হারেম / উপপত্নী / রক্ষিতা
হারেম, হারিম, হেরেম একটি আরবি শব্দ যার অর্থ অন্তঃপুর, অন্দরমহল,অলঙ্ঘনীয় সীমারেখা, জেনানামহল, নিষিদ্ধ বা পবিত্র স্থান। হারেম হচ্ছে নারীদের জন্য নির্ধারিত পবিত্র স্থান যেখানে রাজা বা রাজপুত্র ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। Properly refers to domestic spaces that are reserved for the women of the house in a Muslim family.হারেমে অবস্থান করতেন রাজা, সুলতান বা সম্রাটের স্ত্রীরা, উপপত্নীরা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক পুত্র, অবিবাহিত কন্যা, মহিলা আত্মীয় এবং দাসীরা। এছাড়া হারেমে রাজা বা রাজপুত্রদের বিনোদনের জন্য থাকত শত শত, হাজার হাজার যুবতী নারীরা। যে রাজা যত বেশি অভিজাত, ক্ষমতাশালী ও অর্থবিত্তের অধিকারী তার হারেমে নারীর সংখ্যাও তত বেশি থাকত।হারেম প্রথা সব আমলেই ছিল এমনকি প্রাচীন আমলেও। তবে মুঘল আমলে ও অটোমান আমলে তা বিকশিত হয়। মুঘল হারেমে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার নারীর অবস্থান ছিল। সুলতানি আমলেও এর সংখ্যা কম ছিল না। কথিত আছে, বাংলার সুলতান সিকান্দার শাহের হারেমে ১০ হাজার নারী ছিল। রাজা বা সুলতানের মা ছিলেন হারেমের প্রধান। তাকে বলা হতো ভালিদা সুলতান (সুলতানের মা)। তারপরে ছিল বা-খাদিম এফেন্দি। তিনি হলেন সুলতান বা রাজার প্রথম সন্তানের জননী।
উপপত্নী গ্রহণের প্রচলন চীন থেকেই শুরু হয়েছিল। তবে তা একচেটিয়া নয়। উপপত্নী গ্রহণের অনুশীলন হাজারো বছর পূর্বে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া এবং ব্যাবিলোনিয়ার সভ্যতায়ও দেখা যায়। তখনকার সময় সমাজের অনেক অভিজাত পরিবারের কন্যারাও উপপত্নী হতেন। যাদের মধ্যে অনেকে প্রথমে দাসী হিসেবে ছিলেন। পরবর্তীতে অনেকে আবার স্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। উপপত্নীদের জীবন ছিল একপ্রকার বন্দি। তাদের অনেক কিছুতেই ছিল বাধ্যবাধকতা। প্রাসাদের মনোরম পরিবেশে এক প্রকার বন্দি জীবনই কাটাত এই নারীরা। অনেক নারীর মধ্যে একরাত সম্রাটের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পাওয়া যেন ছিল তাদের জন্য ভাগ্যের বিষয়। প্রাসাদের বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। প্রাসাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না তাদের। একসময় নিষেধাজ্ঞা এতদূর গিয়েছিল যে কোনো উপপত্নী অসুস্থ হলেও কোনো চিকিৎসকের সেখানে প্রবেশের অনুমতি মিলত না।
রক্ষিতা মানে কি? অভিধানে আছে মেয়ে মানুষ, রমণী, অঙ্গনা, মেয়েলোক, নারীকুল, প্রণয়িনী ইত্যাদি। পুরুষ রক্ষক হয়ে যখন কোন মহিলাকে নিজের কুক্ষিগত করে রাখে ভোগ করে ইচ্ছেমত বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করে তখন সেই মহিলাকে রক্ষিতা বলে। রক্ষিতা শব্দের অর্থ হল যে মহিলাকে বিয়ে করা ছাড়াই স্ত্রীর মতো করে রাখা হয়েছে। চলুন নিজেকে রক্ষিতা দাবি করা একজন নারীর জীবনের গল্প শোনে আসি। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনার পরই উঠে আসে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের বান্ধবী ও সাবেক মহিলা কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলার নামটি। সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে নীলা ও নূর হোসেনের নানা প্রেম কাহিনী। তবে নীলা বরাবরই দাবি করে আসছেন, তার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নূর হোসেন তাকে বিয়ে করেছিলেন। একপর্যায়ে নূরকে ভালোও বেসেছিলেন নীলা।জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা বলেন, আমি কাউন্সিলর হওয়ার পরই নূর হোসেন আমাকে রক্ষিতা বানাতে চেয়েছিলেন। আমি নূরের চোখে সুন্দরী, এটাই আমার অপরাধ। এজন্য আমার জীবন এখন অভিশপ্ত। নূর হোসেনের ‘রক্ষিতা’ হইনি বলেই সব হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। সাজানো-গোছানো সংসার ভেঙেছি, প্রাণপ্রিয় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছি। এখন আমি নিরূপায়।কিন্তু বিশ্বাস করুন, এলাকার প্রায় সবাই আমাকে নূরের স্ত্রী হিসেবে জানলেও আমার সঙ্গে তার কোনো অধিকারের সম্পর্ক নেই। স্বামী-সন্তানের জীবন রক্ষায় নিজের সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে অভিনয় করেছি দিনের পর দিন। কারণ আমি ছাড়াও তার আরও পাঁচজন ‘রক্ষিতা’ ছিল। যদিও তার ভাষায় স্ত্রী। সেখানে আমার কোনো গুরুত্ব ছিল না। এজন্য আমাকে তার কোনো সম্পত্তি কিংবা অধিকারের সঙ্গে সংযুক্ত করেনি নূর হোসেন।
ভারতের ডেরা সচ্চা সওদার গুরু মহারাজ গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের রক্ষিতাদের কাহিনী নিশ্চয়ই শোনে থাকবেন। কথিত ধর্মগুরু রাম রহিম একেবারে বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। শত শত সেবাদাসী ছিল তার। যাদের সঙ্গে অবাধে যৌনাচার করতেন এই ধর্মগুরু। জানা যায়, প্রায় হাজার একর জমির ওপর তৈরি আস্তানার মাঝখানে আয়নায় মোড়া প্রাসাদে চলত তার সব কুকর্ম। একেক সময়ে সেবাদাসীদের ডেকে নিতেন নিজের খাস কামড়ায়। তারপর বাধ্য করতেন যৌন ক্রিয়ায়। পাশাপাশি টেলিভিশনে চলত অশ্লীল ভিডিও। কেউ এ কাজে অস্বীকৃতি জানালে নিজেকে ঈশ্বর দাবি করে নানা ভয় ভীতি দেখাতেন। গত বছর থাইল্যান্ডের বিতর্কিত রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন জার্মানিতে এক বিলাসবহুল হোটেলে করোনার কারণে সেল্ফ আইসোলেসনে' অবস্থানে গেলেন। ওই হোটেলে তার গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারীরাও ছিল। সঙ্গে ছিল ২০ জন হারেম বা রক্ষিতা। এ কান্ডে থাইল্যান্ডের জনগণ বেজায় ক্ষিপ্ত ছিল। থাইল্যান্ডে রাজার বিরুদ্ধে কেউ অপমান ও সমালোচনা করলে তাকে ১৫ বছরের জেল শাস্তি দেয়ার বিধান আছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন