সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হারেম / উপপত্নী / রক্ষিতা

 





মো. আবু রায়হান
হারেম, হারিম, হেরেম একটি আরবি শব্দ যার অর্থ অন্তঃপুর, অন্দরমহল,অলঙ্ঘনীয় সীমারেখা, জেনানামহল, নিষিদ্ধ বা পবিত্র স্থান। হারেম হচ্ছে নারীদের জন্য নির্ধারিত পবিত্র স্থান যেখানে রাজা বা রাজপুত্র ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। Properly refers to domestic spaces that are reserved for the women of the house in a Muslim family.হারেমে অবস্থান করতেন রাজা, সুলতান বা সম্রাটের স্ত্রীরা, উপপত্নীরা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক পুত্র, অবিবাহিত কন্যা, মহিলা আত্মীয় এবং দাসীরা। এছাড়া হারেমে রাজা বা রাজপুত্রদের বিনোদনের জন্য থাকত শত শত, হাজার হাজার যুবতী নারীরা। যে রাজা যত বেশি অভিজাত, ক্ষমতাশালী ও অর্থবিত্তের অধিকারী তার হারেমে নারীর সংখ্যাও তত বেশি থাকত।হারেম প্রথা সব আমলেই ছিল এমনকি প্রাচীন আমলেও। তবে মুঘল আমলে ও অটোমান আমলে তা বিকশিত হয়। মুঘল হারেমে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার নারীর অবস্থান ছিল। সুলতানি আমলেও এর সংখ্যা কম ছিল না। কথিত আছে, বাংলার সুলতান সিকান্দার শাহের হারেমে ১০ হাজার নারী ছিল। রাজা বা সুলতানের মা ছিলেন হারেমের প্রধান। তাকে বলা হতো ভালিদা সুলতান (সুলতানের মা)। তারপরে ছিল বা-খাদিম এফেন্দি। তিনি হলেন সুলতান বা রাজার প্রথম সন্তানের জননী।
উপপত্নী গ্রহণের প্রচলন চীন থেকেই শুরু হয়েছিল। তবে তা একচেটিয়া নয়। উপপত্নী গ্রহণের অনুশীলন হাজারো বছর পূর্বে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া এবং ব্যাবিলোনিয়ার সভ্যতায়ও দেখা যায়। তখনকার সময় সমাজের অনেক অভিজাত পরিবারের কন্যারাও উপপত্নী হতেন। যাদের মধ্যে অনেকে প্রথমে দাসী হিসেবে ছিলেন। পরবর্তীতে অনেকে আবার স্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। উপপত্নীদের জীবন ছিল একপ্রকার বন্দি। তাদের অনেক কিছুতেই ছিল বাধ্যবাধকতা। প্রাসাদের মনোরম পরিবেশে এক প্রকার বন্দি জীবনই কাটাত এই নারীরা। অনেক নারীর মধ্যে একরাত সম্রাটের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পাওয়া যেন ছিল তাদের জন্য ভাগ্যের বিষয়। প্রাসাদের বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। প্রাসাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না তাদের। একসময় নিষেধাজ্ঞা এতদূর গিয়েছিল যে কোনো উপপত্নী অসুস্থ হলেও কোনো চিকিৎসকের সেখানে প্রবেশের অনুমতি মিলত না।
রক্ষিতা মানে কি? অভিধানে আছে মেয়ে মানুষ, রমণী, অঙ্গনা, মেয়েলোক, নারীকুল, প্রণয়িনী ইত্যাদি। পুরুষ রক্ষক হয়ে যখন কোন মহিলাকে নিজের কুক্ষিগত করে রাখে ভোগ করে ইচ্ছেমত বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করে তখন সেই মহিলাকে রক্ষিতা বলে। রক্ষিতা শব্দের অর্থ হল যে মহিলাকে বিয়ে করা ছাড়াই স্ত্রীর মতো করে রাখা হয়েছে। চলুন নিজেকে রক্ষিতা দাবি করা একজন নারীর জীবনের গল্প শোনে আসি। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনার পরই উঠে আসে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের বান্ধবী ও সাবেক মহিলা কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলার নামটি। সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে নীলা ও নূর হোসেনের নানা প্রেম কাহিনী। তবে নীলা বরাবরই দাবি করে আসছেন, তার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নূর হোসেন তাকে বিয়ে করেছিলেন। একপর্যায়ে নূরকে ভালোও বেসেছিলেন নীলা।জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা বলেন, আমি কাউন্সিলর হওয়ার পরই নূর হোসেন আমাকে রক্ষিতা বানাতে চেয়েছিলেন। আমি নূরের চোখে সুন্দরী, এটাই আমার অপরাধ। এজন্য আমার জীবন এখন অভিশপ্ত। নূর হোসেনের ‘রক্ষিতা’ হইনি বলেই সব হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। সাজানো-গোছানো সংসার ভেঙেছি, প্রাণপ্রিয় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছি। এখন আমি নিরূপায়।কিন্তু বিশ্বাস করুন, এলাকার প্রায় সবাই আমাকে নূরের স্ত্রী হিসেবে জানলেও আমার সঙ্গে তার কোনো অধিকারের সম্পর্ক নেই। স্বামী-সন্তানের জীবন রক্ষায় নিজের সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে অভিনয় করেছি দিনের পর দিন। কারণ আমি ছাড়াও তার আরও পাঁচজন ‘রক্ষিতা’ ছিল। যদিও তার ভাষায় স্ত্রী। সেখানে আমার কোনো গুরুত্ব ছিল না। এজন্য আমাকে তার কোনো সম্পত্তি কিংবা অধিকারের সঙ্গে সংযুক্ত করেনি নূর হোসেন।
ভারতের ডেরা সচ্চা সওদার গুরু ‌মহারাজ গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের রক্ষিতাদের কাহিনী নিশ্চয়ই শোনে থাকবেন। কথিত ধর্মগুরু রাম রহিম একেবারে বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। শত শত সেবাদাসী ছিল তার। যাদের সঙ্গে অবাধে যৌনাচার করতেন এই ধর্মগুরু। জানা যায়, প্রায় হাজার একর জমির ওপর তৈরি আস্তানার মাঝখানে আয়নায় মোড়া প্রাসাদে চলত তার সব কুকর্ম। একেক সময়ে সেবাদাসীদের ডেকে নিতেন নিজের খাস কামড়ায়। তারপর বাধ্য করতেন যৌন ক্রিয়ায়। পাশাপাশি টেলিভিশনে চলত অশ্লীল ভিডিও। কেউ এ কাজে অস্বীকৃতি জানালে নিজেকে ঈশ্বর দাবি করে নানা ভয় ভীতি দেখাতেন। গত বছর থাইল্যান্ডের বিতর্কিত রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন জার্মানিতে এক বিলাসবহুল হোটেলে করোনার কারণে সেল্ফ আইসোলেসনে' অবস্থানে গেলেন। ওই হোটেলে তার গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারীরাও ছিল। সঙ্গে ছিল ২০ জন হারেম বা রক্ষিতা। এ কান্ডে থাইল্যান্ডের জনগণ বেজায় ক্ষিপ্ত ছিল। থাইল্যান্ডে রাজার বিরুদ্ধে কেউ অপমান ও সমালোচনা করলে তাকে ১৫ বছরের জেল শাস্তি দেয়ার বিধান আছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...