শহিদ আরবি শব্দ। শহিদ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে শাহাদত শব্দ থেকে। ‘শাহাদত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে-
সনদ, সাক্ষ্য, প্রত্যয়নপত্র,
সার্টিফিকেট ইত্যাদি। শহিদ শব্দটির ভাবার্থ হলো- ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের
উদ্দেশ্যে জীবন কোরবানীর মাধ্যমে ঈমানের সত্যতার সাক্ষ্য, সনদ, সার্টিফিকেট বা প্রত্যয়ন প্রদান।’ আরবি ডিকশনারীতে ‘মু’জাম আল-অসীত’-এ
‘শহীদ’ শব্দের অর্থ দেয়া আছে: ‘যিনি আল্লাহর পথে নিহত হওয়ার জন্য নিজকে পেশ
করলেন।’ মানব জাতিকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান
আল্লাহর ইবাদত করা,
সেই ‘ইবাদত’ প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একমাত্র মহান
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে মৃত্যুবরণ করলো, ইসলামী
পরিভাষায় তাকে ‘শহীদ’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। শহীদি মৃত্যু দুই প্রকার। এক প্রকার হলো প্রকৃত শহীদ। তা হলো,
দ্বিন কায়েমের জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দেওয়া। এ
ধরনের শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত
বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু
তোমরা তা বুঝ না।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৫৪) আরেক প্রকারের শহীদ হলো, হুকুমি। অর্থাৎ তারা শহীদের সাওয়াবপ্রাপ্ত হবেন। তারা হলেন, প্লেগ, মহামারি ইত্যাদিতে মৃত্যুবরণকারী। তারা
শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।
আয়াত - আবু
হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন, শহীদ পাঁচ প্রকার। যেমন—১. প্লেগ বা
মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী, ২. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী,
৩. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ৪. কুপে
পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ (বুখারি ও মুসলিম)জাবের (রা.) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া ছাড়া শহীদ
সাতজন। যেমন—১. প্লেগে মৃত্যুবরণকারী, ২. পানিতে ডুবে
মৃত্যুবরণকারী, ৩. আঘাতে মৃত্যুবরণকারী, ৪. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, ৫. আগুনে পুড়ে
মৃত্যুবরণকারী, ৬. কূপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৭. সন্তান
প্রসব যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণকারী নারী। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত,
মহানবী (সা.) বলেন, প্রবাসে
মৃত্যুবরণকারী শহীদ। (ইবনে মাজাহ)
শহীদ
হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো থাকা দরকার এগুলো ছাড়াও কিছু মানুষ শহীদের সমমর্যাদা পাবে।
আর তারা হলেন-
(১) যারা
নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমজান মাসের সবগুলো
সাওম সহীহ নিয়তের সঙ্গে পালন করে ও রমজান মাসের তারাবীহ সালাত নিয়মিত আদায় করে এবং
জাকাত দেয়।
(২) রাসূল
(সা.) বলেছেন, ‘সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীগণ হাশরের ময়দানে নবীগণ,
সিদ্দীকগন ও শহীদ্গনের সঙ্গে থাকবে।’
(৩) যে
ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর সুন্নাতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবে, সে শহীদের মর্যাদা পাবে।
(৪) আসমা
বিনতে ইয়াযিদ ইবনে আস সাকান (রা.) নবী করিম (সা.) এর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা পর্দানশীল নারীরা ঘরে বসে থাকি। পক্ষান্তরে পুরুষরা জুমার নামাজ,
জানাযায় অংশগ্রহণ, জিহাদে যাওয়া,
ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যখন তারা
জিহাদে যায়, আমরা তাদের সম্পদ হেফাযত, সন্তানদের লালন পালন করি; তাহলে আমরা কি তাদের
সওয়াবে ভাগ পাব কী?
রাসূল (সা) তার
সাহাবাদের বললেন, ‘যাও হে আসমা, তুমি
তোমার পিছনে রেখে আসা মহিলাদের বলে দাও, স্বামীর জন্য
উত্তম স্ত্রী হওয়া, তার সন্তুষ্টি খুজে নেয়া, তার সম্মতি অনুসরণ করা, যেগুলো উল্লেখ করেছ
তার সমান।’ (মুসলিম)
(৫) যে
ব্যক্তি তার ধনমালের হেফাজতের কারণে নিহত হয়েছে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। আবার যে
ব্যক্তি নিজের জীবনের হেফাজতের কারণে নিহত হয়েছে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। যে
ব্যক্তি দ্বীনের হেফাজতকালে নিহত হয়েছে ও নিজের স্ত্রী-সন্তানদের হেফাজতকালে নিহত
হয়েছে সেও শহীদ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন