূর আায়তা ১৫)
নারীর প্রতি অপবাদের যে কোনো প্রবণতার বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে। কেউ যাতে তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ রটনায় সাহসী না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করতে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, 'যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ মুমিন নারীদের বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহলোক ও পরলোকে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি।'(সূরা আন নূর আয়াত -২৩)
সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা সাতটি গুরুতর ক্ষতিকর কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাক। উলি্লখিত সাতটি গুনাহর অন্যতম হচ্ছে সতী-সাধ্বী ও নিরীহ মুমিন নারীর ওপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করা।'
যারা সতী-সাধ্বী কোন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারেনি তাদের প্রত্যেককে আশিটি করে বেত্রাঘাত করা হবে, কারোর ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং তখন থেকে তাদের পরিচয় হবে ফাসিক।এরশাদ হয়েছে, ‘‘যারা সতী-সাধ্বী কোন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণিত করতে পারেনি তা হলে তোমরা ওদেরকে আশিটি করে বেত্রাঘাত করো, কারোর ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’’। (সুরা নূর আয়াত ৪-৫)
যারা নিজ স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ তারা ছাড়া এ ব্যাপারে অন্য কোন সাক্ষী নেই তা হলে তাদের প্রত্যেকেই চার চার বার এ কথা সাক্ষ্য দিবে যে, সে নিশ্চিয়ই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পতিত হোক যদি সে এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। মহিলাটিও এ ব্যাপারে চার চার বার সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয়ই তার স্বামী মিথ্যাবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, নিশ্চয়ই তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার গযব পতিত হোক যদি তার স্বামী এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাকে।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: হিলাল বিন্ উমাইয়াহ্ (রা) শারীক বিন্ সা’হ্মা’ (রা) কে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করেছে বলে অপবাদ দিলে রাসূল (সা) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন-‘‘সাক্ষী-প্রমাণ দিবে। নতুবা তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হবে’’। (বুখারী ২৬৭১)
সর্বমোট চারটি কারণের যে কোন একটি কারণ পাওয়া গেলে অপবাদকারীকে আর বেত্রাঘাত করতে হয় না। যা নিম্নরূপ:
১. যাকে অপবাদ দেয়া হলো সে অপবাদকারীকে ক্ষমা করে দিলে।
২. যাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে সে অপবাদকারীর অপবাদকে স্বীকার করলে।
৩. অপবাদকারী অপবাদের সত্যতার ব্যাপারে কোন প্রমাণ দাঁড় করালে।
৪. পুরুষ নিজ স্ত্রীকে অপবাদ দিয়ে নিজকে লা’নত করতে রাজি হলে।
আল্লাহ বলেন, ‘যারা চরিত্রহীনতার মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তা তোমাদেরই একটি দল। (কিন্তু এই অপবাদে যাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে) তারা যেন নিজেদের জন্যে বিষয়টিকে ক্ষতিকর মনে না করে। বরং এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। (অপবাদ রটনাকারী) প্রত্যেককেই এ পাপের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এদের মধ্যে যে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন আজাব।’ (সূরা নূর আয়াত ১১)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...