মানুষকে মূল্যায়ন
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব সুতরাং তারা মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত।আল্লাহ তায়ালা বলেন, " অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত। "( সুরা আরাফ) মর্যাদা ও সম্মানের সঠিক মাপকাঠি হলো ব্যক্তির উচ্চমানের নৈতিক গুণাবলী এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি তার কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাবান; যে অধিক মুত্তাকি বা আল্লাহ ভীরু।’ (সুরা হুজরাত আয়াত ১৩) আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি, তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছি স্থলে ও জলে, তাদেরকে দিয়েছি উত্তম জীবিকা এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টিজগতের অনেকের ওপর।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত -৭০)
বিশ্ব মানব একটি পরিবার বিশেষ। জাতি, উপজাতি, বর্ণ, বংশ ইত্যাদির বিভক্তি কেবল পরস্পরকে জানার জন্য, যাতে পরস্পরের চারিত্রিক ও মানসিক গুণাবলী দ্বারা একে অপরের উপকার সাধিত হতে পারে।
আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মানব জাতি! আমি নর ও নারী থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি। আর আমি বিভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছি যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পার’ (সুরা আল হুজুরাত, আয়াত- ১৩)। এক জোড়া পুরুষ-মহিলা থেকে সৃষ্ট মানবমন্ডলীর সদস্য হিসেবে সকলেই আল্লাহতায়ালার সমক্ষে সমমর্যাদার অধিকারী। চামড়ার রং, ধন-সম্পদের পরিমাণ, সামাজিক মর্যাদা, বংশ ইত্যাদির দ্বারা মানুষের মর্যাদার মূল্যায়ন হতে পারে না। সত্যিকারভাবে মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে সম্মান প্রদর্শনের ওপর। সুন্দর চেহারা উত্তম পরিচ্ছদ পরিধানকারী অধিক মর্যাদা দেয়া বা সমাদর করা এ বিধান ইসলামের কোথাও নেই।মহানবীর (সা.) এর ওফাতের কয়েকদিন আগে বিদায় হজের ভাষণে উপস্থিতিদের সম্বোধন করে রাসুল (সা.) উদাত্ত কন্ঠে বলেছিলেন, ‘হে মানবমন্ডলী! তোমাদের আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তোমাদের আদি পিতাও এক। একজন আরব একজন অনারব থেকে কোনো মতেই শ্রেষ্ঠ নয়। তেমনি একজন আরবের ওপরে একজন অনারবেরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন সাদা চামড়ার মানুষ একজন কালো চামড়ার মানুষের চাইতে শ্রেষ্ঠ নয়, কালোও সাদার চাইতে শ্রেষ্ঠ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের মূল্যায়ন করতে বিচার্য বিষয় হবে, কে আল্লাহ ও বান্দার হক কতদূর আদায় করলো। এর দ্বারা আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী সেই ব্যক্তি, যিনি সর্বাপেক্ষা বেশি ধর্মপরায়ণ’ (বায়হাকি)।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষকে সম্মান দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁকে বলা হলো, লাশটি একজন ইহুদির। রাসুল (সা.) বললেন, সে কি মানুষ নয়?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস - ৯৬১)মৌলিক অধিকার ও সম্মানে সব মানুষ সমান হলেও জ্ঞান, আল্লাহভীতি ও মানবিকতার দ্বারা মানুষ অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি কখনো সমান হতে পারে? (সুরা জুমার, আয়াত - ৯)রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী, সেই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়।’ (আততারগিব, হাদিস - ২৬২৩)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন